thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল 24, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৭ শাওয়াল 1445

এবার মুক্তি পেলেন যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা খালেদ 

২০২২ সেপ্টেম্বর ০২ ০০:০৬:৫৪
এবার মুক্তি পেলেন যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা খালেদ 

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: এবার জামিনে মুক্তি পেয়েছেন যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া।যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাটের পর তার এই মুক্তি মিললো।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) কারা হেফাজত থেকে আজ বৃহস্পতিবার রাতে বেরিয়ে যান খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। তাঁর বিরুদ্ধে করা সাতটি মামলার প্রতিটিতেই জামিন পেয়েছেন তিনি।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক সুভাষ কুমার ঘোষ আজ রাতে বিষয়টি প্র নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, সর্বশেষ আজ সন্ধ্যায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনে করা মামলায় ঢাকার বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালত থেকে জামিন পান খালেদ। সন্ধ্যায়ই জামিনের কাগজ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আসে।

এরপর খালেদকে কারা হেফাজত থেকে মুক্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। রাত ১০টার দিকে তিনি বিএসএমএমইউ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। কিছুদিন আগে চিকিৎসার জন্য কাশিমপুর কারাগার থেকে তাঁকে বিএসএমএমইউতে নেওয়া হয়।

ঢাকার বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালত সূত্র জানায়, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় এ আদালত আজ খালেদের জামিন মঞ্জুর করেন। দুদকের করা এ মামলার জামিনের মধ্য দিয়ে নিজের বিরুদ্ধে হওয়া সাত মামলাতেই জামিন পেলেন খালেদ।

দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম বলেন, দুদকের পক্ষ থেকে জামিনের বিরোধিতা করা হয়। তবে খালেদের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়, তিনি অসুস্থ। এর সপক্ষে চিকিৎসা সনদ অদালতে জমা দেওয়া হয়।

খালেদ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি সম্রাটের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক। ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবের সভাপতি খালেদ সম্রাটের হয়ে ক্যাসিনো চালাতেন ও চাঁদাবাজি করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

চলতি বছরের ১০ এপ্রিল থেকে ১১ মের মধ্যে চার মামলায় জামিন পান সম্রাট। তবে এক সপ্তাহ পর ১৮ মে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় হাইকোর্ট তাঁর জামিন বাতিল করে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। সর্বশেষ ২২ আগস্ট তিনি এ মামলায় জামিন পান। এরপরও তিনি বিএসএমএমইউয়ে ছিলেন। গত ২৭ আগস্ট তিনি হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসেন।

র‌্যাবের ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে সম্রাট ও তাঁর সহযোগী এনামুল হক ওরফে আরমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই অভিযানে খালেদ ও জি কে শামীমসহ মোট ১৩ জন গ্রেপ্তার হন।

বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ, মানি লন্ডারিং, অস্ত্র, মাদক আইন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনসহ খালেদের বিরুদ্ধে মোট সাতটি মামলা হয়। এর মধ্যে ছয়টি মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে, চারটির অভিযোগ গঠন হয়েছে। মানি লন্ডারিং আইনে করা মামলার তদন্ত এখনো শেষ করতে পারেনি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

পুলিশ ও র‍্যাব কর্মকর্তারা জানান, খালেদ ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবসহ মতিঝিল চারটি ক্লাবে ক্যাসিনো চালানোর পাশাপাশি সরকারি সাতটি প্রতিষ্ঠানে টেন্ডারবাজি করতেন। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), রেলভবন, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, যুব ভবন ও ওয়াসার ফকিরাপুল জোন।

খিলগাঁও-শাহজাহানপুর চলাচলকারী লেগুনা ও গণপরিবহন থেকেও খালেদের সহযোগীরা চাঁদা তুলতেন। পবিত্র ঈদুল আজহার সময় শাহজাহানপুর কলোনির মাঠ, মেরাদিয়া ও কমলাপুর পশুর হাট নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। শাহজাহানপুর রেলওয়ের জমি দখল করে দোকান ও ক্লাব নির্মাণ করেন তিনি। এ ছাড়া গোরান টেম্পোস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি করতেন। সব মিলিয়ে প্রতি মাসে কোটি টাকা অবৈধ উপার্জন করতেন খালেদ।

র‍্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, কমলাপুরের ৬৪-৬৮, ইস্টার্ন কমলাপুর কমার্শিয়াল কমপ্লেক্সের পঞ্চম তলায় ৪০২ নম্বর ফ্ল্যাটে খালেদের টর্চার সেল ছিল। সেখানে মানুষকে নির্যাতন করতে বৈদ্যুতিক শক দেওয়ার যন্ত্র, বেত, বেসবল ব্যাট ব্যবহার করতেন তিনি। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাঁকে টর্চার সেলে ধরে আনা হতো।

এ ছাড়া জমি, ফ্ল্যাট নিয়ে দ্বন্দ্ব বা বিরোধ নিষ্পত্তিতে কোনো পক্ষ খালেদের কাছে অভিযোগ করলে প্রতিপক্ষের লোকজনকে ডেকে আনা হতো টর্চার সেলে। সেখানে তাঁর কথামতো চলতে রাজি না হলে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হতো। পেটানো হতো বেত ও বেসবল লাঠি দিয়ে। নির্যাতনের পর আপস বা মীমাংসায় রাজি হলে ওই ব্যক্তিকে ছেড়ে দেওয়া হতো। টর্চার সেলটি সিসাবার হিসেবেও ব্যবহার করতেন যুবলীগের নেতা খালেদ।

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

অপরাধ ও আইন এর সর্বশেষ খবর

অপরাধ ও আইন - এর সব খবর