আবুল হুসাইন জাহাঙ্গীর
বাংলার যুগসন্ধিক্ষণে মধুসূদন

কোনো কবিকে বুঝতে হলে তাঁর যুগকে বুঝতে হয়। কবির জীবনকেও বুঝে নিতে হয়। শিক্ষিত বাঙালীর প্রথম কবি মাইকেল মধুসূদনকে বুঝতে হলে তিনি যে যুগে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সেই যুগের পরিচয়, বিশেষ করে সেই যুগের সাহিত্যিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয় শুধু আবশ্যক নয়, অপরিহার্য। কারণ, সাহিত্যের ইতিহাসে যখনই কোনো প্রতিভার আবির্ভাব ঘটেছে, তখনই আমরা দেখতে পাই সেই যুগের প্রভাব তার ওপর পড়েছে এবং সেই যুগও তার দ্বারা অল্প-বিস্তর প্রভাবিত হয়েছ। এটাই নিয়ম।
রামমোহনের মৃত্যুর দশ বছর আগে অর্থাৎ ১৮২৪ সালে মাইকেলের আবির্ভাব। বাংলার ইতিহাসে তখন যুগসন্ধিক্ষণ। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম পাদের যাঁরা যুগপুরুষ-দেবেন্দ্রনাথ, বিদ্যাসাগর, রাজনারায়ণ, ভুদেব প্রমুখ সকলেই দুই এক বছরের ব্যবধানে জন্মগ্রহণ করেছেন। সাহিত্য, সমাজ ও ধর্মে তখন বিপ্লব দেখা দিয়েছে। কলকাতা তখন অখ্যাত অসংস্কৃত পল্লী। সেখানে বিদেশী বাণিজ্যের হাট বসেছে। গ্রামের শ্যামল আবেষ্টন সরিয়ে শহরের উদ্ধত রূপ ফুটে উঠেছে। ক্রমে ক্রমে সেই শহর আধুনিককালকে আসন পেতে ডাকতে লাগল। বাণিজ্য এবং রাষ্ট্র পরিচালনার পথ বেয়ে বাংলাদেশে এক নতুন সভ্যতা এল এবং সেই নবজাগরণে বাংলার চিত্তলোকে নতুন বেগ সঞ্চারিত হল।
পণ্য এবং রাষ্ট্র-বিস্তারে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির উদারতা, চিত্তলোকে এর সর্বত্রগামিতা- নানা ধারায় এর অবাধ প্রবাহ, নিত্য-উদ্যমশীল বিকাশধর্ম সকল প্রকার যুক্তিহীন অন্ধবিশ্বাস থেকে মানুষের মনকে মুক্ত করার প্রয়াস। সংস্কৃতি আপন বিজ্ঞানে, দর্শনে, সাহিত্যে, বিশ্ব ও মানব লোকের বিচিত্র বিষয়ের সন্ধানে প্রবৃত্ত হয়ে সব কিছুই পরীক্ষা করেছে, বিশ্লেষণ করেছে, মনোবৃত্তির গভীরে প্রবেশ করে সূক্ষ্ম-স্থূল সবকিছুই রহস্যকে অবারিত করেছে।
এই সংস্কৃতির প্রথম স্পর্শেই বাংলাদেশ সচেতন হয়ে উঠেছিল। এ নিয়ে বাঙালী যথার্থই গৌরব করতে পারে। প্রথমেই ইংরেজি শিক্ষাকে বাঙালী যুবকেরা গ্রহণ করে। প্রথম ইংরেজি শিক্ষার ফলে দেশের মধ্যে একদিকে যেমন সচেতন ভাবের জাগরণ লক্ষ্যগোচর হয়, অন্যদিকে তেমনি স্বদেশেরে সংস্কৃতি ও সভ্যতার প্রতি বিরাগ একশ্রেণীর মধ্যে প্রকট হয়ে ওঠে। তাই পাশ্চাত্যশিক্ষা ধার করা সাজসজ্জার ন্যায় তাদের অস্থির করে রাখে বাইরে থেকে পাওয়া জিনিসের অহংকার নিয়ত উদ্যত হয়ে রইল।
তখন ইংরেজি সাহিত্যের ঐশ্বর্যভোগের অধিকার ছলি দুর্লভ এবং অল্প সংখ্যক লোকের আয়তাধীন। সেই কারণেই এই সংকীর্ণ শ্রেণীগত ইংরেজি শিক্ষিতের দল নবলব্ধ শিক্ষাকে অতিরিক্ত আড়ম্বরের সঙ্গেই ব্যবহার করতেন কথায়-বার্তায়, পত্র ব্যবহারে, সাহিত্য-রচনায় ইংরেজি ভাষার বাইরে পদেক্ষেপ তখনকার নব্য শিক্ষিতদের পক্ষে ছিল অকৌলীন্যের পরিচায়ক। বাংলাভাষা-তখন সংস্কৃত-পণ্ডিত ও নব্য শিক্ষিত দুই দলের কাছেই অপাংক্তেয় ছিল এই ভাষার তথাকথিত ‘দারিদ্র্যে’ তারাই লজ্জাবোধ করতেন। এই ভাষাকে তারা এমন একটি অগভীর শীর্ণ নদীর মতো মনে করতেন যার হাঁটুজলে পাড়াগাঁয়ে মানুষের প্রতিদিনের সামান্য ঘরোয়া কাজ চলে মাত্র, কিন্তু দেশ-বিদেশের পণ্যবাহী জাহাজ চলতে পারে না।
মাইকেল মধুসূদনের আবির্ভাব হয় বাংলার জাতীয় জীবনের এই যুগ সন্ধিক্ষণ।। সেই যুগে পাশ্চাত্য ভাষা ও সাহিত্যের প্রভাব এবং পাশ্চাত্য সমাজের রীতিনীতির প্রভাব বাংলার আদর্শের সাথে সংঘর্ষে প্রাচ্যের সামাজিক রীতিনীতি, ধর্ম ও সাহিত্যে এক বিপ্লবের সৃষ্টি হয়। সেই বিপ্লবের প্রতিকারের উদ্দেশ্যে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য আদর্শের এক সামঞ্জস্য-সাধনের জন্য রামমোহন পরবর্তী যুগমানবগণ তখন বদ্ধপরিকর। সে যুগে দেশের কুপ্রথাসমূহের মূলোচ্ছেদ হচ্ছে- পাশ্চাত্য সভ্যতার প্রভাব দেশের মধ্যে ক্রমশ ব্যাপকভাবে বিস্তারিত হয়ে পড়েছে। সমাজ, ধর্ম, রাজনীতি সমস্ত দিকেই পরিবর্তন পূর্ণ বেগে চলেছে। নতুন শিক্ষা ও সভ্যতার সাথে পরিচয়ের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালীর পুরাতন রুচি ও প্রবণতার পরিবর্তন হয়েছে, বাঙালীর মধ্যে এক নতুন আকাঙ্ক্ষা ও অভাববোধের আবির্ভাব বাঙালী নতুন উৎসাহে উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠেছে।
ঠিক এই যুগে রামমোহন, বিদ্যাসাগর প্রমুখের সমবেত প্রাণপাত প্রচেষ্টায় বাংলা গদ্যসাহিত্য শক্তিশালী ও সকল প্রকার ভাব প্রকাশের উপযোগী হয়ে উঠেছিল। কিন্তু তখনো পর্যন্ত বাংলা কাব্য সাহিত্যের কোনো উল্লেখযোগ্য সংস্কার সাধিত হয় নি। নতুন সাহিত্যরস সম্ভোগের সহজ শক্তি নিয়ে তখনো নতুন কোনো প্রতিভার অরুণোদয় ঘটেনি। তখনো বাংলা সাহিত্যের পদ্য বিভাগে গুপ্তযুগ অর্থাৎ ঈশ্বরগুপ্তের প্রভাব বাংলা কাব্য সাহিত্যে অপ্রতিহত। কিন্তু বিশুদ্ধ রুচির অভাবে, সমজ-অনুপ্রাসের প্রাচুর্য এবং অর্থহীন শব্দবিন্যাস প্রিয়তার গুপ্ত কবির কবিতা সেই যুগের ইংরেজি শিক্ষিত নব্য-সম্প্রদায়ের মন সন্তুষ্টিসাধন করতে পারেনি। সেই দিনের বাঙালী যুবকরা পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে পাশ্চাত্য-কাব্যরস পিপাসু হয়ে উঠছিল। ঈশ্বর গুপ্তের অসাধারণ প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও তার সাধ্য ছিল না যে, তিনি তার কবিতা দ্বারা বাংলার নব্য-পাঠক সম্প্রদায়ের কাব্যরস পিপাসা মিটাবেন।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশে ইউরোপের রেনেসাঁর মতো যে একটি ব্যাপার ঘটেছিল, তার স্বরূপটি না বুঝতে পারলে মাইকেল যুগের বৈশিষ্ট্য ঠিকমত ধরা যায় না। বাংলার এই যে, রেনেসাঁস বা নবজন্ম-ঊনবিংশ শতাব্দীতে সংগঠিত হয়- বাংলার এ কালের সাহিত্য তারই ভিত্তি ভূমিতে গঠিত হয়ে ধন্য। এই রেনেসাঁসের মূলে যে বহু বিচিত্র প্রভাব কাজ করেছিল সেগুলির মধ্যে দু’টিকে বড় করে তুলে ধরা যেতে পার একটি বাঙালীর নূতনত্বের পূজার, প্রকৃতি : অপরটি-ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম পদের ইউরোপীয় নব-মানবতাবাদ বাংলাদেশ পলীমাটির দেশ।
বাঙালীর প্রকৃতির মধ্যেই পলীমাটির ধর্ম রয়েছে। তাই নব-মানবতাবাদ। তাই নব-মানবতাবাদী ইউরোপের বিপুল আকর্ষণ এই যুগে শিক্ষিত বাঙালী সহজেই অনুভব করে ছিল। এই সময় বাংলার যে নবজাগরণ দেখা দিল মুখ্যত তার তিনটি ধারা। প্রথমটিকে বলা হয় রামমোহনী ধারা (নব্য বাংলা গুরুই রামমোহন রায়)। দ্বিতীয়টি হিন্দু কলেজীয় ধারা-যুক্তিবাদী ও ভারত প্রেমিক হেনরী ভিভিয়ান ডিরোজীও এর প্রবর্তক, তৃতীয়টি নব-হিন্দুত্বের ধারা-এর প্রথম ও প্রধান প্রতিনিধি ছিলেন রামকৃষ্ণ।
বাংলার এই নবজাগরণ ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রায় প্রারম্ভে সূচিত হলেও বাংলা সাহিত্যে এর উল্লেখযোগ্য প্রকাশ ঘটে সেই সূচনার অনেক দিন, প্রায় অর্ধশতাব্দীর পরে। রূপ ও রসের দিক দিয়ে যে সাহিত্য বিশেষভাবে আধুনিক-লক্ষণাক্রান্ত-তার-উদ্ভব হল ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধের সূচনায় হিন্দু কলেজীয় ধারায়। এই নবসাহিত্যের স্রষ্টা বাংলার এই নবীন কবিয় পাশ্চাত্য সাহিত্য থেকে নানা উপকরণ সংগ্রহ করে মাতৃভাষাকে পরিপুষ্ট করলেন, গাম্ভীর্য ও ভাববৈচিত্র্যে বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করে তুললেন।
মধুসূদনই সর্বপ্রথম দেখান যে, বাংলা ভাষার কেবল বাঁশীর মৃদু মধুর গুঞ্জরণ অথবা বেনু-বীণানিক্কণ ধ্বনিত হয় না, প্রতিভাশীল লেখকের হাতে এর ভিতর দিয়ে ভেরীর সুগম্ভীর রব ও প্রকাশ পেতে পারে। মধুসূদনই এটা প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, বাংলা ভাষা নির্জীব নহে। ইহা সজীব ভাবধারার বাহন হতে পারে-দৃঢ়তায় ও স্থিতিস্থাপকতায় অন্য যে-কোনো একটি উন্নতশীল ভাষার সমকক্ষ। মধুসূদনই বাংলা কাব্য সাহিত্যকে আধুনিকতায় দীক্ষা দিয়ে গেছেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে আধুনিক যুগের উন্মেষে বাংলা গদ্যের শক্তি আবিস্কার করেন রামমোহন, বিদ্যাসাগর,অক্ষয়কুমার এবং পরে বঙ্কিমচন্দ্র; আর মধুসূদন আবিষ্কার করেন বাংলা কাব্য সাহিত্যের অন্তর্নিহিত শক্তি।
যুগধর্ম এই যন্ত্র নির্মাণে মধুসূদনকে যে সাহায্য করেছিল তা বলা বাহুল্য। পুরাতন কালে অনুপ্রাস কণ্টকিত শিথিল ভাষার পৌরাণিক পাঁচালী প্রভৃতি গানকে বিশুদ্ধ জাতীয় সাহিত্য আখ্যা দিয়ে অনেকে আধুনিক সাহিত্যের প্রতি প্রতিকূল কটাক্ষপাত করে থাকে। কিন্তু তারা ভুলে যান যে, মানুষের চিত্ত স্থান নহে; অন্তরে-বাইরে-চারদিকে নানা প্রভাব তার ওপর নিয়ত কজ করছে, তার অভিজ্ঞতার ব্যাপ্তি এবং অবস্থার পরিবর্তন নিরন্তর ঘটছে-ক্রম বিবর্তনের ধারা পথে তা ঘটতে বাধ্য।
মানুষের চিত্ত যদি জড়বৎ অসাড় না হয় তা হলে তার আত্মপ্রকাশে বিচিত্র পরিবর্তন ঘটবেই, জাতীয় আদর্শ নাম দিয়ে কোনো একটি প্রাচীন আদর্শ বন্ধনে নিজেকে নিশ্চল করে রাখা তার পক্ষে স্বাভাবিক হতে পারে না। তাই সাহিত্যে বাঙালীর মনকে বহুকালের আচার সংকীর্ণতা থেকে মুক্তি দিয়ে মধুসূদন শুধু তার প্রতিভার অসামান্যতাই প্রমাণ করেননি, সমগ্র বাঙালী জাতিকে বিশ্বদরবারে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন।
পূর্বেই বলা হয়েছে মাইকেল প্রতিভার যথার্থ মূল্য নিরূপণ করতে হলে তার যুগ বা পরিপার্শ্বিক ভালো করে বিবেচনা করা প্রয়োজন। পলাশীর যুদ্ধের ৬৬ বছর পরে মাইকেলের জন্ম। এই দীর্ঘকালে ইংরেজের রাজত্ব এদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাঙালীর মনে একটা গুরুতর পরিবর্তন এসেছে। দেশে ইংরেজি শিক্ষার প্রচলন হয়েছে। তদুপরি ইংরেজের ব্যবসা বাণিজ্য, তার শক্তি ও সভ্যতা বাংলার সমাজ-জীবনকে প্রবলভাবে আন্দোলিত করেছিল। বাংলাদেশে তখন যে মানসিক পরিবর্তনের সূত্রপাত হয়েছিল, তার সকল অংশ যে ইংরেজের ইচ্ছেকৃত সৃষ্টি, তা নহে। দুটি সম্পূর্ণ ভিন্নজাতীয় সভ্যতার সংঘাত এর জন্য বহুল পরিমাণে দায়ী। ইউরোপীয় সভ্যতাকে তখন বাঙালী দেখেছে শক্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীকরূপে। সুতরাং এই সভ্যতার মোহ অতিক্রম করা কঠিন ছিল। বাংলার সমাজ জীবনে এই সাংস্কৃতিক সংঘাতের ফল ছিল সাংঘাতিক।
মধুসূদনের জীবন চরিতকার যোগীন্দ্রনাথ বসু লিখেছেন, 'হিন্দু কলেজের অনেক খ্যাতনাম ছাত্র বাংলায় বিশুদ্ধরূপে আপন আপন নামও লিখিতে পারিতেন না। সাধারণ দোকানদার ও অশিক্ষিত বৃদ্ধদিগের পাঠের জন্য রামায়ণ ও মহাভারত নামে দুইখানি পদ্যগ্রন্থ আছে; এইমাত্র তাহারা জানিতেন। গুপ্ত কবির প্রভাকর তখন বঙ্গসমাজে এক অংশে জ্যোতি দান করিতেছিল বটে, কিন্তু নব্যশিক্ষিত সম্প্রদায়ের নিকট তার বড় সমাদর ছিল না। নব্যদিগের মধ্যে যাহারাই অশিক্ষিতি বা অর্ধশিক্ষিতি তাহারাই তার সমাদর করিতেন। বাংলাভাষায় কথাবার্তা বলা এবং বাংলায় পরস্পরকে পত্র লেখা অগৌরবের বলিয়া তাদের ধারণা জন্মিল। ডিরোজীয় শিক্ষায় ও পাশ্চাত্য সাহিত্য প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে নব্য শিক্ষিত সম্প্রদায় স্বদেশীয় আচার ও স্বদেশীয় সাহিত্য উভয়ই সমভাবে নির্বাসিত করিতে প্রস্তুত হইলেন।'
মধুসূদন এই নব্য শিক্ষিত সম্প্রদায়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মের সময় থেকেই বাংলায় নতুন ও চাকচিক্যময় একটি শ্রেণীর উদ্ভব হয়ে গেছে- এরা হল তখনকার ভদ্রলোক শ্রেণী। মধসূদন এই শ্রেণীর লোক স্বভাবতই এই শিক্ষিত ভদ্রশ্রেণীর উপর প্রগতিশীল বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতির নেতৃত্ব এসে পড়ল। মধুসূদনের ছাত্রজীবনে দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতি এই শ্রেণীর বিমুখতা চূড়ান্ত পর্যায়ে উঠে রামমোহন বাঙালী ঘরের জানালা খুলে দিলেন। সেই খোলা-জানালার পথে দূর-দূরান্তের যে আলো আসতে লাগল তাতে রীতিমত দৃষ্টি বিভ্রম ঘটল। মধুসূদনের কবি জীবনের সূচনায় এই দৃষ্টি বিভ্রম আমরা লক্ষ্য করি। কিন্তু তা স্থায়ী হতে পারেনি।
যুগধর্মের প্রভাবে কিছুকাল তিনি এই স্বপ্নে এতই বিভোর ছিলেন যে, ইংরেজী কাব্য রচনা করে যশস্বী হবেন, এই স্বপ্নের প্রেরণায় তিনি খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেন বলে মনে হয়। তার এই ধর্মান্তর-তার স্বজাতীয়দের অনেকে গভীর দীর্ঘশ্বাস মোচন করেছেন। কিন্তু তার এই সিদ্ধান্ত তার নিজের জন্য যত বড় দুঃখের কারণ হোক, তা জাতির জন্য বাংলা ভাষার জন্য প্রকৃতই এক মহালাভের ব্যাপার হয়েছে। এই সূত্রেই খ্রিষ্টান পাদ্রীদের সাহায্যে গ্রিক, লাতিন, ইতালীয় প্রভৃতি ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে শুরু হয় কবির বলিষ্ঠ পদচারণা। তার নব্য সাহিত্য সৃষ্টি সম্ভবপর হয় এই সব বিদেশী সাহিত্যের সঙ্গে তার নিবিড় পরিচয়ের ফলে। তার স্বজাত্যবোধ ছিল যেমন সুগভীর, তেমনি যুগধর্মের প্রভাবে এরই পাশাপাশি সুনিবিড় হয়ে গড়ে ওঠে বিশ্বমানব জীবনের সঙ্গে তার আত্মীয়তা রামমোহনের নিকট থেকে আমরা যদি পেয়ে থাকি বলিষ্ঠ মনুষ্যত্বের নির্দেশ, তাহলে একথা নিঃসন্দেহে বলা চলে যে, মধুসূদনের নিকট থেকে আমরা পেয়েছি বিশ্বব্যাপক হৃদয় ধর্মের স্বাদ।
নবযুগের প্রাণবান সাহিত্যের স্পর্শে কল্পনাবৃত্তি যেই নবপ্রভাতে উদবোধিত হল, অমনি মধুসূদনের প্রতিভা তখনকার বাংলা ভাষার পায়ে চলা পথকে আধুনিক কালের রথযাত্রার উপযোগী করে তোলাকে দুরাশা বলে মনে করলেন না। যুগের প্রভাব তখন তার মধ্যে এমনভাবে কার্যকরী হয়ে উঠতে শুরু করেছে যে ক্ষণিকের দৃষ্টি বিভ্রম ঘুচে গিয়ে তিনি আদর্শের সন্ধান পেয়ে গেছেন। স্বদেশের সংস্কৃতি ও স্থায়ী প্রতিভার উপর তার শ্রদ্ধা ছিল বলেই মধুসূদন বাংলা ভাষার উপরে শ্রদ্ধা প্রকাশ করতে কুণ্ঠিত হলেন না।
সম্পূর্ণভাবে সংস্কারমুক্ত চিত্তে বাংলা ভাষাকে নির্ভীকভাবে এমন আধুনিকতায় দীক্ষা দিলেন যা তার পূর্ব-অনুবৃত্তি থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। বঙ্গবাণীকে গম্ভীর স্বর নিঘোষে মন্দ্রিত করে তুলবার জন্য সংস্কৃত ভাণ্ডার থেকে মধুসূদন নিঃসংকোচে যে সব শব্দ আহরণ করেছিলেন, তাও নতুন; আর মহাকাব্য, খণ্ডকাব্য রচনায় যে রীতি অবলম্বন করেছিলেন তাও বাংলা ভাষায় নতুন।
বলা বাহুল্য, পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সভ্যতা বাংলার উনবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে যে যুগের জন্ম দিয়েছিল তার অন্তরের কথাটাই ছিল নবীনের জয়গান। পুরাতনের পত্রপুট বিদীর্ণ করে এই যে নবীনের অভ্যূদয়- মধুসূদনের প্রতিভা এই অভ্যূদয়কে সমস্ত মন দিয়ে, বুদ্ধি স্বীকার করে নিয়েছিল। যুগের ধর্ম এবং যুগের প্রভাব মধুসূদনের মধ্যে সার্থক হয়েছিল এই অর্থে যে, ইউরোপীয় সাহিত্যের সৌন্দর্যের স্বরূপ তিনি সাধকের মত সমাহিত চিত্তে উপলব্ধি করেছিলেন, ভাববিহ্বল হয়ে পড়েন নি। এই জন্যই সাহিত্যের আকাশে অরুণালোকের স্বাক্ষরে মাইকেল-প্রতিভা প্রভাতের জ্যোতির্ময়ী প্রত্যাশাকে অকুণ্ঠভাবেই ঘোষণা করতে সক্ষম হয়েছি।
লেখক : কথা সাহিত্যিক।
পাঠকের মতামত:

- নতুন ৩ ডিপোজিট প্রডাক্ট এনেছে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক
- আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের এজিএম ১৪ আগস্ট
- সমন্বয় বাড়িয়ে আর্থিক বিবরণীর মানোন্নয়নে ৩ সংস্থাকে দিকনির্দেশনা
- গাজায় ত্রাণ নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি, নিহত ৩১
- বাংলাদেশ দলকে অভ্যর্থনা জানিয়ে বন্ধুত্বের বার্তা দিলেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট
- ভূমিধসের শঙ্কা, লামায় ৬০ রিসোর্ট বন্ধ ঘোষণা
- উপদেষ্টা পরিষদ ছাত্রদের ভুল পথে পরিচালিত করছে : হাফিজ
- নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার রায়ের মাধ্যমে ন্যায় বিচার নিশ্চিত হলো : জামায়াত আমির
- হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলে যা বলল প্রসিকিউশন
- অভিযোগ আমলে নিয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
- নির্বাচন আগেও হতে পারে, ৩০ জুনের পরে যাবে না: প্রেস সচিব
- দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বাধিক রেমিট্যান্স এলো মে মাসে
- যে শর্তে মার্কিন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মতি দিল হামাস
- ডিএসইতে পিই রেশিও কমেছে ৩.৭১ শতাংশ
- সিঙ্গাপুর ম্যাচ নিয়ে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ, বলছেন রহমত মিয়া
- শেখ হাসিনার বিচার ট্রাইব্যুনাল থেকে সরাসরি সম্প্রচার হবে: প্রসিকিউটর
- জামায়াতকে নয়, ইসলামকে ক্ষমতায় আনতে চাই: শফিকুর রহমান
- দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা
- করিডোর ইস্যুতে সরকারের অবস্থান জানতে চাইল বিএনপি
- নির্বাচন নিয়ে ‘ব্ল্যাকমেইল’ করা যাবে না: মির্জা আব্বাস
- বিএনপিকে যমুনায় ডেকেছেন প্রধান উপদেষ্টা
- এবারের বাজেটে নতুন কোনো চমক থাকছে না: দেবপ্রিয়
- আইসিসির হস্তক্ষেপের আশায় আছেন ফারুক
- নতুন কাউন্সিলর বুলবুল, অনুমোদন দিল বিসিবি
- ইসরাইলের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে গাজায় যাচ্ছেন গ্রেটা থুনবার্গ
- ঈদের ছুটিতে এটিএম বুথে পর্যাপ্ত টাকা রাখার নির্দেশ
- জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের ৬ সমঝোতা স্মারক সই
- দুর্বল হয়েছে গভীর নিম্নচাপ
- জিয়াউর রহমানের সমাধিতে বিএনপির নেতাকর্মীদের ফুলেল শ্রদ্ধা
- জিয়াউর রহমানের আজ ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী
- নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যেই করতে হবে: মির্জা আব্বাস
- দাম বেড়েছে সবজির, মুরগিতে স্বস্তি
- বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হবে: ড. আনিসুজ্জামান
- সব ধরনের নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা
- সিনহা হত্যা: হাইকোর্টের রায় ২ জুন
- যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা ও তেল আমদানি বাড়াতে চায় বাংলাদেশ
- উপকূলীয় ১৬ জেলায় ৪ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা
- ইশরাকের বিষয়ে আদালতের রায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেবে ইসি
- ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন হওয়া সম্ভব : তারেক রহমান
- "খুব শিগগিরই গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত দেখতে পাব, এই হোক অঙ্গীকার"
- বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে ড. আনিসুজ্জামানের বৈঠক আজ
- সচিবালয়ে সপ্তাহে দুই দিন দর্শনার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
- ঢাকাসহ ৯ অঞ্চলে ৮০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস
- এই সরকার স্টারলিংক এনেছেন আরাকান আর্মির জন্য: মির্জা আব্বাস
- চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করবে যুক্তরাষ্ট্র
- আবারো বিসিবি সভাপতি বদলের জোর গুঞ্জন
- অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এশিয়ার দেশগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান
- বরিশালের অভ্যন্তরীণ রুটে লঞ্চ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা
- সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘণীভূত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত
- ঢাকায় ঝুম বৃষ্টি, চট্টগ্রামে পাহাড় ধসের শঙ্কা
- দুর্বল ব্যাংকগুলো একীভূত করার আগে নিয়ন্ত্রণে নেবে সরকার: গভর্নর
- এবার ঢাবিতে মশাল মিছিলে উত্তেজনা, শিক্ষার্থীদের ‘ভুয়া ভুয়া’ দুয়োধ্বনি
- গভীর রাতে ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল ঢাকা
- শিবির ছাত্ররাজনীতির পরিবেশকে ‘বিষাক্ত’ করে তুলেছে: উমামা ফাতেমা
- জাপানের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন প্রধান উপদেষ্টা
- নির্বাচনের রোডম্যাপ না পেয়ে ‘হতাশ’ বিএনপি
- পুতিন ‘আগুন’ নিয়ে খেলছেন: ট্রাম্প
- সচিবালয়ে নিরাপত্তা জোরদার, বিজিবি মোতায়েন
- সৌদি পৌঁছেছেন ৬৫ হাজার ৯৪৩ হজযাত্রী
- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভা, বিকেলে সংবাদ সম্মেলন
- ইশরাকের শপথ: সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় স্থানীয় সরকার বিভাগ
- ঈদযাত্রার শেষ দিনের টিকিট বিক্রি আজ
- রাতে জাপান যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা
- আপিল মঞ্জুর, জামায়াত নেতা আজহার খালাস
- বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচ: সাইবার হামলার ধাক্কা সামলে অনলাইনে ফিরছে টিকিট বিক্রি
- ইউক্রেনের বিপদ বাড়ান জেলেনস্কি, দাবি ট্রাম্পের
- সচিবালয়ে মঙ্গলবার দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ
- আগামী জুলাইয়ের মধ্যে জাতীয় সনদ তৈরি হবে: আলী রীয়াজ
- অধ্যাদেশ নিয়ে আলোচনা করে সমস্যাটা সমাধান করে নেবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
- "সরকার বিনিয়োগ শক্তিশালী করতে প্রতিশ্রুতির ওপর জোর দিচ্ছে"
- ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের কলম বিরতি শুরু মঙ্গলবার
- সরকারের সঙ্গে টানাপোড়েন নেই, জানাল সেনাবাহিনী
- গুমের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে: তারেক রহমান
- সরকার প্রতিটি নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষায় বদ্ধপরিকর: প্রধান উপদেষ্টা
- টানা ৩ কার্যদিবসে পুঁজিবাজারে পতন, বেড়েছে লেনদেন
- সচিবালয়ে মঙ্গলবার দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ
- গভীর রাতে ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল ঢাকা
- ঢাকায় ঝুম বৃষ্টি, চট্টগ্রামে পাহাড় ধসের শঙ্কা
- আপিল মঞ্জুর, জামায়াত নেতা আজহার খালাস
- জিয়াউর রহমানের আজ ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী
- ইউক্রেনের বিপদ বাড়ান জেলেনস্কি, দাবি ট্রাম্পের
- গুমের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে: তারেক রহমান
- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভা, বিকেলে সংবাদ সম্মেলন
- সচিবালয়ে নিরাপত্তা জোরদার, বিজিবি মোতায়েন
- সরকারের সঙ্গে টানাপোড়েন নেই, জানাল সেনাবাহিনী
- শিবির ছাত্ররাজনীতির পরিবেশকে ‘বিষাক্ত’ করে তুলেছে: উমামা ফাতেমা
- জাপানের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন প্রধান উপদেষ্টা
- এবার ঢাবিতে মশাল মিছিলে উত্তেজনা, শিক্ষার্থীদের ‘ভুয়া ভুয়া’ দুয়োধ্বনি
- দুর্বল ব্যাংকগুলো একীভূত করার আগে নিয়ন্ত্রণে নেবে সরকার: গভর্নর
- নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যেই করতে হবে: মির্জা আব্বাস
- রাতে জাপান যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা
- ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন হওয়া সম্ভব : তারেক রহমান
- ঈদযাত্রার শেষ দিনের টিকিট বিক্রি আজ
- অধ্যাদেশ নিয়ে আলোচনা করে সমস্যাটা সমাধান করে নেবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
- এই সরকার স্টারলিংক এনেছেন আরাকান আর্মির জন্য: মির্জা আব্বাস
- বরিশালের অভ্যন্তরীণ রুটে লঞ্চ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা
- টানা ৩ কার্যদিবসে পুঁজিবাজারে পতন, বেড়েছে লেনদেন
- ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের কলম বিরতি শুরু মঙ্গলবার
- আগামী জুলাইয়ের মধ্যে জাতীয় সনদ তৈরি হবে: আলী রীয়াজ
- সরকার প্রতিটি নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষায় বদ্ধপরিকর: প্রধান উপদেষ্টা
সাহিত্য এর সর্বশেষ খবর
সাহিত্য - এর সব খবর
