thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল 24, ১১ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৫ শাওয়াল 1445

ইউকে চিং বীরবিক্রমের কদর বাড়ে বিজয়ের মাসে

২০১৩ ডিসেম্বর ১৬ ০৫:৩৭:২৪
ইউকে চিং বীরবিক্রমের কদর বাড়ে বিজয়ের মাসে

চট্টগ্রাম সংবাদদাতা : বীরবিক্রম উপাধিতে ভূষিত একমাত্র আদিবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউকে চিং। স্বাধীনতাযুদ্ধে অকুতোভয় এ মুক্তিযোদ্ধা বান্দরবানের গৌরব ও পাহাড়ের কৃতী সন্তান। তার কারণেই মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে লিখিত গ্রন্থে বান্দরবান তথা পার্বত্য চট্টগ্রামের নাম লিপিবদ্ধ হয়েছে। তিনি আমাদের অহংকার। ইতিহাসের পাতা খুললেই তার অসামান্য অবদানের কথা পাওয়া যায়।

আলাপকালে ইউকে চিং বীরবিক্রম জানান, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে তিনি স্বাধীনতাযুদ্ধে যোগ দেন। ২৫ মার্চ ইপিআরের নায়েক হিসেবে ইউকে চিং রংপুর ৬নং সেক্টরে মেজর বাশারের নেতৃত্বে ৯ জন ইপিআরের সৈনিক নিয়ে পাটগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় সম্মুখসমরে যুদ্ধ করেন। তিনি বিওপিতে কর্মরত অবস্থায় এক বিহারি ও দুই পাঞ্জাবিকে গুলি করে হত্যা করেন।

মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে অর্জন করেন বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তৃতীয় সর্বোচ্চ খেতাব বীরবিক্রম। বয়সের ভারে তিনি এখন ন্যুব্জ। কিন্তু মনোবলে এখনও তিনি টগবটে এক মহান বীর মুক্তিযোদ্ধা। নানা রোগ-শোকে তিনি জর্জরিত হলেও এখনও সুযোগ পেলেই হাতের লাঠিটি নিয়ে মাথায় ক্যাপ পরে বীরদর্পে ঘুরে বেড়ান বান্দরবান শহর।

কিন্তু মহান মুক্তিযুদ্ধের অকুতোভয় এ বীর মুক্তিযোদ্ধার আর্থিক সংকট কাটছেই না। থাকেন শহরের ইসলামপুর সংলগ্ন লাঙ্গিপাড়ায়। সরকারসহ বিভিন্ন মহল থেকে সহযোগিতা দেওয়া হলেও অভাব-অনটন তাকে ছাড়ছেই না। তাই মাঝে-মধ্যে অর্ধাহারে-অনাহারেও থাকেন বাংলাদেশের সাহসী যোদ্ধা ইউকে চিং। তবে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর এলেই তার কদর বেড়ে যায়। সরকার এবং বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকেও ইউকে চিং বীরবিক্রমের খোঁজ-খবর নেওয়া হয়। মিডিয়াগুলো উঠেপড়ে লাগে, ইউকে চিংকে নানাভাবে তুলে ধরার চেষ্টা চলে। কখনও কখনও কেউ কেউ হাতে কিছু অর্থও গুঁজে দেন। বিজয়ের মাস এলেই অকুতোভয় বীর সেনানি ইউকে চিংকে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের দাওয়াত, সংবর্ধনা, কিছু অনুদান দিয়ে দায়িত্ব পালনের মহড়া চলে। ডিসেম্বর গেলেই কেউ তার খোঁজ রাখে না।

বান্দরবানের জেলা শহরে মার্মা অধ্যুষিত উজানীপাড়ায় বাইশাউ মার্মার ঘরে ১৯৩৩ সালে জন্মগ্রহণ করে ইউকে চিং। ১৯৫২ সালে তিনি পাকিস্তান রাইফেলসে সৈনিক পদে যোগদান করেন। দীর্ঘ কয়েক বছর চাকরি করার পর স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন দেশ মাতৃকা রক্ষার লড়াই মহান মুক্তিযুদ্ধে।

তিন পার্বত্য জেলায় মধ্যে তিনিই একমাত্র পাহাড়ি মুক্তিযোদ্ধা যিনি বীরবিক্রম উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরেই যেন শেষ হয়ে গেছে এই বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রয়োজন। যিনি একসময় দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলেন, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে সেই বীরবিক্রম ইউকে চিং জীবনযুদ্ধে হারতে বসেছেন।

দেশ স্বাধীনের ৪২ বছর পরও অবহেলিত ৮০ বছর বয়সী এ বীর মুক্তিযোদ্ধার দুঃখ-বঞ্চনা আর হতাশার গ্লানি বুকে চেপে ধরে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলেন আর বিড়বিড় করে বলেন, বহু রক্তে কষ্টার্জিত এই দেশ এই স্বাধীনতা হাজার বছর বেঁচে থাক।

বীরবিক্রম ইউকে চিং জানান, তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে অভাবে অর্ধহারে কোনোমতে দিন কাটাচ্ছেন। অভাব তার নিত্যসঙ্গী হলেও ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দেননি কখনো। তার দুই ছেলের অন্যের কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চলে।

কথা প্রসঙ্গে ইউকে চিং আরও বলেন, বিডিআর (বিজিবি) থেকে অবসর গ্রহণ করার পর থেকে শহরের লাঙ্গিপাড়ায় জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস করতেন। ২০১০ সালে বান্দরবানের সেনা রিজিয়ন ৬৯ ব্রিগেড তার জরাজীর্ণ ঘরটি পুনর্নির্মাণ করে দেয়। একই বছর তার পাড়ার সড়কটি ‘ইউকে চিং বীরবিক্রম সড়ক’ নামে নামকরণ করা হয়। আবার ২০১০ সালে জনতা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দেড় লাখ টাকার একটি চেক তার হাতে তুলে দেয়। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সম্মাননা ভাতা ছাড়া আর কোনো আর্থিক সহায়তা পান না বলে তিনি জানান।

এরপরও খুশি এই বীরবিক্রম। জীবনযুদ্ধে হারলেও মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে পেয়েছেন একটি স্বাধীন দেশ আর লাল-সবুজের পতাকা। এটাই যেন তার চরম ও পরম পাওয়া।

ইউকে চিং বীরবিক্রম বিভিন্ন সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীন আম্মদের কাছ থেকে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার গ্রহণ করেন।

(দ্য রিপোর্ট/কেএইচ/এএস/ডিসেম্বর ১৬, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিজয়ের মাস এর সর্বশেষ খবর

বিজয়ের মাস - এর সব খবর