thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ 24, ১৫ চৈত্র ১৪৩০,  ১৯ রমজান 1445

ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তির আশঙ্কা

২০১৭ জুলাই ২২ ২০:০৮:৪৭
ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তির আশঙ্কা

কাজী সাঈদ, কুয়াকাটা : দেশের দক্ষিণ উপকূলে দিনকে দিন বাড়ছে রোহিঙ্গাদের বসবাস। বিশেষ করে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার মৎস্য বন্দর আলীপুর-মহিপুরের বিভিন্ন এলাকায় তারা স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। ইতোমধ্যে অনেক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। এমনকি তাদের সন্তানদের জন্য জন্মনিবন্ধন সংগ্রহের কাজ শেষ হয়েছে। এ এলাকায় সরকারিভাবে চিহ্নিত রোহিঙ্গা পরিবারের সংখ্যা ৭২টি থাকলেও বাস্তবে সংখ্যাটা তিন অংকে পৌঁছেছে। ফলে আগামী ২৫ জুলাই থেকে শুরু হওয়া হালনাগাদ ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তি ঠেকানো মুশকিল হবে এমনটাই মনে করছেন সচেতনমহল।

সরেজমিনে দেখা গেছে, স্থানীয় প্রভাবশালী মৎস্যজীবীদের প্রয়োজনে অস্থায়ীভাবে থাকার সুযোগ নিয়ে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তিসহ এরা সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে চলেছে। অভাবের তাড়নায় কাজ পাগল এসব রোহিঙ্গা পুরুষরা বেশিরভাগ সমুদ্রের মাছ ধরার পেশাকেই বেছে নেয়। সেই সাথে স্থানীয় মাছধরা ট্রলার মালিকরা এসব রোহিঙ্গাদের ইচ্ছেমত খাটানোর পাশাপাশি কম মজুরিতে রাখার সুযোগ পাচ্ছে। ফলে এসব প্রভাবশালী ট্রলার মালিকরা রোহিঙ্গাদের আলীপুর-মহিপুরে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ করে দিচ্ছে। এ সুযোগে ওই সকল রোহিঙ্গা পরিবারের যুবক ও যুব মহিলারা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

জানা গেছে, গত ১৭ জুলাই নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ্ নির্বাচন ভবনে তার কার্যালয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ নিয়ে সমন্বয় কমিটির একটি সভা করেন। সভা শেষে তিনি বলেন, ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তি ঠেকাতে বিশেষ এলাকার পরিধি বাড়ানো হয়েছে। রোহিঙ্গা বসতি এলাকায় ভোটার হতে নাগরিদের অধিকতর তথ্য দাখিল করতে হবে। এ ক্ষেত্রে এসব এলাকায় কেউ ভোটার হতে চাইলে বাবা-মার এনআইডি, ফুফু-চাচার এনআইডি, প্রয়োজনে অন্য আত্মীয়ের এনআইডিও প্রমাণ হিসেবে দিতে হবে। কিন্তু ইতোপূর্বেই উপকূলের অধিকাংশ রোহিঙ্গা এনআইড কার্ড পেয়েছেন। হয়েছেন ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। ফলে হালনাগাদ ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তি ঠেকানোর কাজটা আর সহজ থাকছে না।

তথ্যানুযায়ী, এর আগে ২০টি উপজেলায় রোহিঙ্গা উপস্থিতি ধরে নিয়ে ২০টি কমিটি কাজ করলেও এবার উপজেলার সংখ্যা আরও দশটি বাড়িয়েছে নির্বাচন কমিশন। এবারের রোহিঙ্গা উপস্থিতির ৩০টি উপজেলার মধ্যে কলাপাড়া উপজেলা তালিকাভুক্ত আছে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাচন অফিস কোন তথ্য দিতে পারেনি। ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তি ঠেকানোর পদক্ষেপ সম্পর্কে নির্বাচন এখনও অবগত নয়। ফলে আগামী ২৫ জুলাই থেকে শুরু হওয়া বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ বলেন, আমি কলাপাড়ায় নতুন যোগদান করেছি। এখনও এ ধরনের কোন চিঠি এসে পৌঁছায়নি।

সূত্র জানায়, মিয়ানমার থেকে নাফ নদী হয়ে কক্সবাজারে পাচার হওয়া ইয়াবা ট্যাবলেটসহ অন্যান্য মাদক এসব রোহিঙ্গাদের আত্মীয় স্বজনদের হাত হয়ে কুয়াকাটা, মহিপুর-আলীপুরে আসছে। বিভিন্ন সময় এর বড় বড় চালান পুলিশের হাতে আটকও হয়েছে। সম্প্রতি মহিপুর থানা পুলিশ মৎস্য বন্দর আলীপুর থেকে ৩৯শ’ ৫০পিস ইয়াবাসহ ফাতিমা নামের এক রোহিঙ্গা নারীকে আটক করে। পুরুষ রোহিঙ্গারা জেলে পরিচয়ে ট্রলারে মাছ শিকারের পাশাপাশি সমুদ্রে জলদস্যুদের সাথে নিবিড় যোগাযোগ রাখছে, এ তথ্য স্থানীয় জেলেদের। এমনকি স্থায়ীভাবে আবাস গড়তে এখানে তাদের সন্তানদের জন্য সংগ্রহ করছে জন্মনিবন্ধন।

