thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১,  ১৩ জমাদিউল আউয়াল 1446

মাইকেল মধুসূদন দত্ত

২০১৪ জানুয়ারি ২৫ ০১:১০:৫৭
মাইকেল মধুসূদন দত্ত

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব কবি ও নাট্যকার মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি যশোর জেলার সাগরদাঁড়ী গ্রামের এক হিন্দু কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

বাংলা সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক তিনি। তার সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি অমিত্রাক্ষর ছন্দে রামায়ণের উপাখ্যান অবলম্বনে রচিত মহাকাব্য ‘মেঘনাদবধ কাব্য’।

খ্যাতনামা উকিল রাজনারায়ণ বসু ও তার প্রথমা স্ত্রী জাহ্নবী দেবীর একমাত্র সন্তান মধুসূদন দত্ত। শৈশবে মা জাহ্নবী দেবী তাকে রামায়ণ, মহাভারত প্রভৃতির সঙ্গে সুপরিচিত করে তোলেন। শেখপুরা মসজিদের ইমাম মুফতি লুৎফুল হকের কাছে তিনি বাংলা, ফারসি ও আরবি পড়েন। পরিণত বয়সে শেখেন গ্রিক, লাতিন ও সংস্কৃত।

তের বছর বয়সে মধুসূদন কলকাতায় চলে আসেন। স্থানীয় একটি স্কুলে কিছুদিন পড়ার পর হিন্দু কলেজে (বর্তমানে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হন। মেধাবী মধুসূদন কলেজের অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন ডি এল রিচার্ডসনের প্রিয় ছাত্র হয়ে ওঠেন। তিনি তার মনে কাব্যপ্রীতি জাগান। কলেজে তার সহপাঠী ছিলেন ভূদেব মুখোপাধ্যায়, রাজনারায়ণ বসু, গৌরদাস বসাক ও প্যারীচরণ সরকারের মতো পরবর্তীতে বিখ্যাত হয়ে ওঠা ব্যক্তিরা। আঠারো বছর বয়সেই মহাকবি হওয়া ও বিলেতে যাওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা তার মনে বাসা বাঁধে।

১৮৪৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ওল্ড মিশন চার্চে তিনি খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন। এরপর থেকে পরিচিত হন ‘মাইকেল মধুসূদন দত্ত’ নামে। রাজনারায়ণ দত্ত তাকে ত্যাজ্যপুত্র ঘোষণা করেন। এরপর শিবপুরের বিশপস কলেজে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যান। রাজনারায়ণ বসু বিশপস কলেজে পড়াশোনার ব্যয়ভার বহন করলেও চার বছর পর টাকা পাঠানো বন্ধ করেন।

বিশপস কলেজে পড়া শেষে কলকাতায় চাকরির চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তখন কলেজের মাদ্রাজি বন্ধুদের সঙ্গে মাদ্রাজে (চেন্নাই) চলে যান। স্থানীয় খ্রিস্টান ও ইংরেজদের সহায়তায় তিনি একটি স্কুলে ইংরেজি শিক্ষকের চাকরি পান। তবে বেতন যা পেতেন, তাতে তার ব্যয় সঙ্কুলান হতো না। এই সময় তিনি ইংরেজি পত্রিকায় লিখতে শুরু করেন। মাদ্রাজ ক্রনিকল পত্রিকায় ছদ্মনামে তার কবিতা প্রকাশিত হতে থাকে। হিন্দু ক্রনিকল নামে একটি পত্রিকায়ও সম্পাদনা করেছিলেন তিনি। কিছুদিন পরই অর্থাভাবে বন্ধ করে দিতে হয়।

২৫ বছর বয়সে দারিদ্র্যের মধ্যেই ‘দ্য ক্যাপটিভ লেডি’ প্রথম কাব্যগ্রন্থটি রচনা করেন। এরপর তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। মাইকেল তার এক কপি বন্ধু গৌরদাস বসাককে উপহার পাঠান। গৌরদাস বইটি জে ই ডি বেথুনের কাছে উপহার পাঠান। অভিভূত বেথুন তাকে কলকাতা ফিরে আসতে এবং বাংলায় কবিতা লিখতে পরামর্শ দেন। ১৮৫৬ সালে মধুসূদন কলকাতায় ফিরে আসেন।

