thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১,  ২২ জমাদিউস সানি 1446

সাক্ষাৎকারে ড. হাছান মাহমুদ

‘আমরা ওয়াক ওভার পেয়েছি’

২০১৪ জানুয়ারি ২২ ১৯:৩৩:৩৭
‘আমরা ওয়াক ওভার পেয়েছি’

ড. হাছান মাহমুদ এমপি। প্রচার সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সাবেক মন্ত্রী, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়। গত সরকারের একমাত্র মন্ত্রী যিনি প্রতিমন্ত্রী থেকে মন্ত্রিত্বে পদোন্নতি পেয়েছিলেন। সম্প্রতি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তবে বাদ পড়েছেন মন্ত্রিসভা থেকে। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে তার দলীয় প্রধানের ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দ্য রিপোর্টের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

নির্বাচন শেষে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কিছুটা দূর হলেও আশঙ্কার কথা বলছেন অনেকে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি নির্বাচনের আগে এবং পরে সাধারণ মানুষের অনেক ক্ষতি করেছে। কোনো সভ্য দেশে এমনটা হতে পারে না।

এখন স্থিতিশীলতা এসেছে। বর্তমান সরকার এর ধারবাহিকতা রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আশা করি বিএনপি এসব হটকারী কার্যক্রম থেকে সরে আসবে।

কিন্তু নির্বাচন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা তো পিছু ছাড়ছে না- এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের রেফারি নির্বাচন কমিশন। তারা সব দলকে খেলায় ডেকেছেন। বিএনপি তাতে আসেনি। আমরা ওয়াক ওভার পেয়েছি।

-এতে কি গণতন্ত্রের সৌন্দর্য থাকে?

ড. হাছান বলেন, গণতন্ত্রের সৌন্দর্য রক্ষা শুধু এক দলের দায়িত্ব নয়। তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল সেই দায়িত্ব পালন করেনি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বরং গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছে। বিএনপি নির্বাচনে এলে ১৫৩ আসনে আমরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে পারতাম না।

বিরোধী দলসহ সরকার গঠন প্রসঙ্গে পাকিস্তানের উদাহরণ টেনে আওয়ামী লীগের এই প্রচার সম্পাদক বলেন, পিপিপি সরকারে নওয়াজ শরীফের দলও অংশ নিয়েছিল।

পাকিস্তান কি আমাদের জন্য মডেল হতে পারে, হওয়া উচিত? জবাবে তিনি বলেন, আমি উপমহাদেশের একটি দেশের উদারহরণ দিলাম। পাকিস্তান আমাদের উদাহরণ হওয়া উচিত নয়। পৃথিবীর অন্যান্য অনেক দেশে এমন সরকার গঠন হয়েছে আগে।

-কোন দেশে হয়েছিল?

আমি সুনির্দিষ্টভাবে সময় বলতে পারছি না। তবে বৃটেন, ইটালিতে এ রকম সরকার গঠন হয়েছিল। বিএনপি নির্বাচনে এলে তাদেরও মন্ত্রিসভায় নেওয়ার উদ্যোগ নিতাম আমরা।

তার মানে আপনারা আগে থেকেই ‘জয়ী’ ভাবছিলেন নিজেদের?-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মহাজোট সরকার দেশকে যে উন্নয়ন-অগ্রগতি উপহার দিয়েছে তাতে জয়ের ‘আশা’ আমরা করতেই পারি। বর্তমান মন্ত্রিসভা অত্যন্ত উদ্যমী। জননেত্রীর নেতৃত্বে দেশ আরও এগিয়ে যাবে।

গত মন্ত্রিসভায় ছিলেন। এবার বাদ পড়ার কারণ কী বলে মনে করেন? হাছান মাহমুদ বলেন, আমি দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছি। সব মন্ত্রিসভায় থাকতে হবে এমন কোনো কথা নেই। এবার প্রধানমন্ত্রী দল ও সরকারের মধ্যে দূরত্ব রেখেছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের সেই পথ দেখিয়ে গিয়েছেন। দলের আদর্শ বাস্তবায়নের জন্যই সরকার গঠন হয়। তাই দল ও সরকার যেন একে অপরের মধ্যে ঢুকে না পড়ে।

কিন্তু আপনাদের দলের প্রধান দু’জন উভয় জায়গাতেই আছেন, তাই নয় কি?-এ প্রশ্নের উত্তরে এই সংসদ সদস্য বলেন, দেখুন, দুটি প্রতিষ্ঠানের (সরকার ও দল) মধ্যে সঠিক সম্পর্ক রাখারও কিন্তু প্রয়োজন আছে। সেইদিক বিবেচনায় হয়তো প্রধানমন্ত্রী এই রকম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর মধ্যে নেতিবাচক কিছু নেই। সরকার ও দলের সু-সম্পর্ক থাকাও গুরুত্বপূর্ণ।

বিগত নির্বাচনে আপনার হলফনামায় প্রকাশিত সম্পদের বিবরণী নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। এ প্রসঙ্গে কি বলবেন? ড. হাছান বলেন, ভুল ও আংশিক তথ্য প্রকাশ হত্যার চেয়েও জঘন্য কাজ। একজন মানুষের দীর্ঘদিনের গড়ে ওঠা ইমেজ ভুলভাবে ব্যাখ্যার মাধ্যমে ক্ষতি করা ঠিক না।

-কি ধরনের ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে?

