thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল 24, ৫ বৈশাখ ১৪৩১,  ৯ শাওয়াল 1445

গর্ভকালীন পরিশ্রমের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে নেপালি নারীরা

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ২৪ ১৯:১৩:৫২
গর্ভকালীন পরিশ্রমের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে নেপালি নারীরা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : হিমালয়ের দেশ নেপালে সিংহভাগ কৃষিকাজই করেন নারীরা। এমনকি অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীনও ফসল ফলাতে কঠোর শ্রম দিতে হয় তাদের। সন্তান জন্মদানের শেষ দিন পর্যন্ত এই কাজ করে যান তারা।

কিন্তু এই কঠিন পরিশ্রম অন্তঃসত্ত্বা নারীদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। অনাগত সন্তানও এর কারণে ঝুঁকির মধ্যে থাকে।

নেপালের পাওয়াতি গ্রামের জানুকা রাসেলি তার ক্ষেতে সবজি লাগানোর কাজ করছিলেন। ঘণ্টাখানেক পর বাড়িতে ফিরেই তাকে কাঠ কাটার কাজ করতে হয়েছে। এরপর প্রখর রৌদ্রের মধ্যে ছাগলের পালকে নিয়ে যান পাহাড়ের ঢালে ঘাস খাওয়াতে।

জানুকা তার প্রতিদিনের কাজের বিবরণ দিয়ে বলেন, ‘ভোর ৬টায় ঘুম থেকে উঠেই আমি কাজ শুরু করি, চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। আমাকে সারাদিনই কাজ করতে হয়। প্রতিদিনই সাত থেকে আট ঘণ্টা মাঠে কাজ করি।’

শুনলে বেশ অবাক হবেন, জানুকা কিন্তু সাত মাসের গর্ভবতী! স্ফীত পেট নিয়েই তাকে এই কাজ করে যেতে হচ্ছে। সন্তান প্রসবের দিন পর্যন্ত এই কাজগুলো করে যেতে হবে বলে জানান জানুকা।

গর্ভকালের শেষের দিকে অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে জরায়ু স্বাভাবিক অবস্থান থেকে সরে যেতে পারে। এর ফলে ওই নারী বন্ধ্যাত্বের শিকার হতে পারেন। মা দীর্ঘ সময় কায়িক পরিশ্রম করলে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশও ব্যাহত হয়। এর ফলে কম ওজনের শিশু জন্ম নেয়। শিশু প্রতিবন্ধী হয়েও জন্ম নিতে পারে। ভূমিষ্ট হতে পারে নির্দিষ্ট সময়ের আগেও। গর্ভবতী মায়ের অপর্যাপ্ত খাদ্য গ্রহণ এই সম্ভাবনাকে আরও বাড়িয়ে দেয়।

অন্যান্য দেশগুলোতেও যেখানে নারীদের কৃষিকাজে কঠোর শ্রম দিতে হয় তারাও এই সমস্যাগুলোর মুখে পড়ে। তবে নেপালের পুরুষদের অনেকেই কাজের জন্য দেশের বাইরে চলে যাওয়ায় নারীদের ওপর কৃষিকাজের চাপ তুলনামূলকভাবে বেশি।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গর্ভবতী নারীদের স্বাস্থ্যের উন্নয়নে পদক্ষেপ নিয়েছে নেপাল। সন্তান জন্মদানের জন্য বেশকিছু সেবাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে সরকার। কেন্দ্রগুলোতে সেবা নিতে ক্লিনিকের মতো অর্থ গুণতে হয় না। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের মতো মারাত্মক সমস্যা প্রতিরোধে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থাও আছে এখানে। এই প্রচেষ্টার ফলে দেশটিতে প্রসবজনিত মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে।

কিন্তু প্রসবজনিত মাতৃমৃত্যু হার আরও কমিয়ে আনাকে চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করেন আইনসভার সদস্য ও নারী স্বাস্থ্য সমস্যার প্রচারক আরজু রানা দিউবা। গর্ভাবস্থার শেষের দিকে এসেও নারীদের কঠোর পরিশ্রম করাকে একটি বড় সমস্যা বলে উল্লেখ করেন তিনি।

দিউবা বলেন, নেপালে সন্তানসম্ভবা নারীদেরও পরিবারকে সাহায্য করতে পরিশ্রম করতে হয়। আর এটা নেপালের সংস্কৃতিরই অংশ বলে উল্লেখ করেন তিনি। পরিবারে নারীদের অবস্থান অনেক নিচে তাই তাদের সবচেয়ে বেশি পরিশ্র্রম করতে হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে নারীরা সন্তান জন্ম দেওয়ার আগে বিশেষ যত্ন পেয়ে থাকে। চিকিৎসকরা গর্ভকালীন সময়ে তাদের বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করারও পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু যে সব এলাকার নারীরা গর্ভকালীন সময়ে পর্যাপ্ত খাবার ও চিকিৎসা সুবিধা পায় না তাদের শ্রমসাধ্য কাজ এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।

আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের সভাপতি ক্যারোলিন মিলস বলেন, সন্তানের সুস্বাস্থ্যের প্রত্যাশা করলেও স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন মায়ের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে তেমন উদ্বিগ্ন থাকেন না। তাই সেভ দ্য চিলড্রেনের মতো প্রতিষ্ঠান এ সব পরিবারের সঙ্গে দেখা করে তাদের বোঝানের চেষ্টা করে। সূত্র : বিবিসি।

(দ্য রিপোর্ট/আরজে/এসকে/আরকে/ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

বিশ্ব এর সর্বশেষ খবর

বিশ্ব - এর সব খবর