thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ 24, ৫ চৈত্র ১৪৩০,  ৯ রমজান 1445

বরখাস্ত হচ্ছেন কাউন্সিলর সাঈদ

২০১৯ অক্টোবর ১৫ ১০:৩৭:০৫
বরখাস্ত হচ্ছেন কাউন্সিলর সাঈদ

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: একনাগাড়ে তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকার অভিযোগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর একেএম মমিনুল হক সাঈদকে বরখাস্তের প্রক্রিয়া চলছে। তার বিরুদ্ধে ক্যাসিনো-জুয়া ও দখলবাজিসহ নানা অভিযোগ উঠলেও তিনি বরখাস্ত হচ্ছেন বোর্ড সভায় অনুপস্থিতির দায়ে।

কিন্তু,এমন অভিযোগ করপোরেশনের আরও অন্তত ১৮জন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে রয়েছে, যারা অনুমতি ছাড়া একনাগাড়ে তিনটি থেকে ৮টি পর্যন্ত বোর্ড সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ৯জন ১০টি সভার বেশি অনুপস্থিত ছিলেন। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে ক্যাসিনো, মদ, জুয়া, দখলবাজি, চাঁদাবাজিসহ করপোরেশনের দায়িত্ব পালনেও অনীহার অভিযোগ রয়েছে। কেউ কেউ সরকারের অনুমোদন না নিয়ে একাধিকবার বিদেশেও গেছেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশন থেকে মন্ত্রণালয়ে কোনও অভিযোগ দেওয়া হয়নি। ফলে মন্ত্রণালয় থেকেও কোনও ব্যবস্থা নিতে পারছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে।

জানা গেছে, ডিএসসিসির ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর একেএম মমিনুল হক সাঈদ করপোরেশনে অনুষ্ঠিত ১৯টি সভার মধ্যে মাত্র ছয়টি বোর্ড সভায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, সপ্তম থেকে দশম, ১২তম থেকে ১৭তম পর্যন্ত মোট ১৩টি সভায় উপস্থিত ছিলেন না। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি মন্ত্রণালয়ের পূর্ব অনুমতি ছাড়া অনেকবার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। এজন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত ২৫ জুন ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবরে চিঠি দিয়েছেন। এরপর ১ জুলাই মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আ ন ম ফয়জুল হক তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। সাত কর্মদিবসের মধ্যে তাকে এ নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়।

মন্ত্রণালয়ের নোটিশের জবাবে কাউন্সিলর সাঈদ জানান, একনাগাড়ে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি সঠিক নয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্ত। শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে যে কয়টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন, সেগুলো নিতান্তই অনিচ্ছাকৃত। এরপর তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ডিএসসিসির সুপারিশে হজ ও চিকিৎসার জন্য কাউন্সিলর সাঈদকে ২৫ দিনের ছুটি দেয় মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অভিযোগের পর বিষয়টি তদন্ত করেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের পরিচালক (স্থানীয় সরকার) এম ইদ্রিস সিদ্দিকী। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে তিনি আইন অনুযায়ী তাকে সাময়িক বরখাস্তের সুপারিশ করে মন্ত্রণালয়ে তার প্রতিবেদনটি জমা দিয়েছেন। খুব শিগগিরই কাউন্সিলর সাঈদকে বরখাস্ত করা হতে পারে।

২০১৫ সালের ২৮ মার্চ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে নির্বাচনের পর ডিএসসিসিতে মোট ১৯টি সভা অনুষ্ঠিত হয়।উল্লিখিত কাউন্সিলররা তাতে একাধারে তিন থেকে আটটি পর্যন্ত বোর্ড সভায় অনুপস্থিত থেকেছেন। কেউ কেউ ১৪-১৫টি সভায় অনুপস্থিত রয়েছেন। তাদের কয়েকজন দুই-একবার অনুমতি নিলেও বাকিরা অনুপস্থিত ছিলেন পূর্বানুমতিও ছাড়াই। এরইমধ্যে একাধারে করপোরেশন সভায় অনুপস্থিত কাউন্সিলরদের একটি তালিকা করেছে ডিএসসিসি। তবে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ওই তালিকাটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা থাকলেও তা করা হয়নি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে,ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পুরনো ৫৭টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের মধ্যে ১৮ জন কাউন্সিলর একনাগাড়ে ৩টি বোর্ড সর্ভার বেশি অনুপস্থিত ছিলেন। তারা হচ্ছেন- ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মাকসুদ হোসেন (মহসিন), ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. গোলাম হোসেন, ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আশ্রাফুজ্জামান, ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর একেএম মমিনুল হক সাঈদ, ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিল গোলাম আশরাফ তালুকদার, ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোস্তফা জামান পপি, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জসীম উদ্দিন আহমেদ, ২২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. তারিকুল ইসলাম সজীব, ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আনোয়ার পারভেজ বাদল,৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. হাসান (পিল্লু), ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. বিল্লাল শাহ, ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আউয়াল হোসেন, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জু, ৪০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মকবুল ইসলাম খান টিপু, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আরিফ হোসেন, ৫২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ নাছিম মিয়া,সংরক্ষিত আসনে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাশিদা পারভীন (মণি ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোসাম্মৎ শিউলী হোসেন।