এদিকে, প্রায় ২৫ বছর আগে আসা রোহিঙ্গা ‘মাকাছি মাঝি’ ওরফে কাসেম মাঝি আলীপুরে এসে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করলেও এখনও তারা ভাড়া বাসাতেই থাকেন। সাধারণত আলীপুরে মাকাছি মাঝির থাকার ঘরটির মত অন্যান্য একটি ভাড়া বাসা সর্বোচ্চ ৫শ’ টাকা হলেও ছোট্ট এরকম একটি ঘরে ১ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে থাকছেন তারা। সেখানে পানি বিদ্যুতের সুবিধা না থাকলেও এক হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে থাকেন কেন-এমন প্রশ্নের জবাবে মাকাছি মাঝির স্ত্রী ষাটোর্ধ্ব রোজিনা জানালেন, জনৈক প্রভাবশালী ট্রলার মালিকের ভাড়া ঘরে থাকেন। সেখানে বেশি টাকা দিয়ে থাকলেও তাদের কোন ঝামেলা পোহাতে হয় না।

এভাবেই ট্রলার মালিকরা এদের ব্যবহার করে বাড়তি মুনাফা পায় বলে এসব রোহিঙ্গাদের নির্বিঘ্ন বসবাসের সুযোগ করে দিচ্ছে। এর সাথে যোগ হয় স্থানীয় ভোটের রাজনীতি। সুযোগ নিচ্ছেন জনপ্রতিনিধিরা। ভোটের মৌসুমে তাদের পক্ষে ভোট ভাগিয়ে নিতে এসব রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তকরণের প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ফলে সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে এসব রোহিঙ্গারা। ভিজিডি, ভিজিএফ, জেলে সহায়তাসহ সরকারি সকল সহায়তার বরাদ্দ তাদের দিতে গিয়ে স্থানীয় দুঃস্থ নাগরিকদের প্রাপ্যতায় ভাগ বসাচ্ছে এরা। ফলে এ নিয়ে স্থানীয় ওই সব নাগরিকদের মধ্যে অসন্তোষ থাকলেও জনপ্রতিনিধি ও ট্রলার মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে মুখ খোলার সাহস পায় না।

সরেজমিনে কথা হয় ৭ বছর আগে মৎস্য বন্দর আলীপুরে এসে বসবাস করা রোহিঙ্গা মো. সৈয়দের (৩৮) সাথে। তিনি জানান, তারা এখানে আসেননি, তাদের আনা হয়েছে। আলীপুরের জনৈক প্রভাবশালী মৎস্য ব্যবসায়ী ও ট্রলার মালিক তাদের কক্সবাজর থেকে এনেছেন। সৈয়দ আরও জানান, তারা ১২-১৩ বছর আগে মিয়ানমার থেকে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে কক্সবাজারের টেকনাফে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে ওই ট্রলার মালিকের লোক গিয়ে তাদের পরিবারসহ আলীপুরে নিয়ে এসেছেন। তার মতো অনেকেই এখন আলীপুরের স্থানীয় বাসিন্দা। সৈয়দ বর্তমানে ওই ট্রলার মালিকের একটি ভাড়া বাসায় থাকেন।

সূত্র জানায়, মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রথমে আস্তানা গেরে এরা বসবাস শুরু করে। এরপর কিছিুদিন সেখানে থেকে বিভিন্ন স্থানের খোঁজখবর নিয়ে দেশের অন্যান্য উপকূলীয় এলাকার কোথাও পাড়ি জমায়। অভাবের কারণে এসে প্রথমে সস্তায় শ্রম বিক্রি করায় মহাজনরাও এসব রোহিঙ্গাদের কাজে নিযুক্ত করতে আগ্রহী হয়। এভাবেই ক্রমে বাড়ছে মহিপুর-আলীপুরে রোহিঙ্গাদের বসবাস।

এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম সাদিকুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া ঠেকাতে আমরা নির্বাচন অফিসের সাথে কথা বলব।

পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক ড. মাসুমুর রহমান বলেন, বিষয়টির খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে আমাদের কাছে এ বিষয় এখনও কোন চিঠি আসেনি।

(দ্য রিপোর্ট/এপি/জুলাই ২২, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর