thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১,  ২১ জমাদিউস সানি 1446

নির্মাণ প্রকল্পের অর্থ লুটপাট

জোয়ারে বাঁধ ভেঙে ভাসে হাজারো মানুষ

২০১৭ আগস্ট ০৫ ১৮:৪৪:১৯
জোয়ারে বাঁধ ভেঙে ভাসে হাজারো মানুষ

কাজী সাঈদ, কুয়াকাটা : পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর ইউনিয়নের নিজামপুর এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সিডর-আইলায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই থেকে গণমাধ্যমে একের পর এক সংবাদ প্রকাশিত হতে থাকে। সরকার কয়েকদফা মেরামতের উদ্যোগ গ্রহণ করে। কিন্তু সরকারের এসব উদ্যোগ ভেস্তে যায় শুধু লুটপাটের কারণে।

এখানকার সাত গ্রামের মানুষ ভাসছে জোয়ার-ভাটার পানিতে। সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে পোহাতে ক্লান্ত এখানকার মানুষগুলো এখন আর গণমাধ্যমের সাথেও কথা বলতে চায় না। তারা বলেন, ‘মোরা ভাসি জোয়ার ভাটায় আর আপনারা খালি ছবি তুলেন, কি অইবো আপনাদের সঙ্গে কথা বলে?’

জানা গেছে, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ মেরামত ও নির্মাণ প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা লোপাট করা হচ্ছে। উপকূলীয় এলাকার হাজার হাজার মানুষ এখনও পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এসব এলাকার কৃষিকাজ, গবাদি পশু পালনসহ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়ে পড়েছে। অথচ ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর দাতা সংস্থা ও সরকারের উদ্যোগে মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষার্থে ক্ষতিগ্রস্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ মেরামত ও নির্মাণ প্রকল্পের শত কোটি টাকার কাজ বাস্তবায়ন করা হয় কলাপাড়া-রাঙ্গাবালীর উপকূলীয় এলাকায়। পাউবোর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ না করেই প্রকল্পের সব টাকা পেতে তুলে নেওয়ায় সুফল পায়নি সাগরপাড়ের মানুষ। সদ্য বিলুপ্ত সেই গঙ্গামতি এন্টারপ্রাইজসহ কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে কাজগুলো অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসবে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে মহিপুর থানার সদর ইউনিয়নের নিজামপুর, সুধীরপুর, কমরপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের প্রায় ১৫ কিলোমিটার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ বিধ্বস্ত হয়। সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত এসব বেড়িবাঁধের মেরামত ও র্নিমাণকাজ কয়েক দফা শেষ হলেও প্রকল্পের নির্দেশনা না মেনে ও নিম্নমানের উপকরণ সামগ্রী ব্যবহার করায় উপকূলীয় এলাকার অন্তত ২০ হাজার মানুষ এর কোনো সুফল পায়নি। সামান্য জ্বলোচ্ছ্বাস ও অস্বাভাবিক জোয়ারে তারা এখনো পানিবন্দি হয়ে ছুটে আশ্রয়কেন্দ্রে। কেউ কেউ আবার এলাকা ছেড়ে মহিপুর-আলীপুর ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে লবণ পানি প্রবেশ করে ফসলের জমি নষ্ট হচ্ছে ও কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে। দেখা দিয়েছে, গোখাদ্য সংকট। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। কর্মহীন হয়ে পড়েছে এ সব এলাকার কর্মজীবী মানুষ। জলাবদ্ধতায় চাষাবাদ বন্ধ থাকায় অনেক পরিবারের দিন কাটছে অর্ধাহারে, অনাহারে। এমনকি এসব বানভাসী মানুষ পাচ্ছে না কোনো ধরনের সাহায্য। আর যারা দাতা সংস্থা ও সরকারের উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ মেরামত ও নির্মাণ প্রকল্পের শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করল তারা কেউ দেশে আবার কেউবা বিদেশে অবস্থান করে বিলাসী জীবনযাপন করছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বার বার ক্ষতিগ্রস্ত সাগরতীরের হাজার হাজার মানুষ প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছেন কলাপাড়া-রাঙ্গাবালীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ মেরামত ও নির্মাণ প্রকল্পের কাজের তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও পাউবোর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে।

মহিপুরের স্থানীয় বাসিন্দা জাকির হোসেন জানান, স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের একমাত্র পথ বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি দিনদিন কমে যাচ্ছে।

ষাটোর্ধ্ব আবুল হাশেম জানান, বাঁধ বিধ্বস্ত তার বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন তিনি অন্যের বাড়ির সামনে আশ্রয় নিয়ে থাকছেন।

নিজামপুর গ্রামের করিমন বিবি জানান, জোয়ারের সময় রান্না হয় না। ফলে অনেক সময় তাদের দিন কাটে অনাহারে। এমনকি রাতের জোয়ারের সময় তাদের নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। ছোট ছেলে-মেয়েদের পানিতে ডুবে যাওয়ার শঙ্কায় দিন কাটছে তাদের।

নিজামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া জানায়, ‘একটু বড়রা স্কুলে যেতে পারলেও ছোটরা অনেকেই স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। সামনে সমাপনী পরীক্ষা। তাই বাধ্য হয়ে তাকে স্কুলে যেতে হয়। প্রতিদিন ভিজে স্কুলে যেতে হয় আর ফিরতে হয়। অনেক সময় বই-খাতা ভিজে যায়।’

মহিপুর থানা যুবলীগের আহবায়ক এএম মিজানুর রহমান বুলেট জানান, এলাকার অভ্যন্তরীণ অনেক সড়ক নষ্ট হয়ে গেছে। জোয়ারের সময় মসজিদগুলো তলিয়ে যায়। কোন মানুষ জোয়ারের সময় মারা গেলে তাকে ভাটা ছাড়া দাফন করা যায় না। এসব এলাকার অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে অন্য এলাকায় গিয়ে বসবাস করছে।

মহিপুর প্রেস ক্লাবের সম্পাদক মনিরুল ইসলাম জানান, স্থায়ী বাঁধ র্নিমাণের আশ্বাস থাকলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন নেই। আশ্বাস নয় কাজের বাস্তব প্রতিফলন চায় ভোগান্তির স্বীকার এসব এলাকার বানভাসী মানুষ। বাঁধ বিধ্বস্ত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ বিবেচনায় জরুরি ব্যবস্থা নেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এমন প্রত্যাশা তার মত সকল এলাকাবাসীর।

পাউবোর কলাপাড়া অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলেন, জরুরি ভিত্তিতে ইতোপূর্বে বেশ কয়েকবার বেরিবাঁধ মেরামত করা হয়েছে। ওখানে দরকার এখন স্থায়ী বেরিবাঁধ নির্মাণ। প্রকল্প প্রস্তাবনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পেলে স্থায়ী বেরিবাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে।

(দ্য রিপোর্ট/এপি/আগস্ট ০৫, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর