thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল 24, ১০ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৪ শাওয়াল 1445

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড: ঘাতকেরা কে কোথায়?

২০২০ আগস্ট ১৫ ০৯:১৬:১৩
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড: ঘাতকেরা কে কোথায়?

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত পাঁচ খুনিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়৷ এরা হলেন কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান, কর্নেল (অব.) সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, লে. কর্নেল (অব.) মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), মেজর (অব.) এ কে বজলুল হুদা এবং মেজর (অব.) এ কে এম মহিউদ্দিন (আর্টিলারি)৷ এছাড়া পলাতক অবস্থায় খুনিদের একজন আবদুল আজিজ পাশা ২০০১ সালের ২ জুন জিম্বাবোয়েতে মারা গেছেন৷ এ বছর এপ্রিলে দুই দশকের বেশি সময় ভারতে পালিয়ে থাকার পর দেশে ফিরে ফাঁসিতে ঝুলতে হল বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদকে। এছাড়া রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন ভারতে আছে বলে এ বছর ভারতীয় গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত তার হদিস পাওয়া যায়নি।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এরপরে একই বছরের নভেম্বরে হত্যাকারীদের বাংলাদেশে থেকে থাইল্যান্ডে একটি প্লেনে করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে এই খুনীদের বিএনপি ও জিয়া সরকার পুরস্কিত করে বিভিন্ন দূতাবাস চাকরি দেয়। খুনীদের মধ্যে যারা বেঁচে আছে তাদের নিয়ে সর্বশেষ যে তথ্য জানা যায়:

রাশেদ চৌধুরী

রাশেদ চৌধুরী ১৯৬৯ সালে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। ১৯৭৬ সালে জেদ্দায় কূটনীতিক পদে যোগদান করেন। তিনি নাইরোবি, টোকিও, কুয়ালালামপুর ও ব্রাসিলিয়াতে বাংলাদেশ মিশনে কাজ করেছেন।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সময়ে তিনি ব্রাসিলিয়ায় কর্মরত ছিলেন। একই বছরের জুলাই মাসে তাকে ঢাকায় ফেরত আসার নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই সময় ব্রাসিলিয়ায় ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ইফতেখারুল করিম পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠিয়ে জানান, রাশেদ চৌধুরী সাও পাউলো থেকে সান ফ্রানসিসকো চলে গেছেন। ওই সময় থেকে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।

২০১৪ সালে দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ তাকে ফেরত চায়। এরপরের বছর ২০১৫ সালে বাংলাদেশ স্কাডেন আইনি প্রতিষ্ঠানকে তাকে ফেরত আনার জন্য নিয়োগ দেয়। বিখ্যাত আইনজীবী এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভূতপূর্ব লিগ্যাল কাউন্সিলর গ্রেগরি ক্রেইগ তাকে ফেরত আনার জন্য স্টেট ডিপার্টমেন্ট, জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

রাশেদ চৌধুরীর ফেরত দেওয়ার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিকে এক বৈঠকে ২০১৫ সালে অনুরোধ জানান। এরপর ২০১৭ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পরে এপ্রিল মাসে পররাষ্ট্র সচিব হোয়াইট হাউসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেন। তবে নতুন করে বঙ্গবন্ধু খুনের অন্যতম এ আসামির আশ্রয়ের বিষয়ে নড়েচড়ে বসেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি খুনি রাশেদের আশ্রয়ের মামলাটি নতুন করে পর্যালোচনা করতে শুরু করেছে।

গত মাসে মার্কিন সাময়িকী পলিটিকো এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে রাশেদের আশ্রয়ের সিদ্ধান্ত পর্যলোচনা করার জন্য নথি চেয়ে নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল বিল বার। বলা হচ্ছে, এই প্রক্রিয়ার শুরুর হওয়ায় শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়ের সুযোগ হারাতে পারে বঙ্গবন্ধুর এই খুনি। আর তা হলে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে। দেশে ফেরত আসলে দণ্ড কার্যকর করা হবে এ খুনির।

নূর চৌধুরী

নূর চৌধুরী ১৯৭৬ সালে ব্রাসিলিয়ায় বাংলাদেশ মিশনে তার কূটনীতিক জীবন শুরু করেন। তিনি আলজিরিয়া ও হংকংয়ে বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৯৬ সালে তাকে দেশে ফেরত আসার নির্দেশ দেওয়া হলে তিনি কানাডায় পালিয়ে যান।

২০০৪ সালে কানাডার অভিবাসন কোর্ট তার রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা প্রত্যাখ্যান করেন এবং তখন কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষ তার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাংলাদেশের দূতাবাসের কাছে হস্তান্তর করার সময়ে তাকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তাদের আগ্রহের কথা জানায়। ওই সময়ের বাংলাদেশ সরকারের অনাগ্রহের কারণে তাকে ফেরত আনার কাজটি করা সম্ভব হয়নি।

এরপরে ২০০৭ সালে কানাডার সর্বোচ্চ আদালত রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা নাকচ করে দেওয়ার পরে নূর চৌধুরী প্রি-রিস্ক রিমুভাল এসেসমেন্ট বিধির আওতায় কানাডার অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে আবেদন করেন। ওই আবেদন এখন পর্যন্ত মীমাংসা হয়নি। এ সুযোগ নিয়ে কোনও স্ট্যাটাস ছাড়াই নূর চৌধুরী কানাডায় অবস্থান করছেন।

২০১৫ সালে এ বিষয়ে তদবির করার জন্য টোরি এলএলবি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয় বাংলাদেশ। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কানাডার সফরের সময়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্র্যুডোর সঙ্গে নূর চৌধুরীকে ফেরত আনার বিষয়ে আলোচনা হয়। এরপরে অক্টোবরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কানাডা সফরের সময়ে এ বিষয়ে পুনরায় আলোচনা হয়। তখন তারা নূর চৌধুরীকে ফেরত দেওয়ার বিষয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠনের জন্য আলোচনা শুরু করতে রাজি হয়।

শরীফুল হক ডালিম

শরীফুল হক ডালিম প্রথম কূটনীতিক হিসেবে কাজ শুরু করেন ১৯৭৬ সালে বেইজিংয়ে। ১৯৮২ সালে তাকে হংকংয়ে বদলি করা হয় এবং ১৯৮৮ সালে কেনিয়ায় রাষ্ট্রদূত হিসাবে পদায়ন করা হয়। ১৯৯৫ সালে বিএনপি সরকার তাকে ফোর্স রিটায়ারমেন্টে পাঠায়। ধারণা করা হয় ডালিমের কেনিয়া ও জিম্বাবুয়েতে ব্যবসা আছে।

বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত খবরের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ধারণা করছে ডালিম এখন পাকিস্তানে আছে।

এর মধ্যে তাকে একবার স্পেনে দেখা গেছে বলে খবর পাওয়ার পরে বাংলাদেশ দূতাবাসের থেকে স্প্যানিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা বাংলাদেশের কাছে এ বিষয়ে আরও তথ্য জানতে চেয়েছে। কিন্তু এরপর আর ডালিমের তথ্য পাওয়া যায়নি।

খন্দকার আব্দুর রশীদ

খন্দকার আব্দুর রশীদকে পাকিস্তানে দেখা গেছে এমন তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে পাকিস্তান সরকারকে একটি নোট ভারবাল দেওয়া হয়। কিন্তু এ বিষযে এখনও পাকিস্তান সরকার কোনও উত্তর দেয়নি।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১৫আগস্ট, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর