thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২২ জমাদিউল আউয়াল 1446

সম্প্রদায়গত সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় রাসূল মুহাম্মদ (সা.)

২০১৪ জানুয়ারি ১৪ ০০:৪০:০৭
সম্প্রদায়গত সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় রাসূল মুহাম্মদ (সা.)

সৈয়দা কানিজ সুলতানা

বর্তমানে আমরা দেখতে পাচ্ছি সম্প্রদায়গত সম্প্রীতি বিনষ্টের জন্য বিভিন্ন মহল থেকে চেষ্টা চলছে। যারা এগুলো করছেন, মূলত তাদের কায়েমি স্বার্থবাদিতার জন্য করছেন। অথচ দ্বীনের নবীর দিকে লক্ষ্য করুন- দেখুন তিনি কেমন ছিলেন। আমরা প্রত্যেকে বিশ্বাস করি হযরত মুহাম্মদ (সা.) পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও সর্বোৎকৃষ্ট মানুষ। তিনি মানব জাতির জন্য এক মহান কল্যাণ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত। আল্লাহতায়ালা তাঁর রাসূল (সা.) সম্পর্কে বলেন— ‘হে রাসূল (সা.) আমি আপনাকে সারা জাহানের রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছি।’ (২১:১০৭)

মহানবী (সা.)-কে সর্বাধিক মানবিক গুণ ও সর্বোত্তম চরিত্র বিশিষ্ট করে মানব জাতির সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে এ জন্য যে, যাতে মানবতার জন্য অনন্য আদর্শ হিসেবে চিরকাল তিনি মানুষকে সত্য, সুন্দর ও মুক্তির পথে আহ্বান জানাতে পারেন। তিনি তাঁর নবুয়াতি জীবনে একদিকে যেমন মানুষের আত্মিক উন্নতি তথা আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক উন্নয়ন, অন্যদিকে, এই পৃথিবীতে মানুষের সঙ্গে মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক কেমন হবে তারও শিক্ষা প্রদান করেছেন। তাঁর এই শিক্ষা যতদিন পর্যন্ত মানুষ যথাযথভাবে পালন করেছে ততদিন দুনিয়ার বুকে শান্তি বিরাজ করেছে।

আর যখনই মানুষ তাঁর শিক্ষা থেকে দূরে সরে গেছে তখনই দেখা দিয়েছে নানা সংকট ও সমস্যা। আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় যে সমস্যা বেশি লক্ষ্যণীয় তা হচ্ছে মানুষে মানুষে সম্পর্ক। এ সম্পর্কের ক্ষেত্রে আজ গোত্র-রক্ত-বর্ণ-ধর্ম-ভাষা নানা প্রভাব ফেলছে অথচ প্রকৃত সত্য হচ্ছে সকল ভাষা, গোত্র, বর্ণ ও ধর্মের মানুষ একই বংশজাত তথা একই পিতা আদম (আ.) ও মা হাওয়া (আ.)-এর সন্তান। পবিত্র কুরআনে এরই সমর্থনে দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা এসেছে— ‘হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে, পরে তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে পার।’ (৪৯:১৩)

রাসূল (স.) আল্লাহ প্রদত্ত এই মূলনীতিকে উপজীব্য করে মানুষে-মানুষে সাম্য-শৃঙ্খলা-ঐক্যের সমন্বয় সাধন করে সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল ও অনুপম নিদর্শন রেখে গেছেন। হিজরতের পর মদিনায় প্রতিষ্ঠিত নগর রাষ্ট্রের জন্য ঘোষিত মদিনা সনদে তিনি এই নীতির সফল বাস্তবায়নও করেন। এটাই পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম লিখিত শাসনতন্ত্র। এর প্রথম শর্তেই ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে একটি জাতিসত্তার কথা বলা হয়। যা জাতীয় ঐক্য ও সংহতি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের ঔজ্জ্বল্যে বিভাসিত হয়। মদিনা সনদে ঘোষণা এসেছে— ‘মদিনায় ইহুদি, খ্রিষ্টান, পৌত্তলিক ও মুসলিম সকলেই এক দেশবাসী, সকলের নাগরিক অধিকার সমান, সকলে নির্বিঘ্নে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে, কেউ কারও ধর্মে হস্তক্ষেপ করবে না।’

মানব ইতিহাসে কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই উদাহরণ এক বিরল ঘটনা। দুনিয়ার সকল মানুষ একই আদমের সন্তান হিসেবে সবাই একে অপরের ভাই। তাই একজন আরেকজনের ওপর প্রভুত্ব করবে, একজন আর একজনকে জুলুমের যাঁতাকলে নিষ্পেষণ-নির্যাতন করবে— এটা তো মানবতাবিরোধী। আর এই পৃথিবীতে বিশ্বনবীর আগমনের উদ্দেশ্য মূলত জুলুম, অত্যাচার দূরীভূত করে প্রকৃত ভ্রাতৃত্বের প্রতিষ্ঠা।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন— ‘অবশ্যই মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। সুতরাং তোমার ভাইয়ের মধ্যে শান্তি স্থাপন কর, যাতে তোমরা রহমত পেতে পার’ (হুজরাত-১০)। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন— সকল মুসলিম একে অন্যের ভাই। তিনি ঐতিহাসিক বিদায় হজ্জ্বের ভাষণে বলেছেন— ‘তোমরা সবাই আদম সন্তান। আর আদম মাটির তৈরি। একমাত্র তাকওয়া ছাড়া অনারবদের ওপর আরবদের আর আরবদের ওপর অনারবদের কোনো প্রাধান্য নেই’ (বায়হাকী)। মহানবী (সা.)-এর এই আদর্শে গোত্রভিত্তিক সমাজের কৃত্রিম আভিজাত্যবোধের মূলে কুঠারাঘাত করে এবং সংকীর্ণ সে সমাজ নির্মূল হয়ে বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধে উজ্জীবিত হয়ে উদার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিভিত্তিক সমাজের উদ্ভব ঘটে।

নবী (সা.)-এর শিক্ষার প্রত্যক্ষ ফল হল গোত্রভিত্তিক সমাজের আধিপত্য বিলোপ সাধন করে ইসলামী ভ্রাতৃত্বে অনুপ্রাণিত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। তিনি কেবল আরববাসীদের মধ্যে কিংবা শুধু মুসলিম উম্মাহর মধ্যেই নয় বরং জাতি বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্বের সমস্ত মানবের মধ্যে সম্প্রীতি, শান্তি ও ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করে দুনিয়ায় এক অক্ষয় আদর্শের প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তাঁর আদর্শের মূল ভিত্তি হল ধর্ম, জাতি, দেশ ভিন্ন হলেও সকল মানুষ মূলত একই পরিবারভুক্ত। মুসলিম-অমুসলিম সকল বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে তিনি উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন— অমুসলিমদের জান ও মাল এবং আমাদের জান ও মাল এক ও অভিন্ন।

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

ধর্ম এর সর্বশেষ খবর

ধর্ম - এর সব খবর