thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ৫ মে 24, ২১ বৈশাখ ১৪৩১,  ২৬ শাওয়াল 1445

কোন এমপির নির্দেশে চলবে প্রশাসন!

২০১৪ জানুয়ারি ০৯ ২০:৩২:০৭
কোন এমপির নির্দেশে চলবে প্রশাসন!

নবনির্বাচিত সদস্যদের শপথ গ্রহণের মধ্যদিয়ে নতুন এক সংকটে পড়েছে দেশ। ৩শ’ আসনে সংসদ সদস্য সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮৪ জনে। এই মুহূর্তে স্থানীয় প্রশাসন ঠিক কাদের নির্দেশনা মেনে চলবেন এ নিয়েও চলছে বিতর্ক।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, নতুন সদস্যদের শপথ গ্রহণের মধ্যদিয়ে নবম সংসদের মেয়াদের ইতি ঘটেছে।

সংবিধান বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী দুই সংসদের সদস্যরাই তাদের স্ব স্ব পদে বহাল আছেন। সে ক্ষেত্রে বৃহস্পতিবার শপথ গ্রহণ করা ২৮৪ জন সদস্য আগের ৩০০ জনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।

ভিন্ন কথা বলেছেন অ্যাটর্নি জেনারেলসহ অন্যান্য আইনজ্ঞরা। তাদের মতে, নবম সংসদের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই সংসদের সবাই এমপি হিসেবে বিবেচিত হবে। আবার শপথ গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই নতুনরাও দায়িত্ব গ্রহণ করেছে বলে বিবেচিত হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার ২৮৪ জন সদস্য শপথ গ্রহণ করেছেন। নির্বাচিতদের মধ্যে ৫ জন শপথ নেননি। সদস্য পদ স্থগিত রয়েছে দুইজনের। প্রধানমন্ত্রীর দুটি আসনের একটি ছেড়ে দিয়েছেন; যেখানে পুনর্নির্বাচন হবে। এ ছাড়াও আরও ৮টি আসনের নির্বাচন আগামী ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ সংবিধানের ৭২(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘রাষ্ট্রপতি পূর্বে ভাঙিয়া না দিয়া থাকিলে প্রথম বৈঠকের তারিখ হইতে পাঁচ বছর অতিবাহিত হইলে সংসদ ভাঙিয়া যাইবে’। আর সংসদ ভেঙে গেলে আইনগতভাবেই সংসদ সদস্যরা তাদের পদ মর্যাদা হারাবেন। কিন্তু নবম সংসদ রাষ্ট্রপতি এখনও ভেঙে দেননি কিংবা প্রথম অধিবেশন বসা থেকে পাঁচ বছর পূর্ণও হয়নি। পাঁচ বছর পূর্ণ হবে ২৪ জানুয়ারি। কারণ ২০০৯ সালের ২৪ জানুয়ারি নবম সংসদের প্রথম অধিবেশন বসেছিল।

বৃহস্পতিবার আবার দশম সংসদের সদস্যরা শপথ গ্রহণ করেছেন। জনগণের জিজ্ঞাসা তা হলে আমাদের দেশের এখন এমপি কারা? আর কোনো সদস্যরা দাপ্তরিক ও আইন প্রণয়নের কাজ করবেন? এ নিয়ে সংবিধান ও আইনজ্ঞদের মাঝে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে, নবম সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন শেষে দশম সংসদ গঠন ও তার কার্যকারিতা নিয়েও সংবিধান ও আইনজ্ঞদের মাঝে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।

সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে- (ক) মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে; এবং (খ) মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্যকোনো কারণে সংসদ ভাঙিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙিয়া যাইবার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে: তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার (ক) উপ-দফা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিগণ, উক্ত উপ-দফায় উল্লিখিত মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত, সংসদ সদস্যরূপে কার্যভার গ্রহণ করিবেন না।’ অর্থাৎ সংবিধানের এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ নির্বাচন যখনই হোক, আগের সংসদের মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত তারা কোনোভাবেই সংসদ সদস্য হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করবেন না।

