thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ 24, ৫ চৈত্র ১৪৩০,  ৯ রমজান 1445

আল্লাহর রাস্তায় ওয়াকফ করা বিশ্বের বৃহত্তম খেজুর বাগানের মালিক মারা গেছেন

২০২০ জুলাই ০৪ ১৪:৩৭:১৮
আল্লাহর রাস্তায় ওয়াকফ করা বিশ্বের বৃহত্তম খেজুর বাগানের মালিক মারা গেছেন

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: সৌদি আরবের অনন্য দানশীল ব্যক্তি শেখ সুলায়মান আল রাজী আর বেঁচে নেই। দু'হাতে তার দানের কথা কিংবদন্তি হয়ে আছে। বিশ্বের বড় ইসলামি ব্যাংক ও বড় খেজুর বাগানের মালিক ছিলেন তিনি। পুরো রমজান মাসে এ বাগানের খেজুর দিয়েই মক্কা মদিনার রোজাদারদের ইফতার করানো হয়।

সৌদি নিউজ এজেন্সি এসপিএ তাদের এক প্রতিবেদনে এ কথা জানায়। গত মঙ্গলবার (৩০ জুন) তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৯৭ বছর।

পরিশ্রম কিভাবে একেবারে শূন্য থেকে তাকে মাল্টি বিলিয়নিয়ার তথা বিশ্বের ১২০তম ধনী মানুষে পরিণত করেছে এবং দু'হাতে দান করে তিনি কেমন আনন্দ পেতেন তা এক অনুপম আশা জাগানিয়া গল্প।

সুলায়মান আল রাজী ছিলেন সৌদির এক অতি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। শৈশবে স্কুলে পড়ার সময় এক শিক্ষা সফরে যেতে পরিবারের কাছে কান্নাকাটি করেও এক রিয়াল জোগাড় করতে পারেননি। কারণ এক রিয়াল দেয়ার মতো সামর্থ্য তার পরিবারের তখন ছিল না। শিক্ষা সফরের একদিন আগে ফিলিস্তিনি ক্লাশ শিক্ষক স্কুলে প্রশ্নের সঠিক জবাব দেয়ায় তাকে এক রিয়াল উপহার দেন। মুহূর্তেই তার প্রবল কান্না পরম আনন্দে পরিণত হয়। তিনি সহপাঠীদের সাথে শিক্ষা সফরে যেতে সুযোগ পান।

কর্মজীবনে যোগদানের জন্য ৯ বছর বয়সে তিনি স্কুল ছেড়ে দেন। প্রথমেই বন্দরে মাল ওঠানো নামানো অর্থাৎ পোর্টারের কাজ করেন। এরপর দিনমজুর, শ্রমিক, বাবুর্চি, ওয়েটার, দোকান কর্মচারীর কাজ করেন। উপার্জনের অর্থ দিয়ে মুদি দোকান দেন। বিয়ের খরচের জন্য দোকান বিক্রি করে দেন। তারপর ভাইয়ের সাথে একত্রে ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৭০ সালে ভাইয়ের কাছ থেকে আলাদা হয়ে একা কারেন্সি ট্রেডিং (মুদ্রা বিনিময়) ব্যবসা শুরু করেন। প্রথমে সৌদি আরবে ৩০টি শাখা এবং পরে মিশর, লেবানন ও জিসিসি দেশগুলোতেও শাখা খুলেন। বদলে যায় ভাগ্যের চাকা। প্রতিষ্ঠা করেন আল রাজী ব্যাংক ও আল রাজী ইসলামি গ্রুপসহ আরো অন্য ব্যবসা।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় খেজুর বাগানটি তার। এ বাগানে ২ লাখ খেজুর গাছ আছে। মধ্য সৌদি আরবের আল কাসিম প্রদেশে অবস্থিত এ বাগানের আয়তন প্রায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর। এ বাগানে ৪৫ ধরনের খেজুর আবাদ হয়। ১৯৯০ সালে এখানে গম এবং তরমুজও করা হতো। কিন্তু ১৯৯৩ সালের পর শুধু খেজুর ফলানো হয়। বাগানটি গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে স্থান করে নেয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে শেখ সুলায়মান আল রাজী এ বাগানটি আল্লাহর রাস্তায় পুরোপুরি ওয়াকফ করে দিয়ে দেন। রমজানে কাবা শরীফ ও মসজিদে নববী এবং অন্য মসজিদসমূহে এ বাগানের খেজুর দিয়েই ইফতার করানো হয়। মুসলিম দেশগুলোতে এ বাগানের খেজুরই উপহার হিসেবে পাঠানো হয়। এর আয় দরিদ্রদের জন্য ব্যয় করা হয়।

ফোর্বস সাময়িকীর মতে শেখ সুলায়মান আল রাজী পৃথিবীর ১২০তম ধনী ব্যক্তি। সৌদি রয়েল ফ্যামিলির বাইরে নিজের উপার্জনে একমাত্র করপোরেট বিলিয়নিয়ার। তার সম্পদের পরিমাণ ৭.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ২০ জন মানবিক সহায়তা প্রদানকারীর মধ্যে অন্যতম। আল রাজী ব্যাংকের ২০ শতাংশ অর্থ সৌদি দরিদ্র শিশুদের জন্য ব্যয় করা হয়। তিনি স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মসজিদ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তিনি তার সমুদয় সম্পদের দুই তৃতীয়াংশ চ্যারিটির জন্য দান করে গেছেন। বাকিটা ছেলেমেয়েদের মধ্যে বন্টন করে দেন।

মোটামুটি ধনী হওয়ার পরই সুলায়মান আল রাজীর মনে পড়ে তার সেই শিক্ষকের কথা। তিনি তাকে খুঁজে বের করেন। সাক্ষাৎ হলে তিনি দেখতে পান তার ফিলিস্তিনি শিক্ষক কর্মহীন এবং দরিদ্রের মধ্যে কষ্টে জীবন যাপন করছেন। তিনি তাকে তার পরিচয় দেন এবং শৈশবে এক রিয়ালের কথা স্মরণ করিয়ে দিলে শিক্ষক তাকে চিনতে পারেন। তিনি শিক্ষককে গাড়িতে উঠান এবং একটি বাগান বাড়িতে নিয়ে যান। তাকে গাড়িসহ বাগান বাড়ি উপহার দেন। সাথে দেন সারাজীবন চলার জন্য খরচের টাকা। আবেগ আপ্লুত শিক্ষক তাকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

কিন্তু সুলায়মান আল রাজী তার শিক্ষককে বলেন, ‘আপনি আজ খুশিতে কাঁদছেন। তারচেয়েও বেশি খুশি হয়েছিলাম আমি সেদিন, যেদিন আপনার কাছ থেকে এক রিয়াল উপহার পেয়েছিলাম। আমার জন্য সেই উপহারটা ছিল অনন্য। সেদিন আপনি বলেছিলেন, মানুষের মনে হাসি ফোটাও, তাদের কষ্টগুলো দূর করে দাও, আর এসবের প্রতিদান চাও মহানুভব রব আল্লাহর কাছে।’

শেখ সুলায়মন আল রাজীকে তার দানশীলতা ও দেশের উন্নয়নে অবদানের জন্য সৌদি আরবের বড় পুরস্কার বাদশা ফয়সাল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। মঙ্গলবার রিয়াদে আল রাজী মসজিদে জানাযা শেষে তাকে দাফন করা হয়।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০৪জুলাই, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

বিশ্ব এর সর্বশেষ খবর

বিশ্ব - এর সব খবর