thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল 24, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ২০ শাওয়াল 1445

সংবাদ সম্মেলনে রাউধার বাবা

সুপরিকল্পিতভাবে আমার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে

২০১৭ এপ্রিল ২৩ ১৮:০০:৪৮
সুপরিকল্পিতভাবে আমার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে

রাজশাহী অফিস : রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের ছাত্রী ও মডেল রাউধা আথিফকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে আবারও অভিযোগ করেছেন তার বাবা মোহাম্মদ আথিফ (যিনি নিজেও একজন চিকিৎসক) ।

রাজশাহী প্রেস ক্লাবে রবিবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে রাউধার বাবা তার মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে রাউধার বাবা লিখিত বক্তব্যে বলেছেন, ‘ফ্যানে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা করলে যেসব চিহ্ন চোখেমুখে ও শরীরে ফুটে ওঠে তার কোনোটিই পাওয়া যায়নি রাউধার শরীরে। অন্যদিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করলে যেসব আলামত ফুটে ওঠে তার সবগুলোই রয়েছে রাউধার শরীরে।’

তিনি আরো বলেছেন, ‘আমার মেয়ে যে ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে তার কোনো প্রমাণই নেই। আদৌ আমার মেয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলে ছিল কিনা সেটাও পরিষ্কার নয়। কারণ, একজনও দেখেনি যে রাউধা ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। তার মৃত্যুর পর যে ছবি পাওয়া যায় তা বিছানায় শোয়ানো অবস্থায়। ছবি না থাকলে কীভাবে বাবা হিসেবে আমি বিশ্বাস করবো যে- আমার মেয়ে ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে?’

মোহাম্মদ আথিফ আরও বলেছেন, ‘আত্মহত্যা করলে স্যালিভা বেরিয়ে আসে। মূত্র বেরিয়ে আসে। হাত-পা ছড়ানো থাকে। কিন্তু রাউধার হাত মুষ্টিবদ্ধ ছিল। সাধারণত শ্বাসরোধ করা হলে এ ধরনের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া রাউধার গলায় হাতের আঙুলের স্পষ্ট ছাপ রয়েছে। তার গলায় যে দাগ রয়েছে তা সুতি কাপড়ের ওড়নার নয়। ফলে সুতি কাপড়ের যে ওড়না দিয়ে রাউধা গলায় ফাঁস দিয়েছে বলে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, তা মিথ্যা।’

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে মোহাম্মদ আথিফ সুনির্দিষ্ট কিছু প্রশ্ন তুলেছেন।

তিনি বলেছেন, ‘রাউধার গলায় যে চিহ্ন রয়েছে তা প্রকৃতপক্ষে কিসের চিহ্ন তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য এক্স-রে, এমনকি এমআরআই করা প্রয়োজন। কিন্তু তা করা হয়নি। এটা ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকদের গাফিলতি এবং প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা।’

ডা. আথিফ সংবাদ সম্মেলন থেকে গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করে বলেছেন, ‘সাধারণ পুলিশ ও ডিবি তদন্তে গাফিলতি করেছে। তবে পুলিশের অপরাধ বিভাগ গুরুত্ব নিয়ে তদন্ত করছে। প্রকৃত ঘটনা বের করতে গণমাধ্যমেরও সহযোগিতা প্রয়োজন।’

এদিকে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তের জন্য রাউধার লাশ সোমবার (২৪ এপ্রিল) কবর থেকে উত্তোলন করা হবে বলে জানিয়েছেন সিআইডির পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসমাউল হক। এজন্য তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ডও গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

আসমাউল হক জানিয়েছেন, মডেল রাউধার হত্যা মামলার তদন্তে হোস্টেল সুপার মাহমুদা বেগম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুল আজিজ রিয়াজ, মামলায় সন্দেহভাজন অভিযুক্ত আসামি সিরাত পারভিন মাহমুদসহ ২০ জনের বক্তব্য নেওয়া হয়। প্রথমে একসঙ্গে ও পরে আলাদা করে তাদের বক্তব্য গ্রহণ করে সিআইডি।

তিনি বলেছেন, ‘রাউধার মরদেহের পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য নতুন করে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আমিরুল চৌধুরী, নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মাহবুব হাফিজ এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হাফিজুর রহমান এর সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। সোমবার সকালে জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে রাউধার মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করা হবে।’

গত ২৯ মার্চ দুপুরে রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রী হোস্টেলের ২০৯ নম্বর কক্ষ থেকে রাউধার লাশ উদ্ধার করা হয়। তখন পুলিশ জানিয়েছিল, সিলিং ফ্যানের সঙ্গে কাপড় বেঁধে গলায় ফাঁস দিয়ে রাউধা আত্মহত্যা করেছে। তবে পুলিশ পৌঁছানোর আগেই তার সহপাঠীরা রাউধার ঝুলন্ত লাশ নামিয়ে ফেলে।

গত ৩০ মার্চ রাউধার লাশ দেখতে রাজশাহীতে আসেন মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত আয়েশাথ শান শাকির এবং রাউধার মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যরা। ৩১ মার্চ মেডিকেল বোর্ড গঠনের মাধ্যমে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। রাউধা আত্মহত্যা করেছে উল্লেখ করে বোর্ড ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।

মালদ্বীপের নাগরিক রাউধা আথিফের জন্ম ১৯৯৬ সালে ১৮ মে। তিনি রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। রাউধা পড়ালেখার পাশাপাশি মডেলিং করতেন। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে বিশ্বখ্যাত ‘ভোগ’ ম্যাগাজিনের ভারতীয় সংস্করণে আরও পাঁচ মডেলের সঙ্গে রাউধাও ছিলেন।

(দ্য রিপোর্ট/এস/জেডটি/এপ্রিল ২৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর