thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ কার্তিক ১৪৩১,  ১০ জমাদিউল আউয়াল 1446

পর্যটন খাতে ধস, র‌্যাংকিংয়ে অবনমন

ঝুঁকিতে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ০২ ১৩:৩৩:১৭
ঝুঁকিতে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতায় বিপর্যয় নেমে এসেছে দেশের পর্যটন খাতে। পর্যটনের প্রধান আকর্ষণ কক্সবাজার, সুন্দরবন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কুয়াকাটা পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে। এর প্রভাবে ঝুঁকির মুখে রয়েছে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ। এ ছাড়া এ খাতে কান্ট্রি ব্র্যান্ড র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৬০তম স্থানে। গেল বছর এর অবস্থান ছিল ১৪৮তম স্থানে।

ট্যুর অপারেটর অব বাংলাদেশ (টোয়াব) এর সাবেক সভাপতি ও বান্দরবান হিলসাইড রিসোর্টের মালিক হাসান মনসুর দ্য রিপোর্টকে বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের পর্যটন শিল্পের ক্ষতির পরিমাণ বিগত যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। দেশে স্থিতিশীল পরিবেশ ফিরে এলেও এই ক্ষতি আগামী কয়েক বছরেও পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। বিশেষ করে বিদেশি পর্যটকরা বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের সূত্র মতে, ৫০ লাখেরও বেশি দেশি-বিদেশি পর্যটক প্রতি মৌসুমে