thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২০ জমাদিউল আউয়াল 1446

প্রতীক মাহমুদের একগুচ্ছ কবিতা

২০১৪ জানুয়ারি ১০ ২৩:৫৯:০২
প্রতীক মাহমুদের একগুচ্ছ কবিতা

প্রতীক মাহমুদ : জন্ম ৪ মার্চ ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে, বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জে। লেখাপড়া : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, বাংলা সাহিত্য। মূলত কবিতা ও প্রবন্ধ লেখেন। আবৃত্তিসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। আছেন একটি জাতীয় দৈনিকে সহ-সম্পাদক হিসেবে। সম্পাদনা : ধ্রুব (ছোটকাগজ), ২০০৩ থেকে ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। নীলজলে শ্বেতপদ্ম (সমুদ্র গুপ্তকে নিবেদিত গ্রন্থ), ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দ। শেকড় (ছোটকাগজ), ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দ। কাঠখড় (ছোটকাগজ), ২০১১ থেকে বর্তমান। এ ছাড়া সমকালীন কবিতার সংকলন : নদীর কূলে সইষ্যার ফুল, ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দ।

ঘোর

প্রতিবিম্ব দেখে ভয় পেলেও বারবার আয়নার সামনে গিয়েই গত খুঁজি
যেখানে আমার বালকবেলা চশমা পরে বসে আছে,
কিশোর আমি সেতো হারিয়ে গেছি যমুনার জলে,
আর এই যে এখন
এটাতো বিমূর্ত ঘোরে জন্ম নেওয়া এক অস্বচ্ছ জীবন।


শেষ নিয়ে শুরুতে

গন্তব্যে পৌঁছেই ভাবছো এখানেই শেষ?
একটু ভেবে দেখোতো
শেষটা আসলে কোথায়?

তোমার ভেতরে যদি আমিই সুনিশ্চত
তবে শেষটা আমার কাছে
যে আমি আজও শুরুতেই দাঁড়িয়ে...!


মৌলিক মানুষ

গতকালের বিজ্ঞাপন-
‘আগামীকাল নগরীর লাশ ঘরে তুমুল বৃষ্টি হবে
আগ্রহী হাতের ছাউনি প্রয়োজন’।

আজ-
উন্মুখ পৃথিবীর বধিরতায় কোলাহল নেমে এসেছে
প্রত্যেকটা জীবন রং পাল্টাচ্ছে বারবার।

আলোকিত অধ্যায় শেষে এক নির্মোহ মৃত্যুর ঘোষণাপত্র পাঠ হলো এইমাত্র
সঙ্গে সঙ্গে নগরীর সব হাত লাশ ঘরে ছাউনি টানতে ব্যস্ত
ব্যস্ততা জীবনের অধ্যায়গুলোকে কৃত্রিম শ্রদ্ধায় সাজাতে
তারপরও কেউ লাশের ওপরের বৃষ্টি ঠেকাতে পারছে না।
তুমুল বৃষ্টিতে ধুয়ে যাচ্ছে চিটচিটে রক্ত, চাটাইয়ের ময়লা,
প্রিয়জনের স্পর্শ করা কাপড়, কান্নার জল এবং মৃত্যুর ক্লান্তি;
শুধুমাত্র ক্ষতের জায়গা ছাড়া সব ধুয়ে যাচ্ছে।

লাশ ঘরে যিনি পড়ে আছেন তাঁকে হত্যা করা হয়েছে
তাঁকে হত্যা করা হয়েছে কারণ তিনি ছিলেন মৌলিক মানুষ,
তাঁকে হত্যা করা হয়েছে কারণ তাঁর ছিল সাদা বুক,
তাঁকে হত্যা করা হয়েছে কারণ তিনি অবলীলায় মানুষের ইতিহাস বলতেন,
বলতেন পৃথিবী এবং আবাদের ইতিহাস।

কি আশ্চর্য! তাঁকে হত্যা করা হলেও
তাঁর নখ বাড়ছে, চুল বাড়ছে, চোখের পাপড়িও পরিবর্তিত হচ্ছে,
শুধুমাত্র একজোড়া খোলা চোখ মার্বেলের মতো তাকিয়ে একজন মানুষ খুঁজছে,
যাকে তাঁর সমস্ত বুক দেয়া যায়,
দেয়া যায় হত্যার খুব কাছাকাছি যাওয়ার ছাড়পত্র
(মতান্তরে মৌলিক মানুষেরা হত্যার খুব কাছাকাছি অবস্থান করে)।

এইমাত্র বিজ্ঞাপনে প্রকাশ-
‘একজন মৌলিক মানুষের বুক পরিবর্তিত হবে
আগ্রহী প্রার্থীরা লাইনে দাঁড়িয়ে যান,
এই যে শুনছেন?
আপনারা লাইনে দাঁড়িয়ে যান,
দয়া করে লাইনে দাঁড়ান।’


