thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১০ শাওয়াল 1445

উত্তরখানে মা-মেয়েকে শ্বাসরোধে, ছেলেকে গলা কেটে হত্যা

২০১৯ মে ১৩ ১৬:০১:৩৯
উত্তরখানে মা-মেয়েকে শ্বাসরোধে, ছেলেকে গলা কেটে হত্যা

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : রাজধানীর উত্তরখানের ময়নারটেক এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া মা-মেয়ে ও ছেলের মরদেহের ময়নাতদন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) সম্পন্ন হয়েছে।

ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার (১৩ মে) দুপুরে ঢামেকের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক সোহেল মাহমুদ জানিয়েছেন, ওই তিনজনকে হত্যা করা হয়েছে। অন্তত ৭২ ঘণ্টা আগে তাদের মৃত্যু হয়।

এই চিকিৎসক জানান, মা জাহানারা বেগমের গলায় ও পেটে ছুরিকাঘাতের হালকা দাগ রয়েছে। তবে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া মেয়ে তাসফিয়া সুলতানা মিমকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে হত্যা করা হয়েছে। জাহানারা বেগমের ছেলে মুহিম হাসানকে হত্যা করা হয়েছে গলা কেটে।

পুলিশ যখন লাশ উদ্ধার করে তখন কক্ষটি তালাবদ্ধ অবস্থায় ছিল সাংবাদিকরা জানালে ফরেনসিক বিভাগের এই চিকিৎসক বলেন, ‘ওই বাসার লকটি কোন অবস্থায় ছিল সেটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানতে পারব। এছাড়া মরদেহ তিনটির ভিসেরা আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। ভিসেরা প্রতিবেদন এলে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।’

ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে ৭২ ঘণ্টা আগে তাদের হত্যা করা হয়েছে। সুতরাং হত্যার অনেক আলামতই এই সময়ের মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। তারপরও আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি ওই তিনজনকে হত্যা করা হয়েছে।’

এর আগে রোববার রাতে (১২ মে) উত্তরখানের ময়নারটেক এলাকার একটি বাসা থেকে মা জাহানার বেগম মুক্তা (৫০), মেয়ে তাসফিয়া সুলতানা মিম (২০) ও ছেলে মুহিব হাসানের (৩০) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

লাশ উদ্ধারের পর উত্তরা জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার হাফিজুর রহমান রিয়েল জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দরজার ছিটকিনি ভেঙে তিনজনের লাশ উদ্ধার করে। ভেতরের কক্ষ থেকে একটি চিরকুট মিলেছে। চিরকুটটি মোবাইল ফোন দিয়ে চাপা দেওয়া ছিল। তাতে লেখা আছে, ‘আমাদের মৃত্যুর জন্য ভাগ্য ও আমাদের আত্মীয়-স্বজন দায়ী।’

উত্তরখানের ওই বাসাটি মা-মেয়ে-ছেলে দেড় মাস আগে ভাড়া নিয়েছিলেন। ছেলে মুহিম হাসান বেকার ছিলেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ৪০ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষাতেও অংশ নেন তিনি।

পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করে, ওই তিনজন আত্মহত্যা করেছেন। তবে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানালেন, তিনজনকে হত্যা করা হয়েছে।

এদিকে স্বজনদেরও ধারণা তারা আত্মহত্যা করতে পারেন। কেউ তাদের খুন করতে পারে বিষয়টি ভাবতে পারছেন না তারা।

স্বজনরা জানিয়েছেন, কারও সঙ্গে তাদের কোনো বিরোধও ছিল না। অতিরিক্ত হতাশা থেকে ওই তিনজন আত্মহত্যা করতে পারেন বলে স্বজনদের ধারণা। সোমবার (১৪ মে) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে কথা হয় স্বজনদের সঙ্গে।

স্বজনরা জানান, মৃত জাহানারার বাড়ি কুমিল্লার তিতাস উপজেলার বাড়ি কান্দি গ্রামে। আর তার স্বামী ইকবাল হোসেনের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা জগন্নাথপুর গ্রামে। ইকবাল হোসেন বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডে চাকরি করতেন। তিনবছর আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। এরপরে ওই দুই সন্তান এবং তাদের মা ঢাকার কাফরুলে তার বোনের বাসার পাশে থাকতেন। আড়াই মাস আগে তারা তিনজনই ভৈরব চলে যান। সেখান থেকে ঢাকায় এসে উত্তরখানে বাসা ভাড়া নেন।

মৃত মুহিবের চাচা মোহাম্মদ হাসান উল্লাহ বলেন, ‘আমার ভাবী গৃহিণী ছিলেন। ছেলেও ছিল বেকার, আর মেয়েটা ছিল শারীরিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। আমার ভাই সরকারি কর্মচারী ছিলেন। ভাইয়ের মৃত্যুর পর পেনশনের টাকায় তাদের খরচ চলছিল। এছাড়া আত্মীয়-স্বজনরাও সাধ্যমতো পাশে দাঁড়াতেন। তাদের তেমন কোনো আর্থিক সংকট ছিল না।’

হাসান উল্লাহ বলেন, ‘মিমের বয়স ২০ বছর। তার ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিবারটি হতাশাগ্রস্ত ছিল। হতাশা থেকে তিনজনই আত্মহত্যা করতে পারে বলে আমাদের ধারণা।

(দ্য রিপেোর্ট/এনটি/মে ১৩, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

অপরাধ ও আইন এর সর্বশেষ খবর

অপরাধ ও আইন - এর সব খবর