thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১,  ২২ জমাদিউস সানি 1446

অবৈধ ভিওআইপির নিরাপদ জোন উত্তরা!

২০১৪ জানুয়ারি ৩০ ১৩:১৩:১৯
অবৈধ ভিওআইপির নিরাপদ জোন উত্তরা!

রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) উত্তরা টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অবৈধ ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল (ভিওআইপি) ব্যবসার সবচেয়ে নিরাপদ জোন হিসেবে গড়ে উঠেছে। একই সঙ্গে দুর্নীতিবাজ চক্র মূল হোতাদের আড়াল করতে এই কাজে বিদেশিদের ব্যবহার করছে।

বিটিসিএল সূত্রের তথ্যে জানা গেছে, উত্তরা টেলিফোন একচেঞ্জের সঙ্গে নিউ জেনারেশন নেটওয়ার্ক (এনজিএন) এক্সচেঞ্জের সংযোগ না থাকায় এ এক্সচেঞ্জের টেলিফোন ব্যবহার করে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা করলে এনজিএনে কোনো ডাটা থাকে না। এতে খোয়া যাওয়া কল মিনিটের কোনো হিসাব পাওয়া সম্ভব হয় না।

সূত্র জানায়, বিটিসিএল’র একটি দুর্নীতিবাজ চক্রের প্রত্যক্ষ সহায়তায় রাজধানীর উত্তরা টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার একটি নিরাপদ জোন হিসেবে গড়ে উঠেছে। অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা পরিচালনার জন্যই উত্তরা টেলিফোন এক্সচেঞ্জকে ইন্টার কানেকশন এক্সচেঞ্জের (আইসিএক্স) মাধ্যমে এনজিএন এক্সচেঞ্জের সঙ্গে সংযোগ দেওয়া হয়নি। ফলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

সূত্র আরও জানায়, রাজধানীতে বিটিসিএল’র মোট ১৩টি টেলিফোন এক্সচেঞ্জ রয়েছে। এগুলো হলো- উত্তরা, রমনা, মগবাজার, খিলগাঁও, গুলশান, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, শেরেবাংলা নগর, মিরপুর, নীলক্ষেত, চকবাজার, গেন্ডারিয়া, যাত্রাবাড়ী ও নারায়ণগঞ্জ টেলিফোন এক্সচেঞ্জ। ২০১১ সালের নভেম্বরে এনজিএন এক্সচেঞ্জের যাত্রা শুরু হয়। প্রতিটি টেলিফোন এক্সচেঞ্জ আইসিএক্সের মাধ্যমে এনজিএন এক্সচেঞ্জের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। শুধুমাত্র উত্তরা টেলিফোন এক্সচেঞ্জকে আইসিএক্সের মাধ্যমে এনজিএনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়নি। অবৈধ ভিওআইপি’র হোতারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে কৌশল করে উত্তরা টেলিফোন এক্সচেঞ্জকে এনজিএন এক্সচেঞ্জের নেটওয়ার্কের আওতামুক্ত করে রেখেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিটিসিএল’র সদস্য (র. ও চা.) নাজির শাহ কোরাইশী দ্য রিপোর্টকে জানান, রাজধানীতে অবস্থিত বিটিসিএল’র প্রতিটি টেলিফোন এক্সচেঞ্জকে এনজিএন এক্সচেঞ্জের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। উত্তরা এক্সচেঞ্জও এনজিএন এক্সচেঞ্জের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে।

বিটিসিএল’র পরিচালক (রক্ষণাবেক্ষণ ও চালন) রফিকুল মতিন এবং ডিটিআর উত্তরের প্রধান কর্মাধ্যক্ষ স্বপন কুমার সাহা দ্য রিপোর্টকে জানান, এনজিএন এক্সচেঞ্জের সঙ্গে বিটিসিএল’র উত্তরা এক্সচেঞ্জ সংযুক্ত আছে।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিটিসিএল’র এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য রিপোর্টকে জানান, উত্তরা টেলিফোন এক্সচেঞ্জকে আইসিএক্সের মাধ্যমে এনজিএন এক্সচেঞ্জের আওতায় আনা হয়নি। যার ফলে এনজিএন এক্সচেঞ্জে বৈদেশিক ইনকামিং কলের রুট শনাক্ত করা সম্ভব হয় না।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বিটিসিএল সূত্র জানায়, আউটগোয়িং কলে দুর্নীতির পরিমাণ খুবই কম। যত দুর্নীতি হয় সব ইনকামিং কলে। রাষ্ট্রায়ত্ত বিটিসিএলে কোনো দুর্নীতি না হলে মাত্র দুই বছরের রাজস্ব দিয়েই পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব। অবৈধ ভিওআইপি কেলেঙ্কারিতে দুদকের দায়েরকৃত মামলায় আসামিদের গ্রেফতার করা হলে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেত। মামলার তদন্ত পর্যায়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-প্রমাণ খোয়া গেছে।

এদিকে অবৈধ ভিওআইপির কাজে বিদেশি নাগরিকদের ব্যবহার করা হচ্ছে। শুধুমাত্র দুর্নীতির মূল হোতাদের আড়াল করতেই বিদেশিদের এ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

বিটিসিএল সূত্র জানায়, বিদেশিরা অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার মূল হোতাদের চেনেন না এবং কখনও দেখেননি। ফলে বিদেশিদের দিয়ে কাজ করালে দুর্নীতির মূল হোতারা আড়ালেই থেকে যাবে। ভিওআইপি কেলেঙ্কারিতে দুদকের দায়েরকৃত মামলার কয়েকজন আসামি চীন ও তাইওয়ানের নাগরিকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করতেন।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর রাজধানীর উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরের ২৮ নম্বর বাসায় অভিযান চালিয়ে চীন ও তাইওয়ানের ৩৭ নাগরিকসহ ৪১ জনকে ভিওআইপি সরঞ্জামসহ গ্রেফতার করে র‌্যাব। প্রথমে এ ঘটনায় দায়ের করা মামলাটির তদন্ত শুরু করে র‌্যাব। তদন্তে তাইওয়ান সরকারের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো ও তাইওয়ান ন্যাশনাল পুলিশের তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলাদেশে আসেন। আদালতের অনুমতি নিয়ে র‌্যাবের সঙ্গে তাইওয়ান পুলিশের দলটি যৌথ তদন্ত করে। তারা ৩৭ বিদেশিকে কয়েক দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তারা তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন।

তাইওয়ান ও বাংলাদেশের যৌথ গোয়েন্দা প্রতিবেদনটিতে উত্তরায় ভিওআইপির মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ও ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি করে ওই ৩৭ বিদেশি নাগরিক ৩২০ কোটি টাকা লুট করেছে বলে উল্লেখ রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে র‌্যাবের মিডিয়া অ্যান্ড লিগাল উইংয়ের পরিচালক এটিএম হাবিবুর রহামন দ্য রিপোর্টকে জানান, অবৈধ ভিওআইপির আড়ালে আন্তর্জাতিক অ্যাকাউন্ট ও ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন তারা। প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ১০০ অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতেন তারা। বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে তারা এ কাজ করত। প্রতিটি গ্রুপে ১০ থেকে ১২ জন সদস্য ছিল। এ অবৈধ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েকজন অপরাধী বর্তমানে বিদেশে রয়েছে।

সর্বশেষ গত ২৩ জানুয়ারি তাদের চার দিনের রিমান্ডে এনে র‌্যাব ও তাইওয়ানের তদন্ত দল জিজ্ঞাসাবাদ করে। আসামিদের মধ্যে সাতজন অ্যাকাউন্ট জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। উত্তরা পশ্চিম থানায় দায়ের করা মামলায় ৩৭ বিদেশি বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/এইচবিএস/সা/এএল/এএল/জানুয়ারি ৩০, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশেষ সংবাদ এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ সংবাদ - এর সব খবর