thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ 24, ১৪ চৈত্র ১৪৩০,  ১৮ রমজান 1445

ফ্রিল্যান্সিং-আউটসোর্সিং

ভাগ্য পরিবর্তন করে স্বাবলম্বী আসিফ

২০১৭ মার্চ ১৬ ২৩:১৮:৫৮
ভাগ্য পরিবর্তন করে স্বাবলম্বী আসিফ

মো. শামীম রিজভী, দ্য রিপোর্ট : ফ্রিল্যান্সিং অথবা আউটসোর্সিং বর্তমানে অনলাইনে টাকা উপার্জন করার অনেকগুলো মাধ্যমের মধ্যে একটি জনপ্রিয় এবং সত্যিকার সহজ মাধ্যম। দক্ষতা দিয়ে অনলাইনে ঘরে বসেই অন্যান্যদের কাজের অথবা সমস্যার সমাধান করে দিয়ে আয় করা যাবে ভালো পরিমাণ টাকা।

ফ্রিল্যান্সিং অথবা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে অনেক তরুণই এখন স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। তাদের মাধ্যমে অনুপ্রাণিতও হচ্ছেন অনেকে। এর ফলে ফ্রিল্যান্সিং অথবা আউটসোর্সিংয়ের ওপর মানুষের আগ্রহ বেড়েই চলেছে। এভাবে ফ্রিল্যান্সিং অথবা আউটসোর্সিংয়ের দিকে তরুণরা উৎসাহিত হতে থাকলে বেকার সমস্যাও অনেকাংশে কমে যাবে। তবে এ দুটোর মধ্যে হালকা পার্থক্য রয়েছে। ফ্রিল্যান্স বা মুক্ত পেশা, ফ্রিল্যান্সার যিনি মুক্ত পেশাজীবী। এটা একজন মানুষের কর্মকাণ্ড যার নির্ধারিত কোনো নিয়োগকর্তা থাকেনা। একজন মুক্ত পেশাজীবী একইসাথে একজন স্ব-নিযুক্ত কর্মজীবী বা পেশাজীবী। ফ্রিল্যান্সিং একটি ব্যক্তিগত প্রক্রিয়া। আর আউটসোর্সিং হচ্ছে সেইসব মুক্ত পেশাজীবীদের কাজের উৎস, যেখান থেকে বিভিন্ন ধরনের কাজ বিভিন্ন অংশে বিভক্ত করে বিভিন্ন মুক্ত পেশাজীবীদের কাছ থেকে ঠিকাদারী (bid) পদ্ধতিতে চুক্তিবদ্ধ করে মূল কাজটি সমন্বয় ও সম্পন্ন করে এবং এটা একটা সাংগঠনিক প্রক্রিয়া। মূলত তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর কাজগুলো (যেমন –Web Development, Software Development, Writing & Content, Design, Multimedia & Architecture, SEO/SEM/SMM, Data Entry ইত্যাদি) আউটসোর্সিং করা হয়। যে সকল দেশ এই ধরনের সার্ভিস প্রদান করে থাকে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে— ভারত, ইউক্রেন, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ফিলিপিন, রাশিয়া, পাকিস্তান, পানামা, নেপাল, বাংলাদেশ, রোমানিয়া, মালয়েশিয়া, মিশর এবং আরো অনেক দেশ। অনলাইনে কাজ করার জন্য অনেকগুলো মাধ্যম রয়েছে Freelancer, (Elance)ইল্যান্স এবং (oDesk)ওডেস্ক এর মধ্যে অন্যতম।

