thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১,  ২৩ জমাদিউস সানি 1446

দ্রব্যমূল্য সহনীয় থাকেনি

২০১৪ জানুয়ারি ০৮ ২২:২০:২৮
দ্রব্যমূল্য সহনীয় থাকেনি

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগে যে কয়টি উল্লেখযোগ্য নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল তার মধ্যে অন্যতম চমক ছিল দ্রব্যমূল্য বিষয়ে। বিদায়ী সরকারের সময়ে কেমন ছিল দ্রব্যমূল্য ? ইশতেহারে উল্লেখিত প্রতিশ্রুতির সঙ্গে খুব বেশি মিল পাওয়া যায়নি বাজারে।

ইশতেহারে উল্লেখ্য, দ্রব্যমূল্যের দুঃসহ চাপ প্রশমনের লক্ষ্যে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে স্থিতিশীল রাখার ব্যবস্থা করা হবে। দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সময়মতো আমদানির সুবন্দোবস্ত, বাজার পর্যবেক্ষণসহ বহুমুখী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ভোক্তাদের স্বার্থে ভোগ্যপণ্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গড়ে তোলা হবে। সর্বোপরি সরবরাহ ও চাহিদার ভারসাম্য সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্য কমানো হবে ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা হবে।

উল্লেখিত নির্বাচনী ওয়াদার সঙ্গে মহাজোট সরকারের সময়ে বিদ্যমান থাকা দ্রব্যমূল্যের সামঞ্জস্য পাওয়া যায় না। ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে দায়িত্ব গ্রহণ করে এই সরকার। তখন মোটা চালের সর্বনিম্ন দাম ছিল ২৫ থেকে ২৮ টাকার মধ্যে। বর্তমানে একই ধরনের চালের দাম রয়েছে সর্বনিম্ন ৩৫ টাকা। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে ট্রাকসেলের মাধ্যমে ২৪ টাকা দরে চাল বিক্রি করে থাকে টিসিবি।

ইশতেহারে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখিত ডাল ও তেলের দাম আরও বেশি হারে বেড়েছে। সবশেষ সময়ে পেঁয়াজের ঝাজে বাজারে অস্থির অবস্থা চলছে। পাঁচ বছর আগে প্রতি কেজি ডালের দাম ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে। বর্তমানে প্রতি কেজি ডালের দাম ১১৫ থেকে ১২০ টাকা। প্রতি লিটার তেলের দাম ছিল ৮০ থেকে ৯৮ টাকার মধ্যে। এই সময়ে একই পরিমাণ তেল কিনতে লাগে ১১৬ টাকার বেশি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক আবু আহমেদ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সরকার তার প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেনি। এমনকি স্থিতিশীলতা বজায় রাখতেও অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। দ্রব্যমূল্য কমেনি। বরং বেড়েছে।’

পাচঁ বছর অতিবাহিত হয়েছে। পণ্যের দাম কিছুটা বাড়া কি যুক্তিসঙ্গত নয়? উত্তরে আহমেদ বলেন, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় বলেছিল কালোবাজারি, সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্য বাড়ানো হয়েছে। তাহলে সরকার ক্ষমতায় গিয়ে সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিয়ে কেন মূল্য কমাতে পারল না?

তার মতে, উল্টো এই সরকারের আমলে বিদেশে অনেক পণ্যের দাম কমেছে কিন্তু আমাদের বাজারে দাম কমেনি। এ সব কারণে উপকৃত হয়েছে সরকারের সমর্থনপুষ্ট একটি অংশ। সাধারণ মানুষের কোনো উপকার হয়নি।

মজুতদারি ও মুনাফাখোরি সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেওয়া ও চাঁদাবাজি বন্ধ করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি সরকার। উল্টো অর্থমন্ত্রীসহ সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল ব্যক্তি দ্রব্যমূল্য বাড়ার জন্য মজুতদারি, সিন্ডিকেট ও চাঁদাবাজিকে দায়ী করেছেন। যদিও বিরোধী দলে থাকাকালীন এরাই অভিযোগ করতেন হাওয়া ভবনের সিন্ডিকেটে বাড়ছে দ্রব্যমূল্য। কিন্তু ক্ষমতায় থেকে খোদ অর্থমন্ত্রী ‘এক শ্রেণীর’ সিন্ডিকেটের কথা বলেছেন।

ইশতেহারে ভোক্তাদের স্বার্থে ‘ভোগ্যপণ্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’ গড়ে তোলার কাজটিও করতে পারেনি সরকার। কনজিউমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর ভূইয়া দ্য রিপোর্টকে বলেন, সরকার তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেনি। সম্প্রতি পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। চালের দামও চড়া।

প্রথম অগ্রাধিকারে বিশ্বমন্দার প্রভাব থেকে দেশের অর্থনীতিকে রক্ষার বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও উল্লেখ ছিল। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভালো অবস্থান বজায় রেখেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। এই অবস্থার জন্য সরকারের গ্রহণ করা বিশেষ কোনো পদক্ষেপ কাজ করেছে কি না?

জানতে চাইলে অধ্যাপক আবু আহমেদ দ্য রিপোর্টকে বলেন, অর্থনৈতিক মন্দার বছর ধরা হয় ২০০৬, ২০০৭ ও ২০০৮ কে। তাও শেষের দুই বছর মন্দার প্রকোপ ক্রমশ কমে আসে। এই হিসেবে বর্তমান সরকারকে তেমন কোনো মন্দা অবস্থা মোকাবেলা করতে হয়নি। এ ছাড়া মন্দার সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি তেমন সমস্যার সম্মুখীন হয়নি।

তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতির বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে পাশ্চাত্য অর্থনীতির বিস্তর ফারাক। লক্ষ্য করবেন মন্দার সময়েও আমাদের পোশাক রফতানি না কমে বরং বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্যমূল্য কমেছে। যা এক হিসেবে বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক হিসেবে কাজ করেছে। তাই এই ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে কৃতিত্ব দাবি করার কিছু নেই।

দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির বিষয়টি মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে মানুষের আয় বাড়ার কথা বড় করে বলা হয়েছে। মাথাপিছু আয় বাড়লেও মূল্যস্ফীতির চাপ সেই আয়ের অংশকে খেয়ে ফেলেছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী বর্তমান সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার সময় মূল্যস্ফীতির হার ছিল প্রায় সাত শতাংশ। বর্তমান সময়ে এই হার প্রায় নয় শতাংশ। মাঝের বছরগুলোতে মূল্যস্ফীতির হার আরও উদ্বেগজনক অবস্থানে গিয়েছিল।

বিগত সংসদ নির্বাচনের পূর্বে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কম দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের ওয়াদা ছিল চোখে পড়ার মতো। মানুষ সে সব কথায় আকৃষ্টও হয়েছিল।

আওয়ামী লীগের ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহারেও দ্রব্যমূল্য বিশেষ গুরুত্ব পায়। ইশতেহারে পাঁচটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। সেগুলোর মধ্যে সর্বাগ্রে স্থান পায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি। মেয়াদ শেষে সেই আশা পূরণ করতে পারেনি সরকার। উল্টো সরকারকে দ্রব্যমূল্য নিয়ে অনেকবারই বিব্রত হতে হয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/বিকে/এসবি/রা/এনআই/জানুয়ারি ০৮, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশেষ সংবাদ এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ সংবাদ - এর সব খবর