thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল 24, ৫ বৈশাখ ১৪৩১,  ১০ শাওয়াল 1445

প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বিদেশ যেতে চান খালেদা জিয়া!

২০২০ ফেব্রুয়ারি ১৪ ২০:৩৮:৩২
প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বিদেশ যেতে চান খালেদা জিয়া!

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: প্যারোলে মুক্তি নিয়ে কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা করাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তার ভাই-বোনেরা। এজন্য বেগম জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর জন্য মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ চেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে প্রথম লিখিত আবেদন করেছে তার পরিবার। কিন্তু বেগম জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে দলটির পক্ষ থেকে এতদিন কোন দৃশ্যমান প্রচেষ্টা করতে দেখা যায়নি।

তবে এবার বিএনপি চেয়ারপারসনকে প্যারোলে মুক্তি দিতে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে ফোন করে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু এরপরও রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন উঠেছে যে, বেগম খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাবেন? আর যদি বেগম খালেদা জিয়া মুক্তির আবেদন করেন তাহলে সরকার কি সেটা গ্রহণ করবে?

বেগম জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করার পর থেকে বিএনপির নেতাদের মধ্যে এসব প্রশ্ন উঠেছে বলে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি বিএসএমএমইউতে বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন তার স্বজনেরা। ওইদিন দুই বছর ধরে কারাগারে আবদ্ধ থাকা খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর জন্য মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ চেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে প্রথম লিখিত আবেদন করেছে তার পরিবার।

জানা গেছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর লিখিত আবেদনে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই ইঞ্জিনিয়ার শামীম ইস্কান্দার লিখেছেন, খালেদা জিয়ার দ্রুত অবনতিশীল স্বাস্থ্যের পরিপ্রেক্ষিতে যেকোনো অপূরণীয় ক্ষতি এড়াতে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত বিদেশী হাসপাতালে চিকিৎসা প্রয়োজন। খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে ব্যয় বহন করে এবং তাদের দায়িত্বে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতাও চাওয়া হয়েছে আবেদনে।

এবিষয়ে বেগম জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা প্রতিনিয়ত খারাপ হচ্ছে। এজন্য তারা বিদেশে চিকিৎসার জন্য প্যারোলে হলেও তার মুক্তি চান। আমরা চাচ্ছি সরকার বিবেচনা করুক। যেভাবেই হোক, তাকে বিদেশে নেয়ার জন্য আমাদের পারমিশন দিক। প্যারোলে দিলেও দিতে পারে।

তবে বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির আবেদন করতে হবে কারাগারের জেলার বরাবর। পরে জেলার সেই আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। সেখান থেকে আবেদনটি যাবে আদালতে। আর এই আবেদনে অবশ্যই বেগম খালেদা জিয়ার স্বাক্ষর থাকতে হবে। তাই এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, বেগম জিয়া কি প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাবেন?

এবিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। এ ব্যাপারে তারা লিখিত কোনো আবেদন পাননি। তারা (বিএনপি) শুধু মুখে মুখেই বলছেন। কিন্তু লিখিত কোনো আবেদন করেননি। এটা দুর্নীতির মামলা। রাজনৈতিক মামলা হলে সরকার বিবেচনা করতে পারতো।

জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের কথা পরিষ্কার, ম্যাডামের মুক্তির দাবিটা নিয়ে আমরা আজকে নয়, গত ২ বছর ধরেই আমরা কোর্টে যাচ্ছি, কথা বলছি, রাস্তায় নামছি, চিৎকার করছি। সারা দেশবাসী এই মুহূর্তে ম্যাডামের মুক্তির দাবি করছে। একই সঙ্গে আজকে তার (খালেদা জিয়া) পরিবারও করছে। আর কয়েকদিন আগেই তারা (পরিবার) লিখিতভাবে বিএসএমএমইউ‘র ভাইস চ্যান্সেলরকে তার এডভান্স টিট্রমেন্টের জন্য তারা চিঠি দিয়েছেন। আর বাকী প্রশ্নগুলো সব অবান্তর থাকে, এগুলো আর প্রশ্ন থাকে না।

এবিষয়ে সেলিমা ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়ার সম্মতি থাকবে। কারণ তার অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছে যে, বাম হাত সম্পূর্ণ বেঁকে গেছে, ডান হাতেরও খারাপ অবস্থা, চোখ দিয়েও অনবরত পানি পড়ছে, পায়ে কোনো সাপোর্ট রাখতে পারছে না। এই অবস্থায় একটা মানুষতো চিকিৎসার জন্য যেখানেই হোক যেতে চাইবে।

এদিকে খালেদা জিয়ার প্যারোলের মুক্তির বিষয়ে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এবিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে আমার সঙ্গে ফখরুল ইসলাম আলমগীরের টেলিফোনে কথা হয়েছে। তিনি আমাকে অনুরোধ করেছেন, আমি যেন প্রধানমন্ত্রীকে খালেদা জিয়ার প্যারোলের বিষয়ে বলি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, মেডিকেল বোর্ড যে রিপোর্ট দেবে তা আদালতের কাছে পৌঁছাতে হবে। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে বিএনপির নেতারা যেভাবে বলেন, দায়িত্বরত ডাক্তাররা সেভাবে বলেন না। আর খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সরকার এতটা অমানবিক আচরণ করবে না।

জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, উনি (ওবায়দুল কাদের) কী বলেছেন। এটা উনাকে জিজ্ঞাসা করলে, উনাকে বললে বেটার হবে। এখন প্রশ্ন একটাই যে, দেশনেত্রীকে এই মুহূর্তে তার শরীরের যে অবস্থা, গুরুতর অবনতি হয়েছে তার ট্রিটমেন্টের জন্য তাকে বাইরে বিদেশে পাঠানোর জন্য তার পরিবার থেকেই আপনার আবেদন জানানো হয়েছে। সরকারের এখন আর এগুলো নিয়ে বা অন্য কারো এগুলো নিয়ে অন্যকোনো রাজনীতি না করে সম্পূর্ণ মানবিক কারণে তাকে মুক্তি দেয়াটা অত্যন্ত জরুরি বলে আমি মনে করি।

প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ এবং চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার ১৭ বছরের সাজা হয়েছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার জেল খাটার দুই বছর পুরো হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১০ মাস ধরে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ফেব্রুয়ারি ১৪,২০২০)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর

রাজনীতি - এর সব খবর