এমনইভাবে ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করে স্বাবলম্বী হয়েছে তরুণ আসিফ শ্রাবণ। বয়স বেশি নয়, শরিয়তপুরের সুরেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে ২য় বর্ষে অধ্যয়ন করছে। মা জাহানারা বেগম ও ছোট বোন থাকে শরিয়তপুরে। তবে আসিফ এ কাজের জন্য মা ও ছোট বোনের থেকে দূরে শরিয়তপুর ছেড়ে রাজধানীর উত্তরায় এসে বসবাস শুরু করে। ফ্রিল্যান্সিং অথবা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে প্রতি মাসে সে দুই লাখের বেশি টাকা উপার্জন করতে সক্ষম হচ্ছে। ফ্রিল্যান্সিং পেশাটি নিয়ে আসিফ শ্রাবণের সঙ্গে দ্য রিপোর্টের সঙ্গে কথা হয়। আলাপকালে সে তার ফ্রিল্যান্সিং অথবা আউটসোর্সিংয়ে আসার কারণ, কিভাবে আসতে হয়, কাজ কিভাবে করা উচিৎ এবং তার জীবনের চড়াই-উৎরাইসহ আগ্রহী তরুণদের জন্য বিভিন্ন তথ্য জানান দ্য রিপোর্টকে।

আসিফ শ্রাবণ জানান, ২০০৯ সালে তার বাবা মো. সিরাজ ঢালীর মৃত্যু হয়। দুই ভাইয়ের মধ্যে সে ছোট। বড় ভাই ইতালিতে থাকেন। ৫ বোনের মধ্যে তিন বোনই বিয়ের পর ইতালিতে চলে গিয়েছেন। এক বোন থাকেন উত্তরায় এবং ছোট বোন গ্রামে তার মায়ের সঙ্গে থাকে। বিদ্যালয়ে তার রোল ছিল ১। ৫ম শ্রেণিতে থাকতে সে বৃত্তি এবং ৪র্থ শ্রেণিতে থাকতেও আঞ্চলিক বৃত্তি পেয়েছিল। আসিফ যখন ৭ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছিল তখন স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য সে পালিয়ে ঢাকায় এসে পড়ে। ঢাকায় এসে সে এসইও (Search engine optimization) ও ওয়েব ডেভোলোপারের কোর্স করে। তিন মাস কোর্স শেষ হওয়ার পর সে আবারো গ্রামে ফিরে যায়। সব সময়ই তার চিন্তা হতো বড় কিছু করার। সে তার সকল মনোযোগ কাজে লাগিয়ে দেয়। কিন্তু এগুলো ছেড়ে দিয়ে পড়ালেখায় মনোনিবেশ করার জন্য পরিবার থেকে চাপ আসতে থাকে।

আসিফ বলে, ‘আমি যখন ৯ম শ্রেণিতে তখন ওয়েবসাইটের বেশকিছু কাজ আসে। টেক-ব্লগসহ বেশকিছু ওয়েবসাইট করি। তবুও মনের মতো হচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল অন্যের অধীনে কাজ করছি। ২০১৪ সালে নিজের একটি ব্লগিং ওয়েবসাইট শুরু করি। ২০১৬ সালে আমি যখন এসএসসি পরীক্ষার্থী এমনই মুহূর্তে আমার প্রথম উপার্জন আসে, যেখানে আমি দুই লাখের উপর আয় করি। এখন আমার মোট তিনটি ওয়েবসাইট রয়েছে, যেখানে আমিসহ চারজন কাজ করছি।’

