thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১,  ১৩ জমাদিউল আউয়াল 1446

সিমন দ্য বোভোয়ার

২০১৪ জানুয়ারি ০৯ ০০:৪৯:২২
সিমন দ্য বোভোয়ার

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ফরাসি নারীবাদী লেখক সিমন দ্য বোভোয়ার ১৯০৮ সালের ৯ জানুয়ারি প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দর্শন, রাজনীতি ও সামাজিক বিষয় নিয়ে প্রবন্ধ, গল্প ও উপন্যাস লিখেছেন।রচনা করেছেন আত্মজীবনী। সারা বিশ্বের নারীবাদী চিন্তকদের ওপর তার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।

সিমন দ্য বোভোয়ারের বাবা জর্জ দ্য বোভোয়ার ছিলেন উকিল এবং শখের অভিনেতা। মা ফ্রাসোঁয়া ব্রাসেয়ো ছিলেন গোঁড়া ক্যাথলিক। তিনি বেড়ে ওঠেন দারিদ্র্যের মধ্যে। মায়ের দুঃখ দেখে ছেলেবেলাতেই সিদ্ধান্ত নেন বিয়ে করবেন না। জন্ম দেবেন না সন্তানের। লিঙ্গবৈষম্য নির্ভর সমাজে বিয়ের মতো বন্ধন অনর্থক। তার ছোট বোন হেলেন দ্য বোভোয়ার ছিলেন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী। কিন্তু তাদের বাবার শখ ছিল একটা পুত্র সন্তানের। ছেলেবেলায় মেধাবী সিমনকে বলতেন, একজন পুরুষের মতোই তোমার মেধা। এটি সিমনের মনে প্রভাব ফেলে।

সিমন ১৫ বছর বয়সে সিদ্ধান্ত নেন লেখক হবেন। শৈশবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা শুরু করেন। একই সময় মায়ের কাছে ধর্ম শিক্ষা নেন। কিন্তু তরুণ বয়সেই তিনি নিজেকে নাস্তিক ঘোষণা দেন। ভর্তি হন ফ্রান্সের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় সোরবোর্নে। সেখানে পরিচয় হয় বিখ্যাত দার্শনিক জ্যাঁ পল সার্ত্রের সঙ্গে। ১৯২৯ সালে ২১ বছর বয়সে তিনি দর্শনে এগ্রিগেশন পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান পেয়ে উত্তীর্ণ হন। সেখানে থিসিস করেছিলেন দার্শনিক লাইবনিজের ওপর। একই পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন জ্যাঁ পল সার্ত্র। সে সময় তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব, প্রেম ও গুরু-শিষ্যের জটিল সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

১৯৪৩ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগের পটভূমিতে লেখেন প্রথম উপন্যাস ‘সি কেম টু স্টে’। উম্মোচিত হয় সিমন এবং সার্ত্রের জটিল সম্পর্ক। ১৯৪৫ সালে সিমনের দ্বিতীয় উপন্যাস ‘লা সেং ডেস অট্রিস’ প্রকাশিত হয়। রাজনৈতিক উপন্যাস হিসেবেও এটি বেশ জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৮২ সালে ক্লাউদে চারবলের পরিচালনায় এই উপন্যাসকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘হেলেন’।

১৯৫৪ সালে সিমন প্রকাশ করেন আত্মজৈবনিক উপন্যাস ‘লেস মেন্ডারিন’ বা দি ম্যান্ডারিন। উপন্যাসটিতে সিমন তার নিজের এবং সার্ত্রের অনেক ঘটনাই তুলে এনেছিলেন অনেকটা রূপক আর ব্যাঙ্গাত্মকভাবে। উপন্যাসটি এনে দেয় ব্যাপক জনপ্রিয়তা। উপন্যাসটি প্রিক্স গনকোর্ট পুরস্কারে ভূষিত হয়।

১৯৪৯ সালে দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয় তার সবচেয়ে প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় বই ‘দি সেকেন্ড সেক্স’। বইটিতে তিনি লিঙ্গ বৈষম্যের ঐতিহাসিক ও মনস্তাত্ত্বিক ভিত্তিগুলো ব্যাখ্যা করেন।

১৯৫৮ সালে সিমন চার খণ্ডে তার আত্মজীবনী শেষ করেন- মেমোয়ার্স অব এ ডিউটিফুল ডটার, দি প্রাইম টাইম, ফোর্স অব সারকামস্টেন্স এবং অল সেইড অল ডান। ১৯৭৯ সালে প্রগতিশীল নারীদের জীবন অবলম্বনে লিখেন ছোটগল্প ‘দ্য থিংস অব দি স্পিরিট কাম ফার্স্ট’। নারী অধিকার বিষয়ক তাঁর আরেক ছোটগল্পের সিরিজ ‘দি ওমেন ডেস্ট্রয়েড’ বেশ সাড়া জাগায়।

১৯৪৭ সালে প্রকাশিত হয় ‘দি এথিক্স অব এমবিগিউটি’। অনেকে বলেন এটি সার্ত্রের বিখ্যাত ‘বিং এন্ড নাথিংনেস’ দ্বারা অনুপ্রাণিত। এ প্রসঙ্গে সিমন বলেন, তিনি সার্ত্রের চিন্তা এবং দর্শন দ্বারা কখনোই প্রভাবিত ছিলেন না। তিনি নিজেকে একজন দার্শনিকের চেয়ে বরং সাহিত্যিক হিসেবেই দেখতে বেশি ভালোবাসতেন। ১৯৮১ সালে সার্ত্রের জীবনের শেষ বছরগুলোর স্মৃতি নিয়ে প্রকাশ করেন ‘এ ফেয়ারওয়েল টু সার্ত্র’।

তার ‘দি সেকেন্ড সেক্স’কে ‘দ্বিতীয় লিঙ্গ’ নামে অনুবাদ করেনে হুমায়ুন আজাদ। এ ছাড়া তার আরও কিছু বই বাংলায় অনুদিত হয়েছে।

১৯৮৬ সালের ১৪ এপ্রিল সিমন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/ এমডি/জানুয়ারি ০৯, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

এই দিনে এর সর্বশেষ খবর

এই দিনে - এর সব খবর