thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১,  ২০ মহররম 1446

ব্রয়লার উৎপাদনে কোম্পানি মনোপলি ভাঙ্গতে কাজ করছে প্রতিযোগিতা কমিশন

২০২৩ সেপ্টেম্বর ০৫ ১৬:২০:৩০
ব্রয়লার উৎপাদনে কোম্পানি মনোপলি ভাঙ্গতে কাজ করছে প্রতিযোগিতা কমিশন

আমির হামজা,দ্য রিপোর্ট: দেশের ব্রয়লার মুরগির মূল্য যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে কি না । ব্রয়লার উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে কোন ধরনের মনোপলি করছে কি না এ বিষয়টি দেখতে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনকে পরীক্ষা করতে বলেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ।

প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য (জনপ্রশাসন,অনুসন্ধান ও তদন্ত) সওদাগর মুস্তাফিজুর রহমান সম্প্রতি একটি চিঠি দিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় নেওয়া কার্ষক্রম সর্ম্পকে জানতে চেয়েছে ।

এদিকে বাজার ঘুরে দেখা গেছে মুরগির দাম নিয়ে বাজারে চলছে তুঘলকি কান্ড। মার্চ মাসে যে রেকর্ড পরিমাণে ব্রয়লারের দাম বেড়েছে। তা এখনো কমে আসেনি। যাকে ইংরেজিতে বলা হয় নিউ নারম্যাল।সোনালি, লেয়ার, দেশি মুরগির দামও সে সময় পাল্লা দিয়ে বেড়েছিল। সাধারণ মানুষের পাত থেকে সরে গেছে প্রয়োজনীয় এ আমিষ। তখন ভোক্তা অধিকার বলেছিল, ব্রয়লারের দাম ২৯০ টাকা কেজি কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। খামারি ও করপোরেট পর্যায়ের খরচ বিবেচনায় সর্বোচ্চ ২০০ টাকা কেজি হতে পারে। পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, কন্ট্রাক্ট ফার্মিং ও করপোরেট কারসাজিতেই মুরগির দামে এ আগুন।

জানা যায়, মার্চ মাসেই বাজার পরিস্থিতি আমলে নিয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছিল। এতে বলা হয়, দেড় থেকে দুই মাসের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম হয়েছে দ্বিগুণ। এ দাম অযৌক্তিক। কারণ, খাবারসহ অন্য ব্যয় বাড়ার পরও এক কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ করপোরেট প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে খরচ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা।কয়েক মাস ধরেই অস্থিতিশীল মুরগি ও ডিমের বাজার। স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন মহল থেকে চেষ্টা করা হলেও সুফল পাচ্ছেন না ভোক্তারা। এর মধ্যে আবার প্রান্তিক খামারিরাও মুনাফা করতে পারছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। পোলট্রি বাজারে বর্তমানে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবশালী হিসেবে দেখা হয় সেগুলোর মধ্যে হলো কাজী ফার্মস গ্রুপ, নারিশ, প্যারাগন, আফতাব, কোয়ালিটি, প্রোভিটা, সিপি, ডায়মন্ড এগ, রাশিক/জামান গ্রুপ ইত্যাদি।

পোলট্রি খাতে মাংস ও ডিমের জন্য মুরগির একদিন বয়সী বাচ্চা ক্রয় করে থাকেন খামারিরা। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এসব বাচ্চা যেসব মোরগ-মুরগির মাধ্যমে উৎপাদন হয়; সেগুলোকে বলা হয় প্যারেন্ট স্টক (পিএস)। আর পিএস উৎপাদন হয় গ্র্যান্ড প্যারেন্ট স্টক (জিপি) থেকে। দেশে জিপি ও পিএসের বাজারের পুরোটাই করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণে।বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ সব পর্যায়ে এক নয়। বড় কোম্পানিগুলো কেজি প্রতি উৎপাদন খরচ ১৩০-৪০ টাকা হলেও প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ ১৭৫ টাকার মতো পড়ে।তিনি বলেন, "এ কারণেই এই শিল্পটা প্রান্তিক খামারিদের কাছে নাই। চলে গেছে কর্পোরেট হাউসদের কাছে। যার কারণে বাংলাদেশের মানুষ জিম্মি হয়ে গেছে।"হাওলাদার অভিযোগ করেন, কর্পোরেট কোম্পানিগুলো তখনই দাম কমিয়ে দেয় যখন প্রান্তিক খামারিদের হাতে যথেষ্ট উৎপাদন থাকে। যেহেতু তাদের (কোম্পানিগুলোর) উৎপাদন খরচ প্রান্তিক খামারিদের তুলনায় ৩০-৪০ টাকা কম থাকে তাই দাম কমিয়ে রাখলেও তাদের লাভ হয়। কিন্তু এতে লোকসানের মুখে পড়ে প্রান্তিক খামারিরা।

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, এর আগে ব্রয়লার মুরগির দাম যখন ১৫০ টাকা ছিল তখন আসলে সেটার দাম ১৮০ টাকা হওয়া উচিত ছিল। কারণ প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচই ছিল দেড়শ টাকার মতো। খামার পর্যায়ে এই মুরগি ১১০ টাকা করে বিক্রি করতে হয়েছে প্রান্তিক খামারিদের। সেখানে তাদের লোকসান গুনতে হয়েছে প্রতি কেজিতে ৪০ টাকার মতো। ফলে অনেক খামারিকে খামার বন্ধ করে দিতে হয়েছে। তবে কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর খরচ কম থাকায় তারা লাভ করতে পেরেছে।বাংলাদেশে মুরগির খাবার হিসেবে যে ফিড ব্যবহার করা হয় তার শতভাগই আমদানির উপর নির্ভরশীল। বাচ্চাও উৎপাদন করে বড় কোম্পানীগুলো।প্রতিযোগীতা কমিশনের সাম্প্রতিক চিঠিতে বলা হয়েছে ,বাণিজ্য মন্ত্রীর উপস্থিতিতে মার্চ মাসে দ্রব্যমূল্যও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের ৬ ষ্ঠ সভায় ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের মূল্য স্থিতিশীল রাখার কার্ষকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হবে মর্মে সিদ্বান্ত নেওয়া হয়েছিল ।

উল্লেখ্য, বিপণন ও পরিবেশন নিয়োগ আদেশ ২০১১ অনুসারে গঠিত জাতীয় কমিটির জুলাই মাসের সভায় পোল্ট্রি মুরগির যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণে কোন প্রকার অনিয়ম কিংবা মনোপলি হচ্ছে কিনা যে বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন পরীক্ষা করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পেরণ করবে মর্মে সিদ্বান্ত হয়েছিল । টাস্কফোর্সের সিদ্বান্তের আলোকে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন কর্তৃক একটি সমীক্ষা কার্ষক্রম গ্রহণ করা হয়েছে । মুরগীর দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে আলোচ্য সমীক্ষা কার্ষক্রম পরিচালনার স্বার্থে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের ৬ ষ্ঠ সভায় ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের মূল্য স্থিতিশীল রাখার বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় কার্ষক্রম সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রেরণ করা জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন।

(দ্য রিপোর্ট/ আ হা / মাহা/ পাঁচ সেপ্টেম্বর দুইহাজার তেইশ)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

অর্থ ও বাণিজ্য এর সর্বশেষ খবর

অর্থ ও বাণিজ্য - এর সব খবর