এ পেশায় প্রতিবন্ধকতার কথা উল্লেখ করে আসিফ বলে, ‘আমার এত আয় দেখে আমার পরিবারের সদস্য ও গ্রামের লোকেরা মনে করতে লাগলো যে আমি কোন অবৈধ উপায়ে উপার্জন করছি। কিন্তু অনলাইনেও যে আয় করে স্বাবলম্বী হওয়া যায় তা তারা একদমই জানে না। পরিবার এখন সমর্থন করলেও গ্রামের মানুষ এখন সন্দেহের চোখে দেখে। তারা ফ্রিল্যান্সিং অথবা আউটসোর্সিং বিষয়ে একদমই জানে না। এটা যে বর্তমান সময়ে একটি সম্মানজনক পেশা হয়ে উঠছে সেটাই কারও ধারণা নেই। ফ্রিল্যান্সিং অথবা আউটসোর্সিং সম্পর্কে সকলকে ধারণা দিতে হবে। কারণ এ পেশার মাধ্যমে অনেকে স্বাবলম্বী হতে পারবেন। এ পেশায় আয়ের আরেকটি প্রতিবন্ধকতা হলো পেমেন্ট ব্যবস্থাটি। আয়ের টাকা পেপল অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয় (Verified Paypal Account)। কিন্তু বাংলাদেশসহ বেশিরভাগ দেশে পেপাল অ্যাকাউন্ট খোলা যায় না। তাই আমার পেমেন্ট ইতালিতে থাকা বড় ভাইয়ের পেপল অ্যাকাউন্টে আসে। সেখান থেকে বড় ভাই টাকা দেশে পাঠিয়ে দেয়।’

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে আসিফ বলে, ‘২০২১ সালের মধ্যে দেশের একজন বড় উদ্যোক্তা হওয়া আমার টার্গেট। এর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ২০১৭ সালের শেষ দিক নাগাত একটি আইটি ফার্ম করব। যে ১০ থেকে ১৫ জনের টিম কাজ করবে। একটি সোশ্যাল কমিউনিকেশন অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস বানাবো। দেশকে বিশ্বের মাঝে তুলে ধরবো, যাতে আমাকে দেখে অন্যরা আরও অনুপ্রাণিত হয়। যেহেতু আমার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যরা দেশের বাইরে থাকেন, তাই আমার পরিবারের সদস্যদের মতো অন্য পরিবারের কেউ যাতে দেশের বাইরে না থাকেন সেজন্য দেশেই তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান গড়ে তোলার স্বপ্ন আমার।’

নিজের কাজ করার ধরণ প্রসঙ্গে আসিফ জানায়, সে যেভাবে কাজ করছে এটিকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলা হয়ে থাকে। এর জন্য একটি ওয়েবসাইট থাকতে হবে। যেখানে বিভিন্ন ধরণের প্রোডাক্টের রিভিউ থাকবে। যদি কোনো গ্রাহক ওই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে কোনো প্রোডাক্টে ক্লিক করে সেটি দেখে-শুনে কিনে নেয়, তাহলে বিক্রির সে অর্থ থেকে একটি অংশ যার ওয়েবসাইট তার অ্যাকাউন্টে জমা হবে। এখন তার টার্গেট ভিজিটর বা গ্রাহক বেশি সংগ্রহ করা। এভাবে গুগল অ্যাডসেন্স (Google AdSense) থেকে আয় আসছে তার। এখন যে পরিমাণ আয় আসছে সেখান থেকে সঞ্চয় করে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস তৈরির কাজ শুরু করবে সে।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি?

প্রযুক্তিনির্ভর এই বিশ্বে মানুষের কেনাকাটার জন্য এখন আর বাইরে বের হওয়ার প্রয়োজন নেই। বাসা বা অফিসে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ই কমার্স সাইট থেকে কেনাকাটা করতে পারেন। অনলাইনে অর্ডারকৃত পণ্য ক্রেতার হাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পৌঁছে দেয় ইকমার্স প্রতিষ্ঠান। ই কমার্স সাইটগুলো তাদের পণ্যের প্রসারের উদ্দেশ্যে অ্যাফিলিয়েট সুবিধা দিয়ে থাকে। আর মার্কেটাররা এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে নিজেরা মার্কেটিং করে আয় করে। এটাই হলো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। সহজে বলা যায়, আপনি অনলাইনে কোনো পণ্য বিক্রি করতে চাইলে সে প্রতিষ্ঠান আপনাকে তাদের পণ্যের একটা লিংক দিবে। আপনার দেওয়া লিংকের মাধ্যমে কোন গ্রাহক যদি তাদের ওয়েবসাইটে ঢুকে এবং পণ্য ক্রয় করে, তাহলে ওই প্রতিষ্ঠান আপনাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন দেবে। এই কমিশনের মাধ্যমে অর্থ আয় করার মাধ্যকেই বলা হয় অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং।