অপরদিকে, সংবিধানের ১৪৮(২)(ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘১২৩ অনুচ্ছেদের (৩) দফার অধীন অনুষ্ঠিত সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচনের ফল সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপিত হইবার তারিখ হইতে পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে এই সংবিধানের অধীন এতদুদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা তদুদ্দেশ্যে অনুরূপ ব্যক্তি কর্তৃক নির্ধারিত অন্যকোনো ব্যক্তি যেকোনো কারণে নির্বাচিত সদস্যদের শপথ পাঠ পরিচালনা করিতে ব্যর্থ হইলে বা না করিলে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার উহার পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে উক্ত শপথ পাঠ পরিচালনা করিবেন, যেন এই সংবিধানের অধীন তিনিই ইহার জন্য নির্দিষ্ট ব্যক্তি।’

অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন থেকে গেজেট প্রকাশিত হবার তিন দিনের মধ্যে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ করতে সংবিধানে বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়েছে।
একইসঙ্গে সংবিধানের ১৪৮(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়, ‘এই সংবিধানের অধীন যে ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তির পক্ষে কার্যভার গ্রহণের পূর্বে শপথগ্রহণ আবশ্যক, সেই ক্ষেত্রে শপথগ্রহণের অব্যবহিত পর তিনি কার্যভার গ্রহণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে।

অর্থাৎ শপথগ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই দশম সংসদের সদস্যরা তাদের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এদিকে, আবার নবম সংসদের সদস্যরাও এখনও দায়িত্বে আছেন।

তা হলে দেশে এখন সর্বমোট ৫৮৪ জন সংসদ সদস্য। আগের ৩৫০ জন, বর্তমানের ২৮৪ জন। এ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘নবম সংসদের এমপিরা এখনও তাদের আসনে আইনগতভাবে অধিষ্ঠিত আছেন। তবে কোনো কার্যক্রম করতে পারছেন না।

তিনি বলেন, এমপিদের মূল কাজ হল আইন প্রণয়ন করা। যেহেতু নবম সংসদের শেষ অধিবেশন হয়ে গেছে, সেহেতু নবম সংসদের সদস্যরা আইনগতভাবে এমপি থাকলেও আইন প্রণয়নের কোনো কাজ করতে পারছেন না।

আবার সংবিধানের ১২৩ ধারা মোতাবেক নতুন এমপিরা আইনের আওতায় থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন। তবে নবম সংসদের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা কোনো আইন প্রণয়ন করতে পারবেন না।’

তা হলে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে কোনো আইন প্রয়োজন হলে তা কীভাবে তৈরি করা হবে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, যেহেতু দুই সংসদের কোনোটিরই আইন প্রণয়নের ক্ষমতা নেই, তাই সংবিধানের ৯৩ অনুচ্ছেদের প্রদত্ত ক্ষমতা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করে আইন প্রণয়ন করবেন।

এ বিষয়ে ব্যারিস্টার রফিক উল হক বলেন, ‘সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদ অনুসরণ করে বর্তমান সরকারের পুনর্নির্বাচিত এমপিরা ক্ষমতায় আছেন। সংবিধানে এমন বিধানই রয়েছে। তাই এ নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকার কথা নয়।’ তবে যে আসনে নতুন প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন সেখানে কী হবে- এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।

এ প্রশ্নে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, নবম সংসদ বহাল কিনা সেটি আইনি ব্যাখ্যার বিষয়। তিনি বলেন, ‘নবম সংসদের সদস্যরা আছেন কী-নেই এটি আইনি ব্যাখ্যার বিষয়।

(দ্য রিপোর্ট/এসএ/এসবি/সা/জানুয়ারি ০৯, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর

রাজনীতি - এর সব খবর