thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ 24, ১৪ চৈত্র ১৪৩০,  ১৮ রমজান 1445

এখানে দাঁড়ালে দেখা যায় একাত্তরের বাংলাদেশ

২০১৩ ডিসেম্বর ১৬ ১১:৫৮:১০
এখানে দাঁড়ালে দেখা যায় একাত্তরের বাংলাদেশ

মাসুদ রানা, মেহেরপুর : ৪৩ বছর আগে এখানেই উড়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা। আজ তাই এখানে দাঁড়ালে দেখা যায় একাত্তরের বাংলাদেশকে। বলা হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানী মেহেরপুরের মুজিবনগরের কথা। আমাদের স্বাধীনতা সূর্য় উদিত হয়েছিল সেদিনের আমঝুঁপিতে। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস রচনার জন্য ‍সেদিন এখানে দাঁড়িয়েছিলেন অকুতোভয় মানুষেরা। একাত্তরের ১৭ এপ্রিল এখানেই গঠিত হয়েছিল প্রথম অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার। সেদিনের সেই মুজিবনগরে ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে সমগ্র মুক্তিযুদ্ধকে। এখানে নির্মিত বিভিন্ন মনুমেন্টের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সেই দিনগুলোকে।

২০০১ সালে মুজিবগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কেন্দ্র নির্মাণে ৪৫ কোটি ২৫ লাখ ৫২ হাজার টাকার প্রকল্প অনুমোদন পায়। মুক্তিকামী জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সম্বন্বয়ে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল গঠিত বাংলাদেশ সরকারের প্রথম শপথ গ্রহণ, ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবহের স্মৃতি, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ-চেতনা সমৃদ্ধ তথ্য ও নিদর্শন ভবিষৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার লক্ষ্যে ২০০১ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়।

বিশাল আবহে এখানে নির্মাণ করা হয়েছে বাংলাদেশের মানচিত্র। মানচিত্রটিকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক ঘটনাচিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও দেখানো হয়েছে যুদ্ধকালীন সময়ে দেশের চারটি পথ দিয়ে শরনার্থী গমন, ঈশ্বরদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ধ্বংস, আ স ম আব্দুর রবের পতাকা উত্তোলন, শাজাহান সিরাজের ইশতেহার পাঠ, শালদাহ নদীতে যুদ্ধ, কাদেরিয়া বাহিনীর জাহাজ দখল ও যুদ্ধ, শুভপুর ব্রিজে সম্মুখ যুদ্ধ, কামালপুর ও কুষ্টিয়ার মিরপুরের যুদ্ধ, চালনা ও চট্রগ্রাম বন্দর ধ্বংস, পাহাড়তলী ও রাজশাহীর হত্যাযজ্ঞ।

এছাড়া এখানে নির্মাণ করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে পাক বাহিনীর নানা বর্বরতা ও ধ্বংসের স্মৃতিচিহ্ন। এর মধ্য আছে জাতীয় শহীদ মিনার ধ্বংস, সচিবালয়ে আক্রমণ, রাজারবাগ পুলিশ লাইনে আক্রমণ, জাতীয় প্রেস ক্লাব ধ্বংস, তৎকালীন ইপিআর পিলখানা আক্রমণ, রায়েরবাজার বধ্যভূমি ও বুদ্ধিজীবী হত্যার চিত্র।

এছাড়া এখানে রয়েছে যাদুঘর, স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত গ্রন্থসমৃদ্ধ গ্রন্থাগার, সেমিনার কক্ষ, মিলনায়তন, স্মৃতিকেন্দ্রের অফিসভবন, গ্রন্থভাণ্ডার ও বিক্রয় কেন্দ্র, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ৪০টি ভাস্কর্য, জাতীয় নেতাদের তৈলচিত্র, ফোয়ারা, স্বাধীন বাংলার পতাকার প্রতিকৃতি, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পনের দলিল খোদাই করে লিপিবদ্ধ করা, মুজিবনগর সরকারের প্রতীক ও টাইলসের ফলকে মুজিবনগর সরকারের প্রচারপত্র।

মানচিত্রের দক্ষিণপাশ ঘেষে রয়েছে এন্টি ফাংগাস টাইলস দিয়ে প্রতীকী বঙ্গপোসাগর। মানচিত্রের বাইরে নির্মাণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৫ মার্চের কালরাত্রি, মুক্তিকামী মানুষের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, পাকবাহিনীর নারী নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠান, ১২ আনসার সদস্যের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে গার্ড অব অনার প্রদান ও সেক্টর বণ্টন, আরোরা, নিয়াজী এবং একে খন্দকারের উপস্থিতিতে পাক বাহিনীর আত্মসমর্পনের ভাস্কর্য।

মেহেরপুর গণপুর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী পারভেজ খাদেম জানান, ২০০৯ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নানা সংযোজন বিয়োজনের কারণে ২০১২ সালের শেষের দিকে শেষ হয় এই স্মৃতিকেন্দ্রের নিমার্ণ কাজ।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে এখানে প্রতিদিন ভিড় করেন অনেক দর্শণার্থী। রবিবার কথা হয় খুলনা থেকে আসা শিক্ষক সুলতানা বেগম ও মহির উদ্দীনের সঙ্গে। তারা জানান, প্রতিবছরই শিক্ষার্থীদের নিয়ে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দেখতে আসেন তারা ।

তারা বলেন, ইতিহাসের পাতা থেকে যা শিক্ষার্থীদের শেখানো হয়েছে মাত্র একদিনে শিক্ষার্থীরা স্মৃতিকেন্দ্র থেকে তা শিখতে পারবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এ থেকে জানতে পারবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।

একই কথা জানালেন নড়াইল থেকে আসা আব্দুর রহমান ও সুলতান কামাল। শুধু তারাই নয় অনেক দর্শণার্থীর কাছেই এই স্মৃতিকেন্দ্র আমাদের গৌরবজনক ইতিহাস ও বর্তমানের মধ্যে একটি মেলবন্ধন তৈরি করেছে।

(দ্য রিপোর্ট/ এমআর/ কেএন/ ডিসেম্বর ১৬, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিজয়ের মাস এর সর্বশেষ খবর

বিজয়ের মাস - এর সব খবর