আগ্রহীদের জন্য আসিফ যোগ করে, এ কাজের জন্য শুধু কম্পিউটার বা ল্যাপটপ, ইন্টারনেট কানেকশন বা মডেম, কিছু কাজের দক্ষতা ও যথেষ্ট সময় প্রয়োজন। যারা আগ্রহী তাদের আগে বাছাই করতে হবে তারা কোন ব্যাপারটি নিয়ে কাজ করবে। কারণ এখানে বিভিন্ন ওয়েবডিজাইনিং, অনলাইন মার্কেটিং, অ্যান্ড্রয়েট অ্যাপস্ ডেভোলোপ ইত্যাদি কাজ রয়েছে। তাই প্রথমে যেকোন একটি বাছাই করতে হবে। যেমন কেউ অনলাইন মার্কেটিং করার সিদ্ধান্ত নিল। তাকে সাফল্য পেতে হলে কোর্স শেষ করার পর অনলাইন মার্কেটিংয়ের উপরই ফোকাস করতে হবে। একদিন তিনি সফল হয়ে এর ফল পাবেন। আমি সকলকে বলতে চাই বড় স্বপ্ন দেখুন, তারপর সে স্বপ্ন পূরণে কাজ করুণ। একদিন সফল হবেন ইনশাআল্লাহ।

কি কি বিষয়ে দক্ষতা প্রয়োজন?

আগে যে কোনো একটা বিষয়ে দক্ষ হতে হবে। এরপর অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে একটু সময় দিতে হবে। ঘাঁটাঘাটি করতে হবে। যারা অনেক দিন থেকে কাজ করেন, তাদের প্রোফাইল দেখতে হবে। তাদের প্রোফাইল দেকে তাদের প্রোফাইলের মতো নিজের প্রোফাইল সাজাতে হবে এবং ইংরেজিতে একটু দক্ষ হতে হবে। এমন না যে ফ্লুয়েন্টলি কথা বলতে হবে বা লিখতে হবে। অন্তত একটি জব পোস্ট পড়ে কি কি করতে বলছে, কি কি করতে হবে এবং ক্লায়েন্টের সাথে কথা বলার মতো ইংরেজি জ্ঞান থাকতে হবে। যে কাজটি সম্পর্কে দক্ষ সে কাজের জন্য বিড নিয়মিত করতে হবে। আর তা না হলে বিড করার আগে গুগলে সার্চ করে ওই কাজটি সম্পর্কে ধারণা নেওয়া প্রয়োজন। যদি নিয়মিত বিড করেও কাজ পাওয়া না গেলে কভার লেটার টা একটু অন্যরকম ভাবে লেখা দরকার। প্রধানত দুই প্রকারে বিডিং করা হয়। একটি Project Fee। কোনো একটি প্রজেক্ট যখন মার্কেটপ্লেসে দেওয়া হয়, তখন পুরো প্রজেক্টটি সম্পন্ন করতে কত পারিশ্রমিক তা নিয়ে বিডিং করা হয়। আরেকটি Hourly Rate। এই পদ্ধতিতে কোনো একটি প্রজেক্টের জন্য কাজ করতে প্রতি ঘন্টায় কত পারিশ্রমিক তা নিয়ে বিড করা হয়।

তারপরও কোন কাজ না পেলে ক্লায়েন্টের স্থানে নিজেকে চিন্তা করে অ্যাপ্লাই করতে হবে। কভার লেখার নিয়ম বলতে আসলে কিছু না। বিশাল একটা মেসেজের থেকে সিম্পল, সরাসরি কাজের কথা দিয়ে কভার লেটার লিখলে সহজেই ক্লায়েন্টের আকর্ষন পাওয়া যায়। জব পোস্টটি পড়তে হবে, এরপর ক্লায়েন্ট কি কোন প্রশ্ন করেছে কিনা সেগুলো কভার লেটারে উল্ল্যেখ করতে হবে। নিজের কোন প্রশ্ন থাকলে করতে হবে। নিজের কনফিডেন্ট থাকতে হবে। অন্য কাউকে অনুকরণ না করে নিজের মত করে কভার লেটার লেখা উচিৎ। কাজ না করলে অভিজ্ঞতা হয় না তাই যদি প্রথমে কেউই কাজ দিতে না চায়, তাহলে ফ্রী কাজ করার চেষ্টা করলে ভাল। এভাবে শিখতে শিখতে এক্সপার্ট হয়ে যাওয়া যাবে। সুন্দর করে যদি জবের জন্য অ্যাপ্লিকেশন করার সময় মেসেজ দেওয়া যায়, সেখানে কেন কাজটি প্রয়োজন, কিভাবে কাজটি করা হবে ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ থাকবে। এগুলো বুঝিয়ে দিলে অ্যাপ্লিকেশনের রিপ্লে আসবে। রিপ্লেতে কাজটি কিভাবে শুরু করা হবে, কতদিন সময় লাগতে পারে ইত্যাদি জানতে চায় যিনি কাজ দিবেন। এগুলো সুন্দর মত বুঝিয়ে দিলে ক্লায়েন্ট কাজ দিবে।

এ ছাড়া নিজেকে কোনো একটি নির্দিষ্ট কাজে দক্ষ করে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সাহায্য পাওয়া যাবে সার্চ ইঞ্জিন (যেমন— Google, Bing, Yahoo ইত্যাদি) এবং বিভিন্ন ভিডিও টিউটোরিয়াল থেকে। দেশে প্রচুর ট্রেনিং সেন্টার আছে। তবে শুধু ট্রেনিং সেন্টারগুলোর উপর নির্ভর করলেই হবে না, এগিয়ে যেতে হলে নিজে থেকেই কাজ সম্পর্কিত অনেক কিছু শিখতে হবে। দক্ষতা অনুযায়ী কিছু কাজ তৈরী করতে হবে। যেমন— ওয়েব ডিজাইনিং, ওয়েব পেইজ বানানো ইত্যাদি। সেগুলো মার্কেটপ্লেসের প্রোফাইলে দেখাতে হবে। ODesk.com, Freelancer.com, elance.com ইত্যাদি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে দক্ষতা পরিমাপের পরীক্ষা দেওয়া যায়। এগুলো দেওয়া জরুরি। যার যত বেশি পরীক্ষা দেওয়া থাকে তার কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেড়ে যায়। একবার কাজ পেয়ে গেলে, সেই কাজটি মন দিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে শেষ করতে হবে। এতে ক্লায়েন্ট খুশি হয়ে ভালো ফিডব্যাক দেবে। পরবর্তী সময়ে এই ক্লায়েন্টের কাছ থেকেই নতুন কাজ পাওয়া যাবে। তবে সহজ কাজগুলোর মধ্যে আছে Search Engine Optimization, Article writing, Data Entry ইত্যাদি। স্বভাবতই কাজগুলো যেহেতু সহজ, সেহেতু এগুলোতে বিডিং হয় সবচেয়ে বেশি এবং এগুলো সহসা পাওয়াও দুষ্কর। এগুলোর চাইতে একটু কঠিন কাজ হল Web Development, Product Development, Software Development, Graphics Designing ইত্যাদি। কঠিন কাজগুলোতে সহজ কাজের চাইতে পে-মেন্ট বেশি থাকে।

