thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১,  ২৩ জমাদিউস সানি 1446

জামানত হারানো নেতারাও হাতুড়ি-মশালে সাংসদ!

২০১৪ জানুয়ারি ০৬ ২০:০৩:০৩
জামানত হারানো নেতারাও হাতুড়ি-মশালে সাংসদ!

আগের নির্বাচনগুলোতে জামানত হারিয়েছেন এমন নেতারাও ভোটারবিহীন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেন। রবিবারের ভোটে অনেক আসনে মশাল ও হাতুড়ি মার্কার প্রার্থীরাও জিতেছেন বিপুল ভোটের ব্যবধানে। মশাল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ এবং হাতুড়ি বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির নির্বাচনী প্রতীক।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু মশাল ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন হাতুড়ি প্রতীকে নির্বাচন করেননি। এবার জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির ৪ নেতা মশাল ও হাতুড়ি প্রতীক নিয়ে বেসরকারিভাবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

কয়েকটি নির্বাচনী ফলাফল পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, ১৯৯১ সালে গণতান্ত্রিক শাসন শুরুর পর ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে বামদলগুলো তাদের নিজস্ব প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারেনি। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর ৮ম সংসদ নির্বাচনে হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাসদ মশাল প্রতীক নিয়ে ৭৫টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে একটিতেও জয়ী হতে পারেনি। ইনুসহ জাসদের সকল প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। এবার সেই জাসদের তিনজন প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। জাসদ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে ৭টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৩টি আসন লাভ করে। মহাজোট ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ইনুকে শেষ সময়ে তথ্যমন্ত্রী পদেও নিয়োগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

একইভাবে রাশেদ খান মেননের বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি হাতুড়ি প্রতীকে ২০০১ সালের নির্বাচনে ৩২টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ভোট পেয়েছিল মাত্র .০৭ শতাংশ। জামানত হারিয়েছিলেন মেনন, ফজলে হোসেন বাদশাসহ সব নেতা। এবার ওয়ার্কার্স পার্টিও বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২টি আসন লাভ করেছে। ওয়ার্কার্স পার্টি ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর মহাজোটের শরিক হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে ৫টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ২টি আসন লাভ করে। ক্ষমতাসীন হওয়ার পর মেননকে দেওয়া হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদ। আর নির্বাচনকালীন সরকারে মেনন টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী।

এবার দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মোট ৬ জন প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এতে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় হয়েছেন ২ জন। এদের মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, ঢাকা-৮ থেকে ও পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা রাজশাহী-২ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন।

এ ছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শেখ হাফিজুর রহমান ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে নড়াইল-২ আসন থেকে ৭২ হাজার ৮০৭ ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছেন ‘নৌকা’ প্রতীক নিয়ে। তার প্রাপ্ত ভোট ৯৫ হাজার ১২৭। নৌকার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কলস প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী সোহরাব বিশ্বাস পেয়েছেন ২২ হাজার ৩২০ ভোট। ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির আরেক সদস্য মুস্তফা লুৎফুল্লাহ ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে ‘নৌকা’ প্রতীকে সাতক্ষীরা-১ আসন থেকে ৬৮ হাজার ৪৬৯ ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রাপ্ত ভোট ৯০৭৫৩। প্রতিদ্বন্দ্বী হরিণ প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম মুজিবুর রহমান পেয়েছেন ২২ হাজার ২৮৪ ভোট। ওয়ার্কার্স পার্টির ঠাকুরগাঁও জেলা সম্পাদক ইয়াসিন আলী ‘হাতুড়ি’ প্রতীকে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে ২৪ হাজার ২৭৩ ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রাপ্ত ভোট ৬২ হাজার ১১৮। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাফিজ উদ্দিন আহমেদ লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছেন ৩৭ হাজার ৮৪৫ ভোট। ওয়ার্কার্স পার্টির বরিশাল জেলা কমিটির নেতা টিপু সুলতান হাতুড়ি প্রতীক নিয়ে বরিশাল-৩ আসনে ১২ হাজার ৩৭৬ ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রাপ্ত ভোট ৩৫ হাজার ৭৩৬। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া টিপু লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছেন ২৩ হাজার ৩৬০ ভোট।

প্রসঙ্গত ওয়ার্কার্স পার্টির সব নেতাই ২০০১ সাল ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জামানত হারিয়েছিলেন।

একইভাবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদও ৫টি আসন পেয়েছে। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, জাসদ নির্বাহী সভাপতি মাঈনুদ্দীন খান বাদল ও স্থায়ী কমিটির সদস্য শিরিন আক্তার বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া পঞ্চগড়-১ থেকে জাসদ যুগ্ম-মহাসচিব নাজমুল হক প্রধান মশাল প্রতীকে নির্বাচন করে ৪৬ হাজার ১৫৫ ভোট পেয়ে বেরসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবু সালেক লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছেন ৩৭ হাজার ৯০৮ ভোট। বগুড়া-৪ আসনে জাসদ নেতা একেএম রেজাউল করিম মশাল প্রতীকে ২২ হাজার ২০৩ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. নুরুল ইসলাম পেয়েছেন ১৩ হাজার ৪৭৯ ভোট। উল্লিখিত প্রার্থীরাও ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে জামানত হারিয়েছিলেন।

(দ্য রিপোর্ট/সাআ/এইচএসএম/এসএ/এনআই/জানুয়ারি ৬, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশেষ সংবাদ এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ সংবাদ - এর সব খবর