thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ১৯ জমাদিউল আউয়াল 1446

যানজট নিরসনে ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণ জরুরী!

২০২৪ সেপ্টেম্বর ১২ ১৭:১৭:২৬
যানজট নিরসনে ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণ জরুরী!

আব্দুল্লাহিল ওয়ারিশ:একদিকে আন্দোলন, অন্যদিকে ট্রাফিক পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা, এর সাথে যোগ হয়েছে অতিরিক্ত ব্যাটারিচালিত রিকশার চাপ। সবমিলিয়ে যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী।

গত ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে অনেকটা নিষ্ক্রিয় অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। শুরুতে শিক্ষার্থীরা সড়কের হাল ধরলেও এখন তারা ক্লাসে ফিরে গেছে। পুলিশ সড়কে ফিরলেও গা-ছাড়া ভাব। ফলে এরপর থেকে শুরু হয়েছে মানুষের দুর্ভোগ। কোনভাবেই যেন এই দুর্ভোগ থেকে রেহাই নাই। ঘর থেকে বের হয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে। এতে অফিসগামী মানুষজন সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ছেন।

রাজধানী ঢাকায় চলাচল করা গণপরিবহনের মধ্যে অন্যতম একটি পরিবহণ রিকশা। স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতের জন্য রিকশার বিকল্প নেই। তাই রিকশার উপর অনেককে ভরসা করে রাজধানীতে চলাচল করতে হয়। তবে বর্তমানে অতিরিক্ত ব্যাটারিচালিত রিকশার কারণে সৃষ্ট যানজটে জনগণের ত্রাহি অবস্থা। কোনভাবেই যেন এর থেকে পরিত্রাণ নাই ঢাকাবাসীর।

রাজধানী ঢাকায় রিকশার সংখ্যা ঠিক কত? তার সঠিক হিসাব পাওয়া দুষ্কর। কারণ সিটি কর্পোরেশন থেকে রিকশার রেজিস্ট্রেশন দেয়া হলেও ৩ দশকের বেশি সময় ধরে তা বন্ধ রয়েছে। এরপর দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে রেজিস্ট্রেশন দেয়া হলেও তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায় না। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী ঢাকায় পায়ে চালানো রিকশার সংখ্যা অন্তত ১২ লাখ হবে। এর সাথে সাম্প্রতিক বছরসমূহে যোগ হয়েছে কমপক্ষে আড়াই থেকে ৩ লাখ ব্যাটারীচালিত রিকশা। সবমিলিয়ে এই সংখ্যা ১৫ লাখের মতো হবে।

গত ১৫ মে ২০২৪ বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ঢাকা শহরে ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা বা ইজিবাইক বন্ধে সরকার ঘোষণা দিলেও এটি কার্যকর করতে পারেনি। এ ঘোষণার মাত্র দুদিন পরই আন্দোলনের মুখে আবারো তা চালু রাখার নির্দেশ দেয় সরকার। তবে, শুধুমাত্র রাজধানী ঢাকা শহরে ফিডার রোডে (মূল সড়ক নয় এমন রাস্তা) এই তিন চাকার ব্যাটারিচালিত রিকশা চালু থাকবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। এছাড়া সারা দেশের ২২টি মহাসড়কে এসব বাহন বন্ধই থাকবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়েছিল। এরপর থেকে ঢাকার প্রধান সড়কগুলোতে রিকশা চলাচল বন্ধ থাকলেও ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর পুলিশের অনুপস্থিতিতে প্রধান সড়কগুলোতে আবারো ব্যাটারিচালিক রিকশা চলাচল শুরু হয়, যা এখানো অব্যাহত রয়েছে। যার ফলে শহরে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে।

এদিকে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোয় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধের দাবিতে গত ২৬ আগস্ট শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন পায়ে চালিত রিকশার চালকরা। সে সময় তারা ‘চলবে না চলবে না, অটোরিকশা চলবে না’, ‘অবৈধ অটোরিকশা চলতে দেওয়া হবে না’, ‘বাংলাদেশে বৈষম্য মানি না মানবো না’সহ নানান স্লোগান দেন। মূলত মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করাসহ ৭ দাবিতে বিক্ষোভ করেন তারা। রিকশা চালকদের অন্য দাবির মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মতো ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন থেকে রিকশা মালিকানার নতুন লাইসেন্স প্রদান ও পুরাতন লাইসেন্স নবায়ন করা; সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে ও বৈধ লাইসেন্সধারী রিকশা পেশাজীবীদের স্বার্থে ঢাকা উত্তর/দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন থেকে চালক লাইসেন্স প্রদান করা; অসুস্থ্য চালকদের ফ্রি-ফ্রাইডে মেডিকেল চিকিৎসা প্রদান করা; ঢাকা উত্তর/দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের লাইসেন্সপ্রাপ্ত রিকশা পেশাজীবীদের ব্যবসায়িক ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, পালকির বিকল্প হিসেবে ১৮৬৫-৬৯ প্রথম কে রিকশার উদ্ভাবন করেছিলেন তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মত হলো, জোনাথন স্কোবি নামের একজন মার্কিন মিশনারি ১৮৬৯ সালে রিকশা উদ্ভাবন করেন। স্কোবি থাকতেন ভারতের সিমলায়। ১৯০০ সালে কলকাতায় হাতে টানা রিকশা চালু হয়, যা ছিল মালপত্র বহনের জন্য। ১৯১৪ সালে কলকাতা পৌরসভা রিকশায় যাত্রী পরিবহনের অনুমতি দেয়। ততদিনে ব্রক্ষদেশ মানে মিয়ানমারের রেঙ্গুনেও রিকশা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৯১৯ সালে রেঙ্গুন থেকে রিকশা আসে চট্টগ্রামে। তবে ঢাকায় রিকশা চট্টগ্রাম থেকে আসেনি; এসেছে কলকাতা থেকে। নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহের ইউরোপীয় পাট ব্যবসায়ীরা নিজস্ব ব্যবহারের জন্য কলকাতা থেকে ঢাকায় রিকশা আনেন।

এদিকে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের তথ্যমতে, ঢাকায় কমপক্ষে পাঁচ লক্ষাধিক রিকশা চলাচল করে এবং ঢাকার ৪০ শতাংশ মানুষই রিকশায় চড়ে। ২০১৫ সালের গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের প্রকাশনায় এ সম্পর্কিত একটি বিশ্বরেকর্ড অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০২৩ সালে ইউনেসকোর বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায় ঢাকা শহরের ‘রিকশা ও রিকশাচিত্র’। রিকশাগুলোতে সাধারণত শৈল্পিক হাতের ছোয়ায় ফুটে উঠে রিকশাচিত্র। এতে ফুল-ফল, নদ-নদী, দেশের প্রকৃতি, চলচ্চিত্রের নায়ক-নায়িকা বা দেশের বিভিন্ন ঐতিহ্য ঠাঁই পায়।

বর্তমানে বৈধ-অবৈধ রিকশায় গোটা ঢাকা শহর যেন রিকশার শহরে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাগুলো একদিকে যেমন তীব্র যানজট সৃষ্টি করছে, তেমনি সড়কে অন্য পরিবহণের গতিও কমিয়ে দিচ্ছে। তাই এসব ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল জরুরী ভিত্তিতে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী। অন্যথায় দুর্ভোগ আরো বেড়ে যাবে যানজটে অতিষ্ঠ এই ঢাকাবাসীর।

(দ্য রি‌পোর্ট/মাহা / আব ও/‌ বারো সেপ্টেম্বর / দুইহাজার চব্বিশ )

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

বিশেষ সংবাদ এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ সংবাদ - এর সব খবর