thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ 24, ১৪ চৈত্র ১৪৩০,  ১৮ রমজান 1445

শাহ আবদুল করিম: দারিদ্র্য জয় করে বাউল সম্রাট

২০২০ সেপ্টেম্বর ১২ ১৪:৫৩:২৭
শাহ আবদুল করিম: দারিদ্র্য জয় করে বাউল সম্রাট

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: আজ ১২ সেপ্টেম্বর। বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের চলে যাওয়ার দিন। ২০০৯ সালের এই দিনে অগণিত ভক্তকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি দেন বরেণ্য এই শিল্পী। তার বিদায়ের এই দিনে বিনম্র শ্রদ্ধা।

বাংলা বাউল কিংবা আধ্যাত্মিক গানের ইতিহাসে বড় একটি অংশ দখল করে আছেন যিনি, তিনি শাহ আবদুল করিম। সমৃদ্ধ গানের ইতিহাসের পাতায় তার নামটি মোটা দাগে উল্লেখ করা আছে। তার অনবদ্য সব সৃষ্টি কালের গণ্ডি পেরিয়ে এখনো মানুষের মুখে মুখে। চরম দারিদ্র্যের প্রতিবন্ধকতা জয় করে তিনি নিজেকে নিমজ্জিত করেছেন সঙ্গীত সাধনায়। আর এমন সব গান সৃষ্টি করেছেন, যেগুলো তাকে দিয়েছে কিংবদন্তির খেতাব। হয়েছেন বাউল সম্রাট।

শাহ আবদুল করিম তার গানে তুলে ধরেছেন মানুষের চিরায়ত সুখ-দুঃখ, দারিদ্র্য-বঞ্চনা, ভাটি অঞ্চলের জীবনের নানা অনুসঙ্গ। তিনি গান করেছেন সমাজের অন্যায়-অবিচার ও কুসংস্কারের প্রতিবাদে। একদিকে তার কলম চলেছে ধারালো শব্দ সৃষ্টিতে, অন্যদিকে সেগুলো সুরের ঝংকারে সাজিয়ে তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন মানুষের মাঝে।

খুব ছোট বেলা থেকেই সঙ্গীতের প্রেমে পড়েন শাহ আবদুল করিম। কিন্তু পরিবারের চরম দারিদ্র্য সে স্বপ্নের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। বাধ্য হয়েই তাকে কৃষিকাজসহ নানা কাজ করতে হয়েছে। কিন্তু যার ভেতরে প্রতিভার বারুদ ঠাঁসা, তাকে কি আর ক্ষেতের গণ্ডিতে আটকে রাখা যায়! সব কিছু উপেক্ষা করে তিনি সঙ্গীতচর্চা চালিয়ে গেছেন।

সঙ্গীতচর্চায় শাহ আবদুল করিম অনুপ্রেরণা পেয়েছেন ফকির লালন শাহ, পুঞ্জু শাহ এবং দুদ্দু শাহ-এর দর্শন থেকে। তিনি বাউল গানের ওপর দীক্ষা নিয়েছেন সাধক রশীদ উদ্দিন ও শাহ ইব্রাহীম মাস্তান বকশ-এর কাছ থেকে। বাউল গানের পাশাপাশি আবদুল করিম শরীয়তী, মারফতি, দেহতত্ত্ব, গণসঙ্গীত ধারায়ও গান করেছেন।

কিশোর বয়স থেকেই গান লিখেছেন শাহ আবদুল করিম। কিন্তু সেসব গান কেবল সুনামগঞ্জের ভাটি অঞ্চলের মানুষের মধ্যেই পরিচিত ছিল। দেশজুড়ে সেভাবে পরিচিতি কিংবা জনপ্রিয়তা পাননি আবদুল করিম। কিন্তু দেশজোড়া খ্যাতির পেছনে দৌড়াননি তিনি। তাই নিজের মতো সঙ্গীতের সাধনা করে গেছেন। যার ফলশ্রুতিতে মৃত্যুর আগেই দেখে গেছেন নিজের গানের আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা। তার মৃত্যুর কয়েক বছর আগে আবদুল করিমের গান পুরো দেশের মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে যায়।

প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা লাভ করেননি শাহ আবদুল করিম। তিনি একজন স্বশিক্ষিত মানুষ। নিজের বোধ-বিবেচনা ও চিন্তা-ভাবনা থেকেই তিনি গান সৃষ্টি করেছেন। তার লেখা ও সুরে ১ হাজার ৬০০’র বেশি গান রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি বিখ্যাত গান বাংলা একাডেমির উদ্যোগে ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে।

তার লেখা ও সুরে বিখ্যাত গানগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘বন্দে মায়া লাগাইছে, পিরিতি শিখাইছে’, ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’, ‘গাড়ি চলে না’, ‘রঙের দুনিয়া তরে চায় না’, ‘তুমি রাখ কিবা মার’, ‘ঝিলঝিল ঝিলঝিল করেরে ময়ুরপংখী নাও’, ‘আমি কূলহারা কলঙ্কিনী’, ‘কেমনে ভুলিবো আমি বাঁচি না তারে ছাড়া’ এবং ‘কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু’ ইত্যাদি।

বাউল শাহ আবদুল করিমকে নিয়ে বেশ কিছু বইও রচিত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, ‘অমনিবাস’, ‘শাহ আবদুল করিম স্মারকগ্রন্থ’, ‘বাংলা মায়ের ছেলে: শাহা আবদুল করিম জীবনী’, ‘সাক্ষাৎকথায় শাহ আবদুল করিম’, ‘শাহ আবদুল করিম’, ‘বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম, ‘গণগীতিকার শাহ আবদুল করিম’ এবং ‘শাহ আবদুল করিম: জীবন ও গান’। এছাড়া তার জীবনভিত্তিক উপন্যাস ‘কূলহারা কলঙ্কিনী’ বইটিও প্রকাশিত হয়েছে।

আবদুল করিম নিজেও ৭টি বই রচনা করেছেন। এগুলো হচ্ছে- ‘আফতাব সঙ্গীত’, ‘গণ সঙ্গীত’, ‘কালনীর ঢেউ’, ‘ধলমেলা’, ‘ভাটির চিঠি’, ‘কালনীর কূলে’ এবং ‘শাহ আবদুল করিম রচনাসমগ্র’।

সঙ্গীতকলায় অবিস্মরণীয় অবদান রাখায় বাংলাদেশ সরকার ২০০১ সালে শাহ আবদুল করিমকে সম্মানজনক একুশে পদক প্রদান করে। এছাড়া মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার এবং সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডসে তাকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, শাহ আবদুল করিমের জন্ম ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের দিরাই থানার ধলআশ্রম গ্রামে। তার পিতার নাম ইব্রাহীম আলী ও মাতার নাম নাইওরজান।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১২সেপ্টেম্বর, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

জলসা ঘর এর সর্বশেষ খবর

জলসা ঘর - এর সব খবর