thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৭ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের বেহাল দশা

২০১৭ আগস্ট ২০ ০১:১২:৫৩
বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের বেহাল দশা

বিধান সরকার, বরিশাল : বেহাল অবস্থা বরিশাল ঢাকা মহাসড়কের। জয়শ্রী থেকে ভুরঘাটা পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার সড়কের ৫ কিলোমিটার পথ ঝুঁকিপূর্ণ। এই পথের মধ্যে অন্তত ১১টি স্থানে ছোট-বড় গর্ত ও খানাখন্দ রয়েছে। এ কারণে কখনোবা মাঝপথে যান বিকল হয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষায় থেকে তবেই গন্তব্যে পৌঁছতে হয়। ঠিকাদারদের কাজে বিলম্ব ও মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা। তবে সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী দুষলেন বর্ষা মৌসুমকে। তিনি আশ্বস্ত করছেন, কোরবানীর ঈদের জন্য যাত্রা নিরাপদ করতে ৫ দিনের মধ্যেই সড়ক মেরামত করে যান চলাচলের উপযুক্ত করা হবে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের হিসেব মতে, মহাসড়কের ভুরঘাটা থেকে লেবুখালি পর্যন্ত বরিশাল অংশের দৈর্ঘ্য হলো ৭৭ কিলোমিটার। এরমধ্যে উজিরপুর উপজেলার জয়শ্রী থেকে শুরু করে ভুরঘাটা পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার পথে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

গৌরনদী হাইওয়ে পুলিশের দেওয়া তথ্য হলো-জয়শ্রী থেকে শুরু হয়ে বামরাইল, অশোকাঠি, কাসেমাবাদ, বাটাজোর, কসবা,টরকী,ধূলখোলা, কটকস্থল,বার্থী, ইল্লা থেকে টানা ভুরঘাটা পর্যন্ত গাড়ি চলাচল করে ঝুঁকি নিয়ে। এই ৫ কিলোমিটার ভাঙা অংশের, বিশেষ করে বামরাইল ও খাঞ্জাপুরে, ভাড়ি যান চলাচল করতে গিয়ে যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে পথেই থেমে যায়। এতে করে চলতি বছর ১৩ এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে দু’টি ট্রাক মহাসড়কে বিকল হলে ৩ ঘন্টা যানচলাচল বন্ধ ছিল বলে জানিয়েছেন গৌরনদী হাইওয়ে পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মো. শাহাদাত। তিনি আরো বলেছেন, মহাসড়কের বরিশালের কাছাকাছি হলে জেলা পুলিশের রেকার আনেন আর ভুরঘাটার কাছাকাছি গাড়ি বিকল হলে মাদরীপুরের চেইনকাপ্পা এনে সড়ক সচল করেন। তবে এতে করে ২ থেকে ৩ ঘন্টা সময় লেগে যায়। এসময় মহাসড়কের দুই দিকে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন পড়ে। যা সামাল দিতে তাদের (হাইওয়ে পুলিশের) বেগ পেতে হয়।

সরেজমিন মহাসড়কের অবস্থা দেখতে গিয়ে কথা হয় দক্ষিণ বাটাজোর গ্রামের বাসিন্দা মো. সোহাগ হাওলাদার ও ছালেক ফকিরের সাথে। তারা জানিয়েছেন, মহাসড়কের এই অবস্থা দীর্ঘ তিন মাস ধরে। ঠিকাদাররা কিছু কাজ করে আবার বন্ধ করে চলে যায়। কখনোবা বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়া স্থানে ইট ফেলে যায়। এতে কাজের কাজ তেমন হয়না বলে গাড়ি চলাচল করে হেলেদুলে।

এখানেই কথা হয় থ্রিহুইলার যানের চালক মো. নাজমুল ও নয়নের সাথে। তারা দাবি করেছেন, রাস্তা ভাঙা থাকায় প্রচণ্ড ঝাঁকি হওয়াতে যাত্রীরা তাদের গাড়িতে ওঠতে চায় না। এতে করে গাড়ির মালিকের টাকা দিতে হিমশিম খেতে হয়।

বেহাল মহাসড়কের আরো সামনে কাসেমাবাদ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পিকআপ ভ্যান মেরামত করছেন চালক মো. দেলোয়ার হোসেন। টরকী বন্দর থেকে মুদি দোকানীদের জন্য মামলামাল নিয়ে উজিরপুর বাজারে যাবেন। পথিমধ্যে ট্রাকের চাকায় সমস্যা দেখা দেয়। এই গাড়ি চালক বলেছেন, ‘সড়কের পিচ ওঠে পাথর বের হওয়ার কারণে টায়ারে সমস্যা করে, চাকা পাংচার হয়। শুধু তাই নয়, লানার, বাম্পার, শকব্জার এসবের ক্ষতি হয়। এক্সেলেটর ভেঙে গাড়ি পথেই বসে যায়।’

বরিশাল থেকে কাঠালবাড়ি পর্যন্ত চলমান বিএমএফ পরিবহনের চালক আ. রহিম বলেছেন, ‘আগে যেখানে আড়াই থেকে তিন ঘন্টার মধ্যেই গন্তব্যে পৌঁছতে পারতাম সেখানে এখন চার ঘন্টা লেগে যায় রাস্তা বেহাল হবার কারণে।’

কাঠ বোঝাই করে ঢাকাগামী ট্রাকের চালক মো.মনসুর আলীর বক্তব্য, ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন। লোড গাড়ি, সড়ক ভাঙা হওয়াতে এদিক-সেদিক কাত হয়ে পড়ে। যেকোনো মুহূর্তেই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

এই সড়কে প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয় আগৈলঝাড়া বিএসপি একাডেমির শিক্ষক তৃপ্তি রানীকে। তিনি বলেছেন, ‘উজিরপুর থেকে বাস না পেলে তিন চাকার যানে করে যাওয়া-আসা করতে হয়। সড়কে গর্ত থাকার কারণে গাড়ির ধাক্কায় বুকে ও কোমড়ে ব্যথা হয়। বাড়িতে ফিরে গিয়ে কোনো কাজ করতে পার না।’

আশোকাঠি গ্রামের রহিমা বেগম জানিয়েছেন, ছোট বাচ্চা নিয়ে যাচ্ছেন হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে। রাস্তার এমন অস্থার কারণে কোলে থাকা শিশুটির বেশ কষ্ট হচ্ছে। তার দাবি, এই সড়কটি দ্রুত মেরামত করা হোক। এমন অবস্থায় পড়ে থাকলে শিশু ও বৃদ্ধদের ভোগান্তি আরো বাড়তেই থাকবে।

এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা জানিয়েছেন, মহাসড়কের ৬০ কিলোমিটারে প্রশস্তকরণের কাজ চলমান। আগের চেয়ে ৬ ফুট বাড়িয়ে ২৪ ফুট চওড়া করা হচ্ছে। ৭৮ দশমিক ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এই কাজ অক্টোবর মাসের মধ্যে সম্পন্ন করার নির্দেশ রয়েছে। তবে বৃষ্টির কারণে এর বিলম্ব হতে পারে। তারপরও ঠিকাদারের দ্বারা যেসব স্থানে গর্ত ও খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে তা যান চলাচলের জন্য উপযুক্ত করার কাজ করছেন।

তিনি আরো জানিয়েছেন, বৃষ্টির কারণে তারা বিটুমিনের কাজ করতে পারছেন না, এটা মন্ত্রণালয় থেকেও নিষেধ রয়েছে। তবে তাদের কাজের মান নয়; সড়ক খারাপ হওয়ার নেপথ্যে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাই দায়ী। যেমন-মহাসড়কের দুই পাশে গাছ থাকায় পানি পড়ে সমস্যা তৈরি করে। এ ছাড়া সড়কের পাশে গড়ে ওঠা বাজারে পানি নিষ্কাশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সড়কের ক্ষতি হয়। এ ছাড়াও বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক সাড়ে ২২ টন লোড বহন করার উপযোগী। সেখানে পাথরবাহী ৪৪ টন ট্রাক তিনি চলতে দেখেছেন। এতে করেও সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ভাড়ি যান চলাচলের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের নজরদারীর প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন এই কর্মকর্তা।

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, কোরবানীর ঈদের আগেই মহাসড়কের খারাপ অংশ মেরামত করে যান চলাচলের উপযুক্ত করা হবে।

(দ্য রিপোর্ট/জেডটি/আগস্ট ২০, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশেষ সংবাদ এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ সংবাদ - এর সব খবর