thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১,  ১৯ জমাদিউস সানি 1446

তামাক বিরোধীরা উদ্বিগ্ন

সিগারেটের মোড়কে সতর্ক-ছবি ছাপানোর বিরুদ্ধে কোম্পানিগুলো

২০১৬ ফেব্রুয়ারি ০৩ ২১:১৯:৫৬
সিগারেটের মোড়কে সতর্ক-ছবি ছাপানোর বিরুদ্ধে কোম্পানিগুলো

তামাক পণ্যের মোড়কে ৫০ শতাংশ জায়গাজুড়ে ছবিসহ সতর্কবাণী ছাপাতে গড়িমসি করছে দেশীয় তামাক পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। আইন অনুযায়ী আগামী ১৯ মার্চ থেকে তামাক পণ্যের মোড়কে ছবিসহ সতর্কবাণী ছাপানোর কথা রয়েছে। কিন্তু আইনটি যাতে বাস্তবায়িত না হয় কিংবা কালক্ষেপণের লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলে লবিংসহ স্বাস্থ্য ও আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি চালাচালি অব্যাহত রেখেছে কোম্পানিগুলো। এসব চিঠিতে নির্দেশ বাস্তবায়নে সময়সীমা বাড়ানোর পাশাপাশি তামাক পণ্যের মোড়কের নিচের দিকে ছবিসহ সতর্কবাণী ছাপানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, তামাকজাত দ্রব্য সেবনের কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর ৫৭ হাজার মানুষ মারা যায়। পঙ্গু হয় ৩ লাখ ৮২ হাজার মানুষ। সংস্থাটির ৫৬তম সম্মেলনে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক চুক্তি ‘ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল’-এ স্বাক্ষর করেছে। এ চুক্তি অনুযায়ী ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের উৎপাদন, ব্যবহার, ক্রয়-বিক্রয় ও বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার ২০১৩ সালে ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন, ২০১৩’ প্রণয়ন করে। এরপর আইন বাস্তবায়নে বিধিমালাটি গত বছরের ১৯ মার্চ গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। আইনটির ১০ নম্বর ধারা অনুযায়ী বিধিমালা প্রকাশের এক বছরের মধ্যে সব তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট, মোড়ক, কার্টন বা কৌটার দুই পাশে ওপরের দিকে ৫০ ভাগ পরিমাণ জায়গাজুড়ে তামাকজাত দ্রব্যের ক্ষতিকর দিক নিয়ে রঙিন ছবি ও লেখাসহ স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ করা বাধ্যতামূলক।

ধূমপানে ব্যবহৃত তামাকজাত দ্রব্যের ক্ষেত্রে যে ৬টি সচিত্র সতর্কবাণীর কথা আইনে বলা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে— ধূমপানের কারণে গলায় ও ফুসফুসে ক্যান্সার হয়, ধূমপানের কারণে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হয়, ধূমপানের কারণে স্ট্রোক, ধূমপানের কারণে হৃদ্‌রোগ হয়, পরোক্ষ ধূমপানের কারণে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হয় এবং ধূমপানের কারণে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হয়।

ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের ক্ষেত্রে যেসব ছবির কথা বলা হয়েছে তা হচ্ছে— তামাকজাত দ্রব্য সেবনে মুখে ও গলায় ক্যান্সার হয়, তামাকজাত দ্রব্য সেবনে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হয়। এ ছাড়াও বিধির মাধ্যমে অন্য একটি সতর্কবাণী নির্ধারণ করা হয়েছে।

আইনটি বাস্তবায়নের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, সিগারেট ও তামাকজাত দ্রব্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এখন এটি মানার ক্ষেত্রে নানা সমস্যার কথা বলে সময়ক্ষেপণের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

মন্ত্রণালয় ও তামাকবিরোধী বেসরকারি সংস্থাগুলোর সূত্রে জানা যায়, তামাক পণ্যের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো সম্প্রতি স্বাস্থ্য এবং আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠির পর চিঠি দিয়ে যাচ্ছে। তাদের দাবি হচ্ছে— আইন মানার জন্য ১ বছরের সময়সীমাটি কম। এটা ১৮ মাস হলে ভালো হতো। এ ছাড়া সতর্কবাণী মোড়কে নিচের দিকে ছাপানোর জন্য ব্যান্ডরোলের অজুহাতসহ নানা যুক্তি তুলে ধরেছে।

এ বিষয়ে ‘বাংলাদেশ সিগারেট ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যাসোসিয়েশন’-এর পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রোকসানা কাদেরের কাছে লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, আইনে আছে, সচিত্র সতর্কবাণী এমনভাবে ছাপাতে হবে, যেন তা স্ট্যাম্প বা ব্যান্ডরোল কিংবা অন্য কোনো কারণে ঢেকে না যায়। মূসক আইনে স্ট্যাম্প বা ব্যান্ডরোল যেভাবে লাগাতে বলা হয়েছে, তাতে করে ছবি ঢাকা পড়ে যাবে। তবে বাংলাদেশ সিগারেট ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যাসোসিয়েশনের দাবি— ছবির নমুনা বিধিমালা পাস হওয়ার ছয় মাস পরও তাদের হাতে তা পৌঁছায়নি।

ছবি হাতে পাওয়ার পর বাংলাদেশ সিগারেট ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যাসোসিয়েশন বলেছে, এই ছবিগুলো ছাপানোর কারিগরি দক্ষতা নেই। এ ছাড়া বিক্রেতাদের কাছে থাকা বা চলমান মজুদের ওপর উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সতর্কবাণী ছয় মাস পরপর পরিবর্তন হবে। কাজেই মাঝামাঝি সময়ে দুই ধরনের সতর্কবাণী পাওয়া যেতেই পারে।

এদিকে তামাক কোম্পানিগুলোর এসব অপতৎরতা ও ছলচাতুর্যে সরকারের নীতিনির্ধারক মহল যাতে বিভ্রান্ত না হন সে লক্ষ্যে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ মঞ্চ’-এর আহ্বায়ক ও সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী সম্প্রতি (১৭ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে।

ওই চিঠিতে সাবের চৌধুরী লিখেছেন, ‘জেনে উদ্বিগ্ন হলাম, বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলো রাষ্ট্রের এই বিধান প্রতিপালনে টালবাহানা শুরু করেছে। তামাক পণ্যের মোড়কে সচিত্র সতর্কবাণী মুদ্রণ সারাবিশ্বেই তামাক নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে কার্যকর কৌশলগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে স্বীকৃত। এ কারণেই তামাক কোম্পানিগুলো এটি বাস্তবায়ন না করতে সর্বদা সচেষ্ট। তিনি স্ট্যাম্প বা ব্যান্ডরোলটি সিগারেটের মোড়কের পাশে লাগানো হলেই আর ছবি ঢাকা পড়বে না।’

চিঠির সঙ্গে মোড়কের নমুনাও তিনি পাঠান বলে সূত্রটি জানায়।

তামাক কোম্পানির অপতৎপরতার বিষয়ে বেসরকারি সংস্থা ‘প্রগতির জন্য জ্ঞান-প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘আমরা সংশয়ের মধ্যেই রয়েছি। কেননা, এ বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। পৃথিবীব্যাপী দু’টি বিষয় তামাক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর। তা হচ্ছে— তামাক পণ্যে কর বৃদ্ধি করা এবং তামাক পণ্যের মোড়কে ছবিসহ সতর্কবাণী ছাপানো। তামাক কোম্পানিগুলো চায় যাতে এটা না হয়। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সকলের সতর্ক থাকতে হবে।’

‘প্রজ্ঞা’ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বিশ্বের ৭৭টি দেশে তামাক পণ্যের মোড়কে ছবিসহ সতর্কবাণী রয়েছে। নেপালে প্যাকেটের ৯০ ভাগ জায়গাজুড়ে এই সতর্ক বাণী রয়েছে ভারতে ৮৫ ভাগ জায়গাজুড়ে আগামী ১ এপ্রিল থেকে চালু হচ্ছে ছবিসহ সতর্কবাণী। তা ছাড়া শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডেও রয়েছে ছবিসহ সতর্কবাণী। কিন্তু বাংলাদেশে এটি কার্যকর করতে বাধা দিতে শুরু করেছে তামাক সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের আহ্বায়ক এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব রুহুল কুদ্দুস তালুকদার বলেন, ‘বিধি অনুযায়ী ১৯ মার্চ থেকে বাংলাদেশে সিগারেট ও অন্য তামাকের প্যাকেটের গায়ে এসব সচিত্র বাণী থাকবে। সচিত্র সতর্কবাণী এমনভাবে মুদ্রণ করতে হবে যেন স্ট্যাম্প বা ব্যান্ডরোলের নিচে চাপা না পড়ে।’

(দ্য রিপোর্ট/জেজে/এসআর/আইজেকে/এম/ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর