thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১,  ২০ জমাদিউস সানি 1446

শহীদ আসাদ

২০১৪ জানুয়ারি ২০ ০৪:১০:৫১
শহীদ আসাদ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ছাত্রনেতা আমানুল্লাহ আসাদুজ্জামান ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তিনি শহীদ আসাদ নামে পরিচিত। আসাদ ঊনসত্তরের গণ আন্দোলনে পথিকৃৎ তিন শহীদের একজন। অন্য দুজন হলেন শহীদ রুস্তম ও শহীদ মতিউর।

আসাদ ১৯৪২ সালের ১০ জুন নরসিংদী জেলার শিবপুরের ধানুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬০ সালে শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করে। পরে জগন্নাথ কলেজ (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) ও মুরারী চাঁদ মহাবিদ্যালয়ে পড়েন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৬ সালে বিএ এবং ১৯৬৭ সালে এমএ পাস করেন। পরে ভালো ফলাফলের জন্যে দ্বিতীয়বারের মতো এমএ ডিগ্রী অর্জনের জন্য চেষ্টা করেন। ১৯৬৯ সালে মৃত্যুকালীন সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে এমএ শেষবর্ষের ছাত্র ছিলেন।

১৯৬৭ সালে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে (ন্যাপ) যোগ দেন। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নির্দেশনায় কৃষক সমিতিকে সংগঠিত করতে শিবপুর, মনোহরদী, রায়পুরা এবং নরসিংদী এলাকায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। এছাড়া শিক্ষাকেন্দ্রিক সমাজ সংস্কারমূলক কাজের সঙ্গে তিনি যুক্ত হন। শিবপুর নৈশ বিদ্যালয় নামে একটি নৈশ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং শিবপুর কলেজ প্রতিষ্ঠায় স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের নিয়ে আর্থিক তহবিল গড়ে তোলেন।

তিনি ঢাকা হল (বতর্মান শহীদুল্লাহ হল) শাখার পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি এবং পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (ইপসু-মেনন গ্রুপ) ঢাকা শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রদের ১১ দফা এবং বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, যাতে প্রধান ভূমিকা রাখেন আসাদ। ১৭ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ছাত্ররা দেশব্যাপী সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ডাক দেয়। প্রতিক্রিয়াস্বরূপ গভর্নর মোনায়েম খান ১৪৪ ধারা আইন জারি করেন- যাতে চার জনের বেশি লোক একত্রিত হতে না পারে। পরিকল্পনানুসারে ২০ জানুয়ারি দুপুরে ছাত্রদেরকে নিয়ে চাঁন খাঁ'র পুল এলাকায় মিছিল নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিলেন আসাদ। পুলিশ তাদেরকে চাঁন খাঁ'র ব্রীজে বাধা দেয় ও চলে যেতে বলে। কিন্তু ছাত্ররা সেখানে প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থান নেয় এবং সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় আসাদকে লক্ষ্য করে এক পুলিশ অফিসার গুলি করে। গুরুতর আহত আসাদকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে। কেন্দ্রীয় প্রতিরোধ কমিটি তাকে শ্রদ্ধা জানাতে ২২, ২৩ ও ২৪ জানুয়ারি সারাদেশে ধর্মঘট আহ্বান করে। ধর্মঘটের শেষ দিনে পুলিশ পুনরায় গুলিবর্ষণ করে। ফলশ্রুতিতে সরকার দুই মাসের জন্য ১৪৪ ধারা স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়। পরের বছর শহীদ আসাদ দিবস পালনের জন্য পূর্ব বাংলা বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন ওই তারিখে পূর্ণ দিবস হরতাল আহ্বান করে।

আসাদের রক্তমাখা শার্ট বাংলাদেশের স্বাধীনতায় প্রতীকি সম্মান লাভ করে। কবি শামসুর রাহমান লিখেন কবিতা ‘আসাদের শার্ট’ এবং ক্ষোভ প্রকাশ করে কবি হেলাল হাফিজ লিখেন ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ শিরোনামের কবিতা। আলোকচিত্র শিল্পী রশীদ তালুকদার ছাত্র-জনতার দীর্ঘ মিছিলসহ আসাদের শার্টের ছবি ওঠান।

অনেক জায়গায় আইয়ুব খানের নামফলক পরিবর্তন করে শহীদ আসাদ রাখা হয়। বিশেষত জাতীয় সংসদ ভবনের ডান পাশের আইয়ুব গেটের নাম পরিবর্তন করে আসাদ গেট রাখা হয়। এছাড়া আইয়ুব এভিনিউয়ের পরিবর্তে আসাদ এভিনিউ এবং আইয়ুব পার্কের পরিবর্তে আসাদ পার্ক করা হয়।

১৯৭০ সালে শহীদ আসাদ দিবসে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটকে ‘ঊনসত্তরের গণ অভ্যুত্থানের স্মারক ও অমর আসাদ’ শিরোনামে একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়। ১৯৯২ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের গেটের উত্তর দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসু ‘গণজাগরণ’ নামে নির্মাণ করে আসাদের স্মৃতিস্তম্ভ। শিল্পী প্রদ্যোৎ দাস এ ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছিলেন। শিবপুর ও ধানুয়া এলাকার স্থানীয় জনগণ ১৯৭০ সালে শিবপুর শহীদ আসাদ কলেজ এবং ১৯৯১ সালে আসাদের নিজের গ্রাম ধানুয়ায় শহীদ আসাদ কলেজিয়েট গার্লস স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করে।।

(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/জানুয়ারি ২০, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

এই দিনে এর সর্বশেষ খবর

এই দিনে - এর সব খবর