এদের মধ্যে ১০টি সভার বেশি অনুপস্থিত ছিলেন এমন কাউন্সিলর রয়েছেন ৯ জন। তারা হচ্ছেন- ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আশরাফুজ্জামান, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর একেএম মমিনুল হক সাঈদ, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গোলাম আশরাফ তালুকদার, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোস্তফা জামান (পপি), ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. তরিকুল ইসলাম সজীব, ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. হাসান, ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. বিল্লাল শাহ, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জু ও সংরক্ষিত আসনে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাশিদা পারভীন (মণি)।

স্থানীয় সরকারের সিটি করপোরেশন আইনে বলা হয়েছে, মেয়র অথবা কাউন্সিলর তার স্বীয় পদ হতে অপসারণযোগ্য হবেন, ‘যদি তিনি যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতিরেকে সিটি করপোরেশনের পর পর তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকেন।’ দেখা যাচ্ছে, উল্লিখিত কাউন্সিলররা একাধারে তিনটি থেকে শুরু করে আটটি সভা পর্যন্ত অনুপস্থিত ছিলেন। ১৯টি সভার মধ্যে কারও ১৫টি সভায় অনুপস্থিতি রয়েছে। কিন্তু ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর একেএম মমিনুল হক সাঈদ ছাড়া এখনও আর কারও বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি।

এছাড়া, বিদেশ ভ্রমণের বিষয়ে ২০১১ সালের ১৯ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জারি করা পরিপত্রে বলা হয়েছে, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম স্থানীয় সরকার পরিষদ/পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোর সদস্যরা, সিটি করপোরেশনের কমিশনাররা এবং পৌরসভার মেয়ররা বিদেশ ভ্রমণে স্থানীয় সরকার বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রীর অনুমোদন নেবেন।’ কিন্তু একাধিক কাউন্সিলররা বিদেশে গেলেও মন্ত্রণালয়ের কোনও অনুমোদন নেননি।

বিষয়টি সম্পর্কে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন,‘যদি কোনও কাউন্সিলর একাধারে করপোরেশনের তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকেন, তাহলে প্রথমে তাকে নোটিশ করতে হবে। পরে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিতে হবে। মন্ত্রণালয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এ কারণে তাদের অপসারণও করা যাবে। কিন্তু কেন তা করছে না সেটি হতাশা জনক।’

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, ‘বোর্ড সভায় অনুপস্থিত থাকার জন্য আমরা একজন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে লিখেছিলাম। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বাকিদেরকে নানাভাবে সতর্ক করা হয়েছে। আর কেউ যাতে অনুমতি ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ করতে না পারেন সেজন্য মন্ত্রণালয় ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। মন্ত্রণালয় যদি অনুপস্থিত কাউন্সিলরদের তালিকা চায় তাহলে আমরা দিয়ে দেবো।’

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, মেয়র মহোদয়ের পক্ষ থেকে বিষয়টি আমাদেরকে লিখিতভাবে জানাতে হবে। যার বিরুদ্ধে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে আমরা তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা শুধু কন্ট্রোলিং অথরিটি। উনারা যদি আমাদেরকে জানান আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো। কিন্তু সেখান থেকে আমাদেরকে জানানো হচ্ছে না।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম দেশের বাইরে থাকায় বিষয়টি সম্পর্কে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/অক্টোবর ১৫,২০১৯)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর

রাজনীতি - এর সব খবর