thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১,  ২০ জমাদিউস সানি 1446

জিয়াউর রহমান

২০১৪ জানুয়ারি ১৯ ০০:২১:১৬
জিয়াউর রহমান

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি, সাবেক সেনাপ্রধান এবং সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়া জেলার বাগমারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য তিনি বাংলাদেশ সরকারের বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত।

মনসুর রহমান ও জাহানারা খাতুনের পাঁচ ছেলের মধ্যে জিয়াউর রহমান ছিলেন দ্বিতীয়। মনসুর রহমান কলকাতায় সরকারি রসায়নবিদ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। জিয়াউর রহমানের পড়ালেখা শুরু কলকাতার হেয়ার স্কুলে। করাচি একাডেমি স্কুল থেকে ১৯৫২ সালে মাধ্যমিক পাস করেন এবং ১৯৫৩ সালে করাচিতে ডিজে কলেজে ভর্তি হন। ওই বছর তিনি কাকুল মিলিটারি একাডেমিতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন।

১৯৫৫ সালে তিনি সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশনপ্রাপ্ত হন। ১৯৫৭ সালে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে বদলি হয়ে আসেন। ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করেন। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে একটি কোম্পানির কমান্ডার হিসেবে খেমকারান সেক্টরে তিনি বীরত্বের পরিচয় দেন। এ জন্য পাকিস্তান সরকার তাকে হিলাল-ই-জুরাত খেতাবে ভূষিত করে। এ ছাড়াও তার ইউনিট দুটি সিতারা-ই-জুরাত ও নয়টি তামঘা-ই-জুরাত মেডেল লাভ করে। ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে পেশাদার ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৬৯ সালে মেজর পদে উন্নীত হয়ে জয়দেবপুরে সেকেন্ড ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড ইন কমান্ড পদ লাভ করেন। ১৯৭০ সালে মেজর হিসেবে দেশে ফিরে আসেন এবং চট্টগ্রাম অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড ইন কমান্ড পদের দায়িত্ব লাভ করেন।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঢাকায় পশ্চিম পাকিস্তানী বাহিনীর আক্রমণের পর জিয়াউর রহমান বিদ্রোহ করেন এবং ২৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। তার বাহিনী বেশ কয়েকদিন চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়। পরবর্তী সময়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর অভিযানের মুখে সীমান্ত অতিক্রম করেন তিনি।

১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠিত হলে প্রথমে তিনি এপ্রিল হতে জুন পর্যন্ত ১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার এবং এরপর জুন হতে অক্টোবর পর্যন্ত যুগপৎ ১১ নম্বর সেক্টর ও জেড-ফোর্সের কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

স্বাধীনতার পর তাকে কুমিল্লায় সেনাবাহিনীর ব্রিগেড কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং ১৯৭২ সালের জুন মাসে ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ করা হয়। ১৯৭৩ সালের মাঝামাঝি ব্রিগেডিয়ার পদে এবং ওই বছরের শেষের দিকে মেজর জেনারেল পদে নিযুক্ত হন তিনি।

১৯৭৫ সালের ২৫ আগস্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে পদোন্নতি পেয়ে সেনাবাহিনীর প্রধান নিযুক্ত হন জিয়াউর রহমান। ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বরে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর বীর বিক্রম কর্নেল শাফায়াত জামিলের নেতৃত্বাধীন ঢাকা ৪৬ পদাতিক ব্রিগেডের সহায়তায় বীর উত্তম মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান ঘটান। এরপর জিয়াউর রহমানকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয় এবং ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের বাসভবনে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। বীর উত্তম কর্নেল (অব.) আবু তাহেরের নেতৃত্বে ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটায় এবং দ্বিতীয় ফিল্ড আর্টিলারির সেনাসদস্যরা লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদের (আর্টিলারি) নেতৃত্বে জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দীত্ব থেকে মুক্ত করে। এরপর তিনি ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসেন।

১৯৭৬ সালের ১৯ নভেম্বর তাকে পুনরায় সেনাবাহিনীর চিফ অফ আর্মি স্টাফ পদে নিযুক্ত করা হয়। ২৯ নভেম্বর তিনি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব নেন। ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত হন। ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে প্রধান করে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) প্রতিষ্ঠা করেন। মে মাসে ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। আস্থা যাচাইয়ের জন্য ৩০ মে গণভোট অনুষ্ঠান ও হ্যাঁ-সূচক ভোটে বিপুল জনসমর্থন লাভ করেন। ছয়টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় ফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ৩ জুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজয়ী হন। ১ সেপ্টেম্বর তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন।

তিনি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদকে জনপ্রিয় করে তোলেন। পুলিশ বাহিনীর সংখ্যা আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ করে যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ‍সশস্ত্র বাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন। নির্বাচন ব্যবস্থা পুনর্বহাল এবং অবাধ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ দিয়ে রাজনীতির গণতন্ত্রায়নে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগের আমলে নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের কার্যক্রম পুনরুজ্জীবিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সংবাদপত্রের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন। গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠন করেন। একুশে পদক প্রবর্তন করেন।

তিনি কূটনৈতিক সম্পর্কেও বিশেষ পরিবর্তন আনেন। এর উল্লেখযোগ্য দুটি দিক হলো- সোভিয়েত ব্লক থেকে সরে আসা ও মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন। চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনে উদ্যোগ নেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র ও আরব বিশ্বের সঙ্গে শীতল সম্পর্ক স্বাভাবিক করেন।

১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ শক্তিশালী জাপানকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য নির্বাচিত হয়। তার অন্যতম বড় অবদান হলো- দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহায়তা সংস্থা (সার্ক) গঠনের উদ্যোগ।

স্থানীয় সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যকার কলহ থামানোর জন্য ১৯৮১ সালের ২৯ মে তিনি চট্টগ্রামে যান। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে অবস্থানকালে ৩০ মে গভীর রাতে মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুরের নেতৃত্বে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি নিহত হন।

১৯৬০ সালে দিনাজপুরের খালেদা খানমকে তিনি বিয়ে করেন। যিনি বর্তমানে বিএনপির চেয়ারপারসন। তাদের দুই সন্তান তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান। তারেক রহমান বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান।

(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/এমএআর/জানুয়ারি ১৯, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

এই দিনে এর সর্বশেষ খবর

এই দিনে - এর সব খবর