দুঃখিত ও নমস্য চিত্তে জানাচ্ছি-
এই ভাগারে একটিও লোক নেই যে লাইনে দাঁড়াবে।
যারা এতক্ষণ হাতছাউনি বানিয়েছিল,
যারা তাঁর জন্য কান্না করেছে,
যারা মুষ্ঠিবদ্ধ হাতে প্রতিবাদ করেছে,
এমনকি হত্যার প্রতিশোধ চায়,
যাদের উত্তরাধিকারে বনেদি ছাপ,
যারা কথা বলে কথার ভেতর কথা লুকিয়ে,
যারা তাঁর সমান্তরালে পথ চলেছে,
পথে পায়ে আলো ছড়িয়েছে,
তাদের কেউই নেই
হত্যার ভয়কে পাশ কাটিয়ে কেউই আসছে না।

শুধুমাত্র এই আমি একা যাচ্ছি লাশ ঘরে
সমস্ত নগরীর উত্তরাধিকার হয়ে
একজন মৌলিক মানুষের বুক নিজের বুকে তুলে নিতে।


অন্য জন্মে ভালোবাসা

নতুন বীজে জন্ম নেবে সরস ভালোবাসা
জন্মান্ধ তুমি যতোই ভালোবাসা খোঁজো এই আকালে!
দেখবে যুগল বুকে অস্থিরতা নিয়ে সবাই চলছে একই পথে,
পারলে পকেট ভর্তি আগুন নিয়ে সঙ্গে চলো;
অন্তত পুনর্জন্মের আগে কয়েকটা দিন উত্তাপ ছড়াতে পারবে জলের ক্যানভাসে।


রক্ত রঙে মানুষ চেনা

রক্ত রঙে মানুষ চেনা গেলে
সবাই ভালোবাসতে পারে আমাকে, তোমাকে ও তাকে।
রক্ত রঙে মানুষ চেনা গেলে
অনেকেই ঘটনার উল্টোপিঠে সময় ঠেকিয়ে চেটে নিতে পারে লোভ
এবং যাবতীয় জটিল সমাধান।
রক্ত রঙে মানুষ চেনা মানেই তোমার বাইরে তুমি
আর আমার বাইরে কেবল আমারই বিস্তার নিজেকে চেনার জন্য।


বয়স সমাচার

ফিকে প্রতিবিম্ব দেখলেই মনে হয়
আমার বয়স বাড়ছে না
আয়নার বয়স বেড়ে চলছে;
কিছু দ্রষ্টব্য মাথার ভেতর পোকার যন্ত্রণা বাড়ায়
অথচ আমার বয়স বাড়ে না।

শেয়ালমুখো মানুষগুলোও যেন কেমন
আজকাল বগলের নিচে বয়স লুকিয়ে
নিজেদের চারপাশে দাগ টেনে পরিচিত রক্তে চুমুক তুলছে,
অথচ আমি চুমুক তুললেই বিভাজনের রাত্রি,
আমি চুমুক তুলতেই সূর্যহীন দিন;
অতঃপর বিশ্বস্ত প্রস্তাবনার জন্য দায়ী করে
আমার পায়ে স্থির বয়সী বেড়ি
আর শেয়ালমুখো মানুষগুলোর জন্য অন্ধকার ও ছুরি।

ছুরি মাখানো অন্ধকার
অথবা অন্ধকার মাখানো ছুরি
সে যাই হোক-
এগুলোতো একটা রাতকে হত্যা করার জন্য যথেষ্ট।

আজকাল রাত্রির ডাক শোনার জন্য কান খাড়া হয়ে থাকে
ক্ষুধার অস্তিরতা নিয়ে পাশে জেগে থাকে একটা কুকুর
তখন বেশুমার ভয়ে একটা ছায়া কঙ্কাল এসে নাড়া দিয়ে দেখে নেয়
আমি নিঃশ্বাসে আছি কিনা।
নিঃশ্বাসে না থাকলে সে টের পায় মরে গেছে অন্ধকারের ভ্রূণ।

শত চেষ্টায়ও উঠে দাঁড়াবার শক্তি পাই না
খামচি দিয়ে মাটিকে বিছানা ভেবেই শুয়ে থাকি।
তখন চরাচরের স্তব্ধতা নেমে আসে কানের ভেতর-
দেখি স্বপ্নের ঘৌড়দৌড়ে সাম্রাজ্যবাদ বাজি ধরে অনেকেই জিতে যাচ্ছে
অনেকেই প্রতিবিম্ব থেকে বের করে নিচ্ছে নিজেকে
অথচ আমি কেবল শুয়ে নিঃশ্বাসের প্রতীক্ষায়...
তবে কি আমি মৃত রাত্রির মতো স্থির বয়সী মানুষ?



পাঠকের মতামত:

SMS Alert

সাহিত্য এর সর্বশেষ খবর

সাহিত্য - এর সব খবর