thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১,  ২২ জমাদিউস সানি 1446

বিটিভিতে বিরক্ত তথ্যমন্ত্রী

২০১৪ জানুয়ারি ২৯ ২০:৪৯:৪২
বিটিভিতে বিরক্ত তথ্যমন্ত্রী

রানা মুহম্মদ মাসুদ ও শামীম রিজভী, দ্য রিপোর্ট : বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) মানহীনতায় কঠোর সমালোচনামূলক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন খোদ তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

সচিবালয়ে বুধবার তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সরকারের ১০০ দিনের কর্মসূচি প্রণয়নে বিটিভির কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মন্ত্রী এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। বৈঠকে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা এই তথ্য জানান।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ওখানে (বিটিভি) কিছু লোক পার্টির নাম ব্যবহার করে ডিস্টার্ব করে। মূলত দলে তাদের কোনো অবদান নেই। পরিবার, নাতি-পুতিদের চাকরি-অনুষ্ঠান করিয়ে বিটিভিকে ডাস্টবিন বানিয়ে রাখলে তো হবে না।

তথ্য সচিব মরতুজা আহমেদ, বিটিভির মহাপরিচালক ম. হামিদসহ তথ্য মন্ত্রণালয় ও বিটিভির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকের একাধিক সূত্র দ্য রিপোর্টকে জানায়, তথ্যমন্ত্রী বিটিভির অনুষ্ঠান, খবরসহ সব ধরনের অনুষ্ঠানের সমালোচনা করে এ সব অনুষ্ঠানের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

সুনির্দিষ্ট একটি অনুষ্ঠানের উদাহরণ টেনে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার গঠনের পর নতুন মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে যাওয়ার সময় ফেরিতে থাকা টিভিতে সবাই মিলে বিটিভি দেখছিলাম। তখন ‘মাটির টানে’ নামে একটি অনুষ্ঠান চলছিল।

তথ্যমন্ত্রীর ভাষায়, অনুষ্ঠানটি ছিল খুবই মানহীন, নাচ ছিল দৃষ্টিকটু। অনুষ্ঠানের নামের সঙ্গে কনটেন্টের কোনো মিল নেই। পরে জেনেছি গোলাম কুদ্দুস সাহেব অনুষ্ঠানটি প্রযোজনা করেছেন। যতটা জানি কুদ্দুস সাহেব সংস্কৃতিমনা লোক। তার অনুষ্ঠানের অবস্থা যদি এমন হয়, তবে অন্যরা কি করবেন?

এ সময় তথ্যমন্ত্রীকে উপস্থিত মন্ত্রীদের সমালোচনা সহ্য করতে হয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বৈঠকে সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হয় বিটিভির খবর পরিবেশক ও টকশো উপস্থাপকরা। প্রতিষ্ঠানটির সংবাদ পাঠক-পাঠিকাদের উচ্চারণের ব্যাপারে জোর আপত্তি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আঞ্চলিক উচ্চারণে খবর পড়লে হবে না। যাদের বয়স হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে সম্মানজনক ভাবনা ভাবতে হবে। নতুনদের ‍সুযোগ দিন। ছেলে-মেয়েদের ব্যালেন্স করে নিয়োগ দিন। গুণমানে পরিবর্তন আনুন।

মন্ত্রীর কথার ফাঁকে অতিরিক্ত তথ্য সচিব (উন্নয়ন) হারুন উর রশিদ বলেন, খবর এখন উপস্থাপনের বিষয়, পড়ার বিষয় নয়। কিন্তু বিটিভিতে খবর পড়া হয়, উপস্থাপন হয় না। এই বিষয়গুলোতে আধুনিকায়ন প্রয়োজন।

আগামী ৩ মাসের মধ্যে বিটিভির খবরসহ সামগ্রিক অনুষ্ঠান আধুনিকায়নের নির্দেশ দিয়ে হাসানুল হক ইনু বলেন, নতুন কাজ করলে বাড়তি টাকা লাগবে জানি, তাও দেখব। আগে পরিবর্তনের কাজ শুরু করেন। আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনিও এই বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন।

বিটিভিতে নাটকের মানও পড়ে গেছে মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আগের মত মানসম্পন্ন নাটক আর দেখি না। এমন দিন ছিল যখন বিটিভির নাটক দেখার জন্য মানুষ সবকাজ ফেলে বাসার দিকে ছুটত।

টকশো সম্পর্কে হাসানুল হক ইনু বলেন, অ্যাংকর (উপস্থাপক) দেখলেই মানুষ চ্যানেল (বিটিভি) পাল্টিয়ে ফেলেন। উপস্থাপকদের মুখ দিয়ে কথা বের হয় না। টকশোতে আগত অতিথিদের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এদের ছাড়া কি স্বপক্ষের আর লোক নেই?

বিষয়ভিত্তিক টকশোর ওপর জোর দিয়ে মন্ত্রী বলেন, অর্থনীতি নিয়ে টকশোতে দেবপ্রিয়র মতো ব্যক্তিত্বকে আনুন। সবাই যে সরকারের গুণগান গাইবে তা নয়। সমালোচনা করুক সমস্যা নেই। একই সঙ্গে ব্যালেন্স করার জন্য আবুল বারকাতের মতো বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদকে আনতে পারেন। আমরা হস্তক্ষেপ না করা পর্যন্ত স্বাধীন মতো কাজ করেন। কোনো বাধা নেই।

বিটিভির মহা্পরিচালককে উদ্দেশ করে মন্ত্রী বলেন, কোনো তদবির আমলে নিবেন না। ভালো উপস্থাপক আনেন।

চলচ্চিত্র প্রদর্শন নিয়ে মন্ত্রী বলেন, পুরনো দিনের বাজে প্রিন্টের চলচ্চিত্র না দেখিয়ে নতুন গ্রহণযোগ্য চলচ্চিত্র দেখান। এ সময় অতিরিক্ত তথ্য সচিব হারুন অর রশিদ বলেন, মানুষ এখন আর পুরনো সিনেমা দেখতে চাইবেন না, ‘মনপুরা’ দেখতে চাইবেন।

বৈঠকে বিটিভির মহাপরিচালক ম হামিদ বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর ২৭০টি অনুষ্ঠান থেকে ৫০টি অনুষ্ঠান কমিয়েছি। এরপরই হৈচৈ পড়ে গেল, আমি দলবিরোধী লোক। ক্যাবিনেট পর্যন্ত এ অভিযোগ গেল।

ম. হামিদ বৈঠকে বলেন, বিটিভিতে প্রতিটি ফিল্ম দেখানোর বাজেট আড়াই লাখ থেকে এক লাখ টাকায় নামিয়ে এনেছি একটি চক্রের কারণে। এখন যদি আবার ভালো ছবি দেখানোর জন্য বাজেট বাড়াই তাহলে দেখা যাবে সেই চক্র ফিরে এসেছে।

অনুষ্ঠানে ক্ষমতা দিয়ে হস্তক্ষেপ করার একটি ঘটনার উদারহরণ টেনে তিনি আরও বলেন, একজন তরুণ নেতা (বৈঠকে নাম উল্লেখ করেননি) অনুষ্ঠানের দিন এক উপস্থাপককে ফোন করে তিনি এবং আরও কয়েকজন গান করবেন বলে দাবি করেন। এবং সেটাই প্রচার করতে হবে বলে দাবি করেন। যথারীতি লোকজন নিয়ে এসে স্টুডিওতে ঢুকে কাজ শুরু করতে বলেন। পরে আমি বাধ্য হয়ে ওই অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছি।

তথ্য সচিব মরতুজা আহমেদ বলেন, হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আমরা চাইলে পরিবর্তন আনতে পারি। আগামী ডিসেম্বরে বিটিভির ৫০ বছর পূর্তি পালন করা হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্টদের একটি পরিকল্পনা প্রণয়নের নির্দেশ দেন।

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদের কাছে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, এই পঞ্চাশ বছরে বিটিভির কোনো উন্নতি হয়নি। দিন দিন অবনতি হচ্ছে। বিটিভিকে ’৭০-৮০ দশকের স্টাইলে চললে হবে না। ত্রিশ-পঁয়ত্রিশটি টিভি চ্যানেল তার প্রতিদ্বন্দ্বী, এই বিষয়টি মনে রাখতে হবে।

বিটিভির ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবাষিকী অনুষ্ঠানের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এত বড় একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের এমন বাজে অনুষ্ঠান চিন্তাও করা যায় না।

বৈঠক সূত্র আরও জানায়, সরকারের এক শ’ দিনের কর্মসূচি পরিকল্পনাকে কেন্দ্র করে বুধবারের বৈঠকে হঠাৎ করেই বিটিভির ৫০ বছর পূর্তি প্রসঙ্গ তুলেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হারুন অর রশিদ। তখন অনির্ধারিত এই বিষয়ে দীর্ঘক্ষণের আলোচনায় এ সব বিষয় উঠে আসে। তবে এই বিষয়ে বৈঠক সূত্রের কেউ নাম প্রকাশ করতে চাননি।

এ বিষয়ে বিটিভির মহাপরিচালক ম. হামিদকে একাধিকবার ফোন ও মেসেজ পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

(দ্য রিপোর্ট/আরএমএম/এইচএসএম/ এনআই/জানুয়ারি ২৯, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশেষ সংবাদ এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ সংবাদ - এর সব খবর