thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ 24, ১৪ চৈত্র ১৪৩০,  ১৮ রমজান 1445

বাইশ গজে মাশরাফির ১৮ বছর

২০১৯ নভেম্বর ০৮ ১১:১৫:৫০
বাইশ গজে মাশরাফির ১৮ বছর

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ছেড়েছেন আড়াই বছর আগে। হাঁটুর সমর্থন পান না বলে টেস্টও খেলা হয় না দশ বছর ধরে। নিকট ভবিষ্যতেও সম্ভাবনা নেই সাদা পোশাকটি গায়ে জড়ানোর। তবে আপন মহিমায় খেলে যাচ্ছেন পঞ্চাশ ওভারের ওয়ানডে ফরম্যাটে। এই ফরম্যাটেও খুব বেশিদিন হয়তো আর দেখা যাবে না বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ও তারকা পেসার মাশরাফি বিন মর্তুজাকে।

সবধরনের ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর আগেই অবশ্য দারুণ এক অর্জন যুক্ত হলো মাশরাফির ক্যারিয়ারে। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৮ বছর পার করলেন মাশরাফি। ২০০১ সালে আজকের তারিখেই (৮ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছিল মাশরাফির কলার উঁচিয়ে দৌড়। যা চলছে বিগত ১৮ বছর ধরে।

ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে সুযোগ পেয়ে যান ১৮ বছর বয়সী মাশরাফি। বৃষ্টির কল্যাণে সে ম্যাচেই প্রথমবারের মতো টেস্ট ড্র করার স্বাদ পায় বাংলাদেশ। তবে এরই মাঝে জিম্বাবুয়ের একমাত্র ইনিংসে নিজের সামর্থ্যের জানান দেন তরুণ মাশরাফি। একাই নেন ৪টি উইকেট।

মাশরাফির হার না মানা চরিত্রের প্রমাণ মেলে চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে, সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে। স্বাগতিক ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ম্যাচ জয়ের জন্য মাত্র ১১ রানের লক্ষ্য পায় জিম্বাবুয়ে। এত অল্প পুঁজিতে বোলিং করতে নেমে ইনিংসের প্রথম ওভারেই ডিওন ইব্রাহিমকে সোজা বোল্ড করেন মাশরাফি, পরের বলে ফেরান অধিনায়ক স্টুয়ার্ট কার্লিসলিকেও। তখনও কোনো রানই যোগ হয়নি জিম্বাবুয়ের ইনিংসে। এভাবেই শুরু হয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাশরাফির পথচলা।

সেই থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সেরা পেসার তথা অন্যতম সেরা বোলারে পরিণত করেছেন নিজেকে। খেলেছেন ৪টি বিশ্বকাপ, নেতৃত্ব দিয়েছেন ২টিতে। তার অধীনেই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের (২০১৫ আসরে) কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ, উঠেছিল চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালেও। পরিসংখ্যানের হিসেবে মাশরাফিই বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়ক।

শুধু অধিনায়ক হিসেবেই কেন? বোলার হিসেবেও কম যাননি মাশরাফি। আজ থেকে ১৮ বছর আগে কলার উঁচিয়ে শুরু করেছিলেন যেই দৌড়, তাতে বাইশ গজে যেমন কাঁপন ধরিয়েছেন প্রতিপক্ষের বুকে, তেমনি লাখো বাংলাদেশি তরুণকে শিখিয়েছেন কঠিন মুহূর্তে কলার উঁচিয়ে হার না মানার মন্ত্র।

২০০৪ সালের ভারত বধ, একই বছর রাহুল দ্রাবিড়কে বোকা বানিয়ে বোল্ড করা, ২০০৫ সালে কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো, ২০০৬ সালে বছরের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী, ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানো থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত মাশরাফির হাত থেকে বেরিয়েছে কোটি বাঙালিকে খুশি করার মতো অসংখ্য সব স্পেল। তার কলার উঁচিয়ে করা প্রথম স্পেলটিই ছিলো বাংলাদেশের জয়-পরাজয় নির্ধারণের অন্যতম উপাদান।

ক্যারিয়ারের শুরুতে ছিলেন পুরোপুরি ফাস্ট বোলার। সমসাময়িক অন্যান্য বোলাররা যখন ১৩৫ কিমি গতিতে বল করেই সন্তুষ্ট থাকতেন, তখন মাশরাফি নিয়মিতই ছুড়তেন ১৪০+ কিমি গতির গোলা। যে কারণে তার নামই হয়ে যায় নড়াইল এক্সপ্রেস। কিন্তু দফায় দফায় ইনজুরির কারণে আপোষ করতে হয়েছে গতির সঙ্গে। এখন আর তেড়েফুঁড়ে করতে পারেন না প্রথম স্পেল। তবে মাথা খাটিয়ে ব্যাটসম্যানদের বোকা বানানোর ক্ষেত্রে জুরি নেই মাশরাফির।

সবমিলিয়েই পার করেছেন ক্যারিয়ারের ১৮টি বছর। দেশের জার্সি গায়ে খেলেছেন ৩৬ টেস্ট, ৫৪ টি-টোয়েন্টি ও ২১৭টি ওয়ানডে ম্যাচ। ইনজুরির কারণে টেস্ট থেকে সরে দাঁড়ানোর আগে খেলা ৩৬ টেস্টে শিকার করেছেন ৭৮টি উইকেট। যা কি না এখনও বাংলাদেশের পেসারদের মধ্যে সর্বোচ্চ। এছাড়া ব্যাট হাতেও ৩ ফিফটিতে করেছেন ৭৯৭ রান।

সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ওয়ানডে ফরম্যাট খেলে যাচ্ছেন এখনও। এই ফরম্যাটে তার চেয়ে বেশি উইকেট নেই আর কোনো বাংলাদেশি বোলারের। দেশের ইতিহাসের সেরা বোলিং ফিগার ৬/২৬ সহ ওয়ানডেতে মাশরাফির শিকার ২৬৬টি উইকেট। ব্যাট হাতে করেছেন ১৭৮৬ রান।

খানিক বিবর্ণ ছিলেন টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। অবসরের আগে খেলা ৫৪ ম্যাচে নিয়েছেন ৪২টি উইকেট, ব্যাট হাতে করেছেন ৩৭৭ রান।

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

খেলা এর সর্বশেষ খবর

খেলা - এর সব খবর