thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ৫ মে 24, ২২ বৈশাখ ১৪৩১,  ২৬ শাওয়াল 1445

বিশ্ব ইজতেমা ও ধর্মপ্রচারের গুরুত্ব

২০১৪ জানুয়ারি ৩১ ০০:২৯:৩২
বিশ্ব ইজতেমা ও ধর্মপ্রচারের গুরুত্ব

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : তাবলিগ জামাতের বার্ষিক বিশ্ব ইজতেমা নিয়মিতভাবে টঙ্গীতে অনুষ্ঠিত হলেও তাবলীগের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ভারতের রাজস্থান রাজ্যের মেওয়াত নামক এলাকা থেকে। মাওলানা ইলিয়াছ (রহ.) ১৯১০ সালে এ কাজের সূচনা করেছিলেন। পরে তাঁর পুত্র মাওলানা ইউসুফ (রহ.) এবং মাওলানা জাকারিয়া (র.)-এর নেতৃত্বে এ কাজ বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারিত হয়েছে। তাবলীগ মূলত প্রচারের কাজ। দীনের দাওয়াত নিয়ে সারা দুনিয়ার মানুষের কাছে, বিশেষ করে মুসলিম সমাজের ঘরে ঘরে পৌঁছানোই আল্লাহর রাহে তাঁদের নিঃস্বার্থ কাজ। তবে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রচারের ক্ষেত্রে তাঁরা ভাবাদর্শিকভাবে প্রচারবিমুখ। নীতিনির্ধারক বা নেতৃত্ব পর্যায়ের লোকদের তারা মুরব্বি বলেন। তাবলিগের মুরব্বি কে বা কারা সেটা কোনো গোপন বিষয় নয়। জোরালো অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ায় চলে তাঁদের সংগঠন, নীতিনির্ধারণ ও নেতৃত্ব দানের কাজ। কিন্তু কে নেতা আর কে কর্মী, কার কী অবদান, কার গুরুত্ব কতখানি, কে আগে, কে পরে, কার নাম প্রকাশ পেয়েছে, কার নাম প্রকাশ পায়নি—এসব বিষয়ে তারা অত্যন্ত আন্তরিকভাবে নির্মোহ ও নির্লিপ্ত।

বিশ্ব ইজতেমা বাংলাদেশের জন্য আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ রহমত ও নিয়ামত। মক্কা শরীফে পবিত্র হজ্বব্রত পালনের পর ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের এটাই বৃহত্তম সম্মেলন । আজ হইতে ৮৯ বত্সর পূর্বে হিজরি ১৩৪৫ সালে দিল্লীর নিকটবর্তী নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার (রহ.) মাজার সংলগ্ন মসজিদকে কেন্দ্র করে নূতন ও যুগোপযোগী পদ্ধতিতে যে তাবলীগ বা দ্বীন ইসলাম প্রচারের সূচনা হয়েছলি, তারই ধারাবাহিকতায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে বর্তমানের ইজতেমা। তাবলিগ জামাতের উদ্যোগে পৃথিবীর শতাধিক দেশে নিয়মিতভাবে ইজতেমা অনুষ্ঠিত আসছে। তন্মধ্যে তার মধ্যে বাংলাদেশের এই ইজতেমাই সবচাইতে বৃহৎ ও অধিক গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত ইজতেমায় অংশগ্রহণকারী মুসল্লীদের প্রায় অর্ধেকেই দ্বীনের মেহনতের উদ্দেশ্যে জামাত আকারে দেশ-বিদেশে একচিল্লা (৪০ দিন) কিংবা তিন চিল্লার জন্য বের হন। ইজতেমা তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জন, দ্বীনের তালিম গ্রহণ ও আমল-আখলাক সুন্দর করিবার এক অপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি করে। কালিমা, নামাজ, রোযা, ইলম ও যিকির, ইকরামুল মুসলিমিন, সহী নিয়ত ও দাওয়াতে তাবলিগ—তাবলিগ জামাতের এই ছয় উসুল বা মূলনীতি সম্পর্কেও সঠিক ধারণা পাওয়া যায়। মূলত বিশ্ব ইজতেমা তাবলিগ জামাতের সাংবাত্সরিক মহাসম্মেলন হলেও এট এখন শুধু আর তাবলিগ কর্মীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এর বাইরেও লক্ষ লক্ষ মানুষ সওয়াব হাসিলের উদ্দেশ্যে অংশগ্রহণ করছেন। কিন্তু তাহাদের মধ্য থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী ধর্ম প্রচারের জন্য মেহনতী দল বের হচ্ছে না বলে তাবলীগ জামাতের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণকে প্রায়শ আফসোস করতে দেখা যায়।

বস্তুত মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) হচ্ছেন আখেরী নবী। তার পর আর কোন নবী বা রাসূল আসবেন না। তাই তাবলিগ বা দ্বীন প্রচারের মহান দায়িত্ব বর্তমানে উম্মতে মোহাম্মদীর উপরই ন্যস্ত। লক্ষ লক্ষ সাহাবি, তাবেয়ি ও তাবে-তাবিয়িন ও আল্লাহর ওলিগণের ধারাবাহিতকায় সেই দায়িত্ব এখন আমরা যদি সঠিকভাবে পালন না করি, তা হলে এই জন্য হাশরের দিনে আমাদেরকেই জাবাবদিহি করতে হবে। রাসূল (সা.) বলেছেন, বাল্লিগু আন্নি অলাও আয়াত অর্থাৎ ইসলামের সামান্য একটি বাণী জানিলেও তাহা আমার পক্ষ হইতে অন্যের নিকট পৌঁছাইয়া দাও। ইহাই ঈমানের দাবি। তাবলিগের ধারা বহমান আছে বলিয়াই বিশেষত ইউরোপ-আমেরিকায় ইসলাম গ্রহণকারীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়িতেছে। এই আধুনিক পৃথিবীতে ইসলাম দ্রুত সম্প্রসারণশীল ধর্মের মর্যাদা লাভ করেছে। আর মুসলমানদের মধ্যেও ধর্ম প্রচার করতে হবে, যাতে তাদের ঈমান-আমল মজবুত হয়।বিশ্ব ইজতেমা হতে আমাদের অনেক কিছুই শিক্ষণীয় রয়েছে। ইজতেমার স্বেচ্ছাসেবকরা যেভাবে মেহনত করেন তা সমাজ কল্যাণের জন্যও দৃষ্টান্ত স্বরূপ। এখানে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের যে পরিবেশ ও বিশেষ ধর্মাবেগ তৈরি হয় তাও এক কথায় অতুলনীয়।

(দ্য রিপোর্ট /একেএম /জানুয়ারি ৩১,১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

ধর্ম এর সর্বশেষ খবর

ধর্ম - এর সব খবর