সঠিক হিসেব করলে দেখা যাবে আমার সম্পদের চেয়ে দেনার পরিমাণ বেশি।

-কিভাবে?

২০০৮ সালে আমার বাবা জীবিত ছিলেন। তখন বাবার কোনো সম্পত্তি আমার নামে ছিল না। ২০১১ সালে আমার বাবা মারা যান। এখন আমি উত্তরাধিকার সূত্রে অনেক সম্পত্তির মালিক হয়েছি। কিছু পত্রিকায় এ সব না জেনেই প্রতিবেদন করেছে। অনেকে লিমিটেড কোম্পানির শেয়ারকে অস্থাবর সম্পত্তি দেখিয়েছে। এটা ঠিক না। বেশিরভাগ প্রার্থী এ সব হিসাব দেননি। আমি স্বচ্ছতার জন্য দিয়েছি। কিন্তু ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

আমার ব্যক্তিগত ঋণ ১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। ব্যবসায়িক ঋণ প্রায় ৬ কোটি টাকা। এ সবের হিসেব কেউ ঠিকভাবে দেননি।

আলাপকালে ড. হাছান মাহমুদ তার সময়ে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনেক অর্জনের কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব পালনকালে ইন্টারন্যাশনাল গ্রিন অ্যাওয়ার্ড, আর্থ অ্যাওয়ার্ড, উপকূলীয় বনাঞ্চলের কারণে জাতিসংঘ পুরস্কারসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছি।

কিন্তু আপনার দায়িত্বকালেই রামপালের মতো বিতর্কিত একটি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। এই বিষয়ে হাছান বলেন, রামপাল নিয়ে অযথাই বিতর্ক তৈরি করা হয়েছে। জার্মানিতে দেখা একটি কয়লা খনি পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, সেখানে ঘনবসতি ও বনের পাশে কয়লা বিদ্যুৎ হয়েছে। আমাদের সুন্দরবন থেকে রামপালের দূরত্ব ১২ কিলোমিটারের বেশি। এতে কোনো সমস্যা হবে না।

আমি দায়িত্ব নেওয়ার সময় দেশে বনভূমির পরিমাণ ছিল ৯.৫ শতাংশ, দায়িত্ব ছাড়ার সময় ১৩.২ শতাংশ রেখে এসেছি। এটা আমাদের হিসেব নয়, ইউএস ফরেস্ট্রি বিভাগ ও বাংলাদেশ বন বিভাগের যৌথ সমীক্ষা। অন্যদিকে আমার দায়িত্ব নেওয়ার সময় বছরে গাছের চারা লাগানো হতো ৪ কোটি। সর্বশেষ ১২ কোটির ওপর গাছের চারা রোপণ করেছি আমরা।

জাতীয় পরিবেশ পদক চালু করার বিষয়ে ড. হাছান বলেন, আমরাই প্রথম পরিবেশ পদক চালু করি। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনসহ (বাপা) একটি পত্রিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা আমাদের বেশি সমালোচনা করেন তাদেরই পুরস্কৃত করেছি। একই সঙ্গে যারা কোনোদিন পুরস্কারের আবেদন তো দূরের কথা চিন্তাই করতো না তাদেরও পুরস্কার দিয়েছি। তাদের মধ্যে ১০ হাজার গাছ লাগানো একজন ভিক্ষুক এবং একজন বীজ সংরক্ষণকারী সাধারণ কৃষক পুরস্কার পেয়েছেন।

আপনি ইটিপি’র (তরল বর্জ্য পরিশোধনাগার) বহুল ব্যবহার নিশ্চিতের কথা বললেন। প্রশ্ন হচ্ছে কারখানাতে এ যন্ত্র বসানো হলেও কম ব্যবহারের অভিযোগ বেশি। জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, এই অভিযোগ আমরাও পেয়েছি। এর সত্যতাও আছে। যন্ত্রটির ব্যবহার নিশ্চিতের জন্য যথেষ্ট জনবল নেই। তবে ইটিপি পরিচালনা মনিটরিংয়ের জন্য নতুন একটি যন্ত্র বসানোর দরকার। যদিও সেটা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারিনি।

আপনার পক্ষ থেকে নতুন মন্ত্রীর প্রতি কী পরামর্শ থাকবে? সাবেক এই বনমন্ত্রী বলেন, এখনকার মন্ত্রী অনেক অভিজ্ঞ। তিনি ভালো চালাবেন। তারপরও আমার সময়ে নেওয়া একটি উদ্যোগের কথা বলব। পলিথিনের ব্যবহার রোধে রিসাইক্লিংয়ের একটি উদ্যোগ নিয়েছিলাম। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে প্লাস্টিকের বোতলের মতো পলিথিনও রাস্তায় দেখা যাবে না। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারলে নগরবাসী অনেক ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাবেন। দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাবে পরিবেশ।

(দ্য রিপোট/বিকে/এইচএসএম/এনআই/জানুয়ারি ২২, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশেষ সংবাদ এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ সংবাদ - এর সব খবর