টাকা পাওয়ার পদ্ধতি

কাজ শেষ করার পর অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হবে। সেখান থেকে টাকা ব্যাংকে ট্রান্সফার করা যাবে। ওডেস্ক, ইল্যান্স ইত্যাদি ব্যাংক সাপোর্ট করে। অন্যান্য মার্কেটপ্লেস থেকে মানিবুকার্স বা এমন কোন সিস্টেমে টাকা আনা যায়। টাকা আয় করলে তা হাতে আসার অনেকগুলো পথ পাওয়া যাবে। সবার আগে কিভাবে একটি জব কমপ্লিট করা যায় তা নিয়ে কাজ করতে হবে। কাজ শেষে টাকা ক্লায়েন্ট রিলিজ দেওয়ার পর মার্কেটপ্লেসের অ্যাকাউণ্টে জমা হবে এবং সেখান থেকে সহজেই অনেকগুলো পথে নিজের হাতে টাকা নিয়ে আসা যাবে। পে-পাল নেই বা কার্ড নেই, এ সব নিয়ে চিন্তা না করলেও হবে। এ সব নেই বলে কাজ করা বন্ধ করার কোন মানে হয় না। টাকা হাতে আনার জন্য মাস্টারকার্ডও ব্যবহার করা যাবে। আপওয়ার্ক বা ফ্রিল্যান্সার থেকে কার্ডে টাকা ট্রান্সফার করা যাবে। পরে বাংলাদেশের যে কোন এটিএম বুথ থেকে টাকা উঠানো যাবে। কার্ডের ফ্রী আবেদনের জন্য পেওনিয়ারের সাইটে গিয়ে সাইন আপ করতে হবে। নাম, ঠিকানা, ইমেইল, ইত্যাদি দেওয়ার সময় একটু নির্ভুলভাবে দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এর পর ঠিকানায় কার্ড চলে আসবে। কার্ডটি ফ্রি। পরে যে কোন সময় কার্ডে টাকা ট্রান্সফার করে অ্যাকটিভ করা যাবে। অ্যাকটিভ হওয়ার পর যে কোন মার্কেটপ্লেসে কার্ড যুক্ত করে টাকা ট্রান্সফার করা যাবে। পেওনিয়ার কার্ড (Payoneer Card) নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে মার্কেটপ্লেস থেকে যেকোনো সময়ে অর্থ উত্তোলন করার জন্য। এটি এক রকম ডেবিট কার্ডের মত। এই কার্ড দিয়ে পৃথিবীর যেকোন স্থান থেকে ATM এর মাধ্যমে যেকোন সময়ে মার্কেটপ্লেসে জমানো টাকা তোলা যাবে। এই কার্ড দিয়ে টাকা উত্তোলনের পাশাপাশি অনলাইনে কেনাকাটাও করা যাবে। এমনকি এর মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাঠানো যাবে।

বাংলাদেশের জনসংখ্যার বড় অংশই এখন তরুণ। আর তরুণরাই পারে একটি দেশের অর্থনীতির গতি পরিবর্তন করতে। মোট জনসংখ্যার ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী মানুষের সংখ্যা এখন বেশি। কোনো দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা যখন আনুপাতিক হারে সবচেয়ে বেশি থাকে তখন তাকে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড (Demographic Dividend) বা ডেমোগ্রাফিক বোনাস (Demographic Bonus) বলে। এ অবস্থাকে আবার উইন্ডোজ অব অপরচুনিটিও (Windows of Opportunity) বলা হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে কোন দেশের উন্নয়নের সম্ভাবনাময় দুয়ার খুলে যেতে পারে। আর যদি সঠিক সময়ে তাদের সঠিকভাবে কাজে লাগানো না যায় তাহলে তা যেকোনো দেশের জন্য বোঝা ও মারাত্মক বিপদের কারণ হবে। বাংলাদেশের এই শিক্ষিত বিপুল কর্মক্ষম জনগণকে অনলাইনে আউটসোর্সিং কাজের যোগ্য হিসেবে অথবা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে গড়ে তোলা অন্যতম ফলপ্রসু সমাধান হতে পারে।

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/জেডটি/মার্চ ১৬, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর