thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ১৮ জমাদিউল আউয়াল 1446

দুই নেত্রীর টেলি-সংলাপের আড়ালে!

২০১৩ অক্টোবর ৩১ ১৩:১২:০৮
দুই নেত্রীর টেলি-সংলাপের আড়ালে!

ফকির শওকত : দেশে রাজনীতির যে কুটচাল চলছে তার সর্বশেষ সংযোজন দুই নেত্রীর টেলি-সংলাপ। এই সংলাপে দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটের সুরাহা যারা আশা করেন তারা আমাদের মতো অতি আশাবাদী সাধারণ মানুষ, যারা সংলাপ করেছেন তারা নন। তাই দীর্ঘদিন যাদের মধ্যে কোনো কথাবার্তা হয় না ক্যামেরার সামনে তারা কত আন্তরিক, কত হাসিখুশি।

ক্যামেরার এ দৃশ্য দেখে আমাদের মতো আশাবাদীরা এমনও ভাবতে পারেন যে দুই নেত্রী হয়ত একমত হয়েছেন যে আগামী দিন তারা একটি সর্বদলীয় জাতীয় সরকার গঠন করতে চলেছেন। যেখানে এক নেত্রী হবেন প্রেসিডেন্ট অন্যজন প্রধানমন্ত্রী। তারা যেন এতেও একমত হয়েছেন যে, চলতি পার্লামেন্টেই সংবিধান সংশোধন করে প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় এমন ভাবে ভারসাম্য আনা হবে যেন আগামীতে ইন্টারচেন্জ হলেও ক্ষমতায় কেউ কাউকে টপকে না যান। পুতিন ও মেদভেদ রাশিয়াকে যেভাবে চালাচ্ছেন দুই নেত্রী বাংলাদেশকেও সেভাবে চালাবেন।

কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন! দুই নেত্রীর টেলিফোন সংলাপ নিয়ে একটু বিশ্লেষণ করলেই দেখা যাবে গভীর রাজনৈতিক চালে একে অপরকে ঘায়েল করাই তাদের লক্ষ্য। কে জিতেছেন কে হেরেছেন তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। তবে দুজনই যে রাজনীতির ভালো খেলোয়াড় সে কথা স্বীকার করতেই হবে।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু আগেই বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী যেকোনো সময় বিরোধী নেত্রীকে ফোন করতে পারেন। ২৬ অক্টোবর দুপুরে প্রধানমন্ত্রী বিরোধী নেত্রীর লাল ল্যান্ডফোনে আধা ঘণ্টা চেষ্টা করেও তাকে পাননি। তবে সন্ধ্যা ৬টায় তিনি তাকে মোবাইল ফোনে ঠিকই পেলেন, যখন প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে অনেক সাংবাদিক, অনেক ক্যামেরা। দুই জনের মধ্যে প্রায় ৪০ মিনিট কথা হলো। প্রধানমন্ত্রী ২৮ তারিখ রাতে তার সরকারি বাসভবনে দলের অন্যান্য নেতাসহ তাকে রাতের খাবারের দাওয়াত দিলেন। তার ডাকা ৬০ ঘণ্টার হরতাল তুলে নেওয়ারও অনুরোধ জানালেন। খালেদা জিয়া তার জবাবে জানালেন হরতাল শেষে ২৯ তারিখ সন্ধ্যা ৬টার পর যেকোনো সময় তিনি দাওয়াত নিতে প্রস্তুত। এ সবই জানা গেলো টেলি-সংলাপ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে দুই দলের মুখপাত্রদের বয়ান থেকে।

এই টেলি-সংলাপে দেশের রাজনৈতিক সংকট মীমাংসা হোক বা না হোক এ থেকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের লড়াই শুরু করেছেন দু-পক্ষই। সরকার পক্ষ বলছেন প্রধানমন্ত্রী বিরোধী নেত্রীর সংলাপের আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রমাণ করেছেন সংকট নিরসনে তিনি আন্তরিক, বিরোধী পক্ষ বলছেন সরকার আন্তরিক হলে একদিন আগে পিছে কি-বা আসে যায়।

অনেক বিশ্লেষক আবার প্রধানমন্ত্রীর টেলিফোন করা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর ল্যান্ডফোনে বিরোধী নেত্রীকে আধা ঘণ্টা ধরে খোঁজা নিয়েই তাদের প্রশ্ন। তাদের প্রশ্ন শেষ পর্যন্ত সন্ধ্যা ৬টায় যখন মোবাইল ফোনেই কথা হল দুপুরে সেটি করা হলো না কেন? বিরোধী নেত্রীর আল্টিমেটামকে উপেক্ষা করতেই তার এই চাল কিনা সে প্রশ্নও করেছেন তারা। অনেকে অবশ্য মনে করছেন বিরোধী নেত্রী যাতে হরতালের দায় এড়াতে না পারেন সে লক্ষ্যেই প্রধানমন্ত্রীর সন্ধ্যা ৬টার এ টেলি-সংলাপ।

তবে রাজপথে মীমাংসায় যারা বিশ্বাস করেন তারা মনে করছেন আন্দোলনে সফলতা-বিফলতার উপরই নির্ভর করছে জয় পরাজয়। এর বাইরেও জন-ভাবনা রয়েছে। রাজপথের সংঘাত অরাজনৈতিক তৃতীয় শক্তির আগমনকে ত্বরান্বিত করবে না তো? সংকট মীমাংসায় বিদেশিদের আপাতসাধু উদ্যোগের পেছনেও অনেকে গভীর ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন। একটি তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তির উত্থান যে হতে পারে না, সে সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দিচ্ছেন না আশাবাদীরা। তারা চাইছেন একটি রাজনৈতিক শক্তির উত্থান-যারা দেশকে একটি আধুনিক শাসনতন্ত্র দেবে, দেবে কল্যাণকর একটি অর্থনীতি, ফিরিয়ে আনবে পারস্পরিক আস্থার সামাজিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক। এর জন্য ত্যাগ স্বীকারেও তারা প্রস্তুত। তবে রাজি নয় এমন কোনো পরিবর্তনে, যাতে শুধুই ক্ষমতার হাত বদল ঘটবে গুণগত কোনো পরিবর্তন আসবে না, শুরু হবে আর এক অনিশ্চিত যাত্রার।

পাঠকের মতামত:

SMS Alert