thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২১ জমাদিউল আউয়াল 1446

আড়াই বছরেও আরপিও’র অর্থ ব্যবহার করেনি বিএসসি

২০১৪ জানুয়ারি ২৯ ১৯:২৭:০০
আড়াই বছরেও আরপিও’র অর্থ ব্যবহার করেনি বিএসসি

পুনর্গণপ্রস্তাবের (আরপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে উত্তোলিত অর্থ প্রায় আড়াই বছর ধরে অব্যবহৃত রেখেছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন(বিএসসি)। উত্তোলিত অর্থ প্রসপেক্টাসে উল্লিখিত খাতে ব্যয় না করে প্রকল্প বাস্তবায়ন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। ফলে আরপিওতে বিনিয়োগ করেও কোনো সুফল পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা।

আরপিও’র অর্থ অবব্যহৃত রয়েছে জানিয়ে গত ১৫ জানুয়ারি বিএসসি’র পক্ষ থেকে চিঠির মাধ্যমে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) অবহিত করা হয়।

বিএসসি’র কোম্পানি সচিব গোলাম হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে আরপিও’র মাধ্যমে উত্তোলিত ৩১৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা দিয়ে প্রসপেক্টাসে উল্লিখিত প্রকল্পসমূহের বাস্তবায়নের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানানো হয়। সমস্ত কার্যক্রম চূড়ান্তভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর নির্ধারিত খাতে অর্থ ব্যয় করা হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

এর আগে গত বছরের ৮ মে কোম্পানির ৩৪তম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ঢাকায় ২৫ তলা ভবন নির্মাণের খরচ, চট্টগ্রাম ও খুলনায় বিএসসি’র নিজস্ব জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমোদন নেওয়া হয়। একই সঙ্গে অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং শেয়ার সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যয় (বিএসইসি’র অনুমোদন ফি, সরকারি ট্যাক্স, ইস্যু ম্যানেজার, পোস্ট ইস্যু ম্যানেজার বিল, আন্ডাররাইটিং কমিশন) আরপিও’র মাধ্যমে উত্তোলিত তহবিল থেকে পরিশোধ করার অনুমোদন নেওয়া হয়। এ বিষয়গুলোও চিঠির মাধ্যমে বিএসইসিকে অবহিত করা হয়েছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, ঢাকায় ২৫ তলা বিএসসি টাওয়ারের নির্মাণ ব্যয় বাবদ ১৬ কোটি ৮ লাখ ৯ হাজার টাকা এবং আরপিও’র ৬২ লাখ ৭৪ হাজার শেয়ার বাজারজাতকরণ বাবদ ১৭ কোটি ৯৩ লাখ ৬০ হাজার ৯৭৭ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এতে মোট ৩৪ কোটি ১ লাখ ৫৯ হাজার ৯৭৭ টাকা ব্যয়ের পর আরপিও ফান্ডে বর্তমানে ২৭৯ কোটি ৬৮ লাখ ৩০ হাজার ২৩ টাকা অবশিষ্ট রয়েছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সাবেক সভাপতি ফখর উদ্দিন আলী আহমেদ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘যেকোনো কোম্পানির এ ধরনের কর্মকাণ্ড বিনিয়োগকারীদের জন্য ক্ষতিকর। ওই টাকা ব্যাংকে স্থায়ী আমানত(ফিক্সড ডিপোজিট) করে রাখার জন্য তোলা হয়নি। কোম্পানিটি যখন টাকা উত্তোলন করে তখন তারা বিএসইসিকে বলেছে, কোন কোন খাতে উত্তোলিত অর্থ ব্যবহার করবে। কিন্তু কোম্পানি যদি তা না করে তাহলে বিষয়টি বিএসইসি’র বিশেষভাবে দেখা উচিত।

তিনি আরও বলেন, এ সংক্রান্ত আইন সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে। কারণ, প্রসপেক্টাসে কোন সময় এবং কোন খাতে ওই অর্থ ব্যবহার করবে সে কথা উল্লেখ থাকলেও কোম্পানি তা পরিপালনে ব্যর্থ হলে কী হবে তা আইনে বলা নেই। তাই এ সব বিষয়ে বিএসইসি’র যথাযথ তদারকি বাড়ানো উচিত।’

জানা গেছে, ২০১১ সালের ২৩ আগস্ট পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের আরপিও অনুমোদন দেয় বিএসইসি। আরপিও’র মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিকে পুঁজিবাজার থেকে ৬২ লাখ ৭৪ হাজার শেয়ার ইস্যু করে ৩১৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা তোলার অনুমোদন দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ারের সঙ্গে ৪০০ টাকা প্রিমিয়ামসহ (অধিমূল্য) আরপিও’র শেয়ারের নির্দেশক মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৫০০ টাকা।

ওই সময় প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, আরপিও’র মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থ দিয়ে দু’টি জাহাজ কেনা হবে। এর মধ্যে ৩৫০ কোটি টাকা দিয়ে এক লাখ ২৫ হাজার টন মালামাল বহনকারী একটি মাদার ভ্যাসেল (প্রধান জাহাজ) কেনা হবে। এতে আরপিও’র ১০৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে এবং বাকি টাকা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বা কৌশলগত অংশীদারদের কাছ থেকে নেওয়া হবে। আরেকটি মালামাল বহনকারী জাহাজ ২০৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা দিয়ে কেনার কথাও জানায় কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রসপেক্টাসে উল্লিখিত জাহাজ কেনার প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ ও দীর্ঘমেয়াদি হওয়ায় আরপিও’র মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে উত্তোলন করা ৩১৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা অব্যবহৃত অবস্থায় ব্যাংকে গচ্ছিত রেখেছে বিএসসি।

এদিকে ২০১১ সালের ৩০ জুন শেষ হওয়া অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়ায় বিএসসিকে ‘এ’ থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দেয় উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ। এর আগে ২০০৪ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি প্রতিবছর লভ্যাংশ দিলেও পরের বছরগুলোতে ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারেনি। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠানটি ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিলেও ২০০৯ ও ২০১১ অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়নি। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি ‘এ’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে।

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/ডব্লিউএন/এইচএসএম/সা/জানুয়ারি ২৯, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশেষ সংবাদ এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ সংবাদ - এর সব খবর