১৮৬১ সালে রচনা করেন তার সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি মেঘনাদবধ কাব্য। এরপর লেখেন ব্রজাঙ্গনা কাব্য (১৮৬১) ও বীরাঙ্গনা কাব্য (১৮৬২)।কলকাতায় পুলিশ কোর্টে কেরানী ও পরে দোভাষীর কাজ নেন। ১৮৬২ সালে ব্যারিস্টারি পড়তে ইংল্যান্ডের গ্রেজইন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৮৬৩ সালে ফ্রান্সের ভার্সাই নগরে সপরিবারে থাকতে শুরু করেন। এই সময় তীব্র অর্থ কষ্টে পড়েন এবং ঋণের দায়ে জেলে যাওয়ার মতো অবস্থা হলে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর টাকা পাঠিয়ে উদ্ধার করেন। ব্যারিস্টারি শেষ করেন ১৮৬৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর। ভার্সাইতে থাকাকালীন ইতালীয় ভাষার সনেট বাংলায় প্রবর্তনের চেষ্টা করেন, যার ফল তার চতুর্দশপদী কবিতাবলী (১৮৬৬)। কবিতায় তার আরও উল্লেখযোগ্য কাজ হলো 'তিলোত্তমা সম্ভব' (১৮৬০) ও 'বীরাঙ্গনা' কাব্য (১৮৬২)।

ফ্রান্স থেকে দেশে ফিরে ১৮৬৭ সাল থেকে আইন ব্যবসা শুরু। ১৮৭০ সালে সুপ্রিমকোর্টে চাকরি নেন। পরে মালভূম পঞ্চকোট রাজার উপদেষ্টা পদে চাকরি নেন।

নাট্যকার হিসেবেই বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে তার আবির্ভাব। রামনারায়ণ তর্করত্নের 'রত্নাবলী' নাটকের ইংরেজি অনুবাদ করতে গিয়ে বাংলা নাট্যসাহিত্যে তার প্রবেশ। ১৮৫৯ সালে সংস্কৃত নাট্যশৈলীর প্রথা ভেঙে পাশ্চাত্য শৈলীর অনুসরণে প্রথম আধুনিক বাংলা নাটক ‘শর্মিষ্ঠা' রচনা করেন। ১৮৬০ সালে রচনা করেন দুটি প্রহসন- 'একেই কি বলে সভ্যতা' এবং 'বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ' এবং নাটক 'পদ্মাবতী'। পদ্মাবতীতে প্রথমবারের মতো অমিত্রাক্ষর ছন্দ ব্যবহার করেন। আরও রচনা করেন 'কৃষ্ণ কুমারী' (১৮৬১)। ১৮৭৩ সালে রচিত অসমাপ্ত ‘মায়াকানন’ নাটকটি সমাপ্ত করেন ভুবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়।

তিনি দুইবার বিয়ে করেন। মাদ্রাজে যাওয়ার কিছুকাল পরই রেবেকা ম্যাকটিভিস নামে এক ইংরেজ তরুণীকে বিয়ে করেন। সাত বছরের দাম্পত্যজীবনে তাদের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। মাদ্রাজে রেবেকার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের কিছুদিন পর হেনরিয়েটা নামে এক ফরাসি তরুণীকে বিয়ে করেন। তিনি ছিলেন তার সারাজীবনের সঙ্গিনী। তার বংশধরদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিখ্যাত টেনিস খেলোয়াড় লিয়েন্ডার পেজ।

জীবনের শেষদিকে দারিদ্র্যতা ছিল তার সঙ্গী। তাছাড়া অমিতব্যয়ী স্বভাবের জন্য ঋণগ্রস্তও হয়ে পড়েন। ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন আলিপুর জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/শাহ/জানুয়ারি ২৫, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

এই দিনে এর সর্বশেষ খবর

এই দিনে - এর সব খবর