thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ 24, ৫ চৈত্র ১৪৩০,  ৯ রমজান 1445

‘বাবু খাইছো’ কেন তরুণদের আকৃষ্ট করছে?

২০২০ সেপ্টেম্বর ১৬ ১৮:৪৪:০৪
‘বাবু খাইছো’ কেন তরুণদের আকৃষ্ট করছে?

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: সপ্তাহ খানেক আগেই প্রকাশিত হয়েছে গানটি। আর প্রকাশের পরই ভাইরাল। সোশ্যাল মিডিয়া আর ইউটিউবে রীতমতো ঝড় তুলেছে এই গান। তরুণদের মাঝে গানটি নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। অবশ্য গানটি নিয়ে সমালোচনাও কম হচ্ছে না। তবে আলোচনা-সমালোচনা কাটিয়ে গানটি হিট।

গানের নাম ‘বাবু খাইছো’। এটি লিখেছেন ও গেয়েছেন ডিজে মারুফ। কিন্তু কেন প্রকাশের পরই গানটি নিয়ে এত হৈচৈ? কী কারণে তরুণদের মধ্যে এই ধরণের গানের গ্রহণযোগ্যতা বেশি দেখা যাচ্ছে?

সাধারণ শ্রোতা কিংবা বিশেষজ্ঞদের মতে, তরুণদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত শব্দ ও বিষয়ের সুবাদেই এটি তাদের আকৃষ্ট করছে। এছাড়া গানের ভিডিওতেও তরুণদের আকর্ষণ করার মতো উপাদান রাখা হয়েছে।

এই সময়ের তরুণদের অনেকেই তাদের প্রেমিক বা প্রেমিকাকে ‘বাবু’ বলে সম্বোধন করেন। আর ‘বাবু খাইছো’ কথাটি তাদের প্রায় নিত্য দিনের।

একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিশাত পারভেজ এই বিষয়ে বলেন, মোবাইল কমিউনিকেশন, তারপর সামাজিক মাধ্যম, প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে যে দূরত্ব তা কমিয়ে দিয়েছে অনেকখানি। প্রতিমুহূর্তেই তারা পরষ্পরের খোঁজ নিতে পারছে। খাবারের বিষয়টাও যেহেতু নৈমিত্তিক একটা বিষয়, স্বাভাবিকভাবেই প্রিয়জন খেয়েছে কি-না, কি করছে, এগুলো তারা জানতে চাইতেই পারে। সে কারণে এই ‘বাবু খাইছো’ টার্মটি তরুণদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে।

তবে কিছুটা ভিন্ন মত দিলেন ঢাকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুমতাজ মুমু। তিনি বলেন, অনেকেই এ ধরনের মিউজিক বেশ উপভোগ করে থাকেন। কিন্তু আসলে গান বলতে আমরা যেমন খুবই গভীর বা মহান ধরনের আর্ট বা শিল্প বুঝি, সেই গভীরতাটা কিন্তু এ ধরনের মিউজিকে নেই। এই ‘অনেকেই’ আবার সবাইকে প্রতিনিধিত্ব করেন না। একটা বড় অংশ একটু জোরালো মিউজিক ও ডিজে টাইপের গান পছন্দ করে, তবে এটাও আবার সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

মুমতাজের ভাষ্য, ক্ল্যাসিকাল মিউজিকগুলো যদি আমরা দেখি, তাহলে দেখবো ওই সব গানের কথা সুন্দর, মিউজিকও খুব শ্রুতিমধুর। কিন্তু তরুণদের অনেকেই এই আর্টকে কদর করেন না। ডিজে ধরনের বা রংচঙ ধরনের মিউজিক এদের বেশি টানে। শরীরে উত্তেজনা সৃষ্টিকারী, মুড লাইট করা ধরনের সব মিউজিক।

বাংলাদেশে এখন তরুণদের মধ্যে গত ৪-৫ বছরে এমন কিছু মিউজিক ভিডিও বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করছে, যেগুলোতে প্রাত্যহিক জীবনে তরুণরা ব্যবহার করে এমন শব্দ বা কথা ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন ‘বন্ধু তুই লোকাল বাস’, ‘এই যে বেয়াইন সাব’, ‘মাইয়া ও মাইয়া তুই অপরাধী রে’, ‘মাফ কইরা দেন ভাই ইত্যাদি।

এসব গান কেবল ডিজিটাল ভার্সনেই জনপ্রিয় হচ্ছে এমন নয়, গানগুলো রাস্তাঘাটে, শপিং মলেও বাজতে শোনা যায়। দেশের মূলধারার সঙ্গীতের সাথে এই গানগুলোর খুব সম্পৃক্ততা না থাকলেও তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এগুলো আলোড়ন তুলতে সক্ষম হয়েছে।

বিনোদন জগতের মানুষ সুকান্ত হালদার এই বিষয়ে মন্তব্য করেছেন, এই গানের মূল টার্গেট অডিয়েন্স হলেন টিনএজার'রা। গানটির কথা ও মিউজিক শুনলেই বোঝা যায়, তাদের কথা ভেবেই গানটির কথা লেখা হয়েছে, মিউজিক কম্পোজিশন করা হয়েছে। আমার ধারণা, তারা (গানটি তৈরির সঙ্গে জড়িত মীর মারুফ ও মীর ব্রাদার্স) বেশ সু-পরিকল্পিতভাবেই কাজটি করেছেন। আর সে কারণেই এখন গানটি নিয়ে এতো আলোচনা হচ্ছে। তারা চেয়েছিলেন গানটি এমন হাইপ তৈরি করুক। এই ধরনের গান অবশ্য জনপ্রিয়তার দিক থেকে খুব বেশি সময় ধরে টিকে থাকে না। প্রকাশের পর দু-তিন মাস বেশ আলোচনা হয়, তারপর হারিয়ে যায়।

গানটির সুরকার একজন ডিস্ক জকি বা ডিজে, মীর মারুফ। তিনি বলেন, তারা মূলত ট্রেন্ডিং কিছু ব্যাপার নিয়ে গান করার চেষ্টা করছেন। যেমন তারা করোনাভাইরাস নিয়ে, কোয়ারেন্টিন নিয়ে গান করেছেন, ঠিক তেমনই গানে ব্যবহার করেছেন একটি বহুল ব্যবহৃত কথা, যা বাংলাদেশে প্রেমিক-প্রেমিকারা তাদের ভালোবাসার মানুষকে বলে থাকেন।

মারুফের ভাষ্য, ‘এখনকার সম্পর্কগুলোতে কী হচ্ছে, কী ধরনের কথা হয়, সেটাই বলতে চেয়েছি আমরা।’

সূত্র: বিবিসি

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১৬সেপ্টেম্বর, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

জলসা ঘর এর সর্বশেষ খবর

জলসা ঘর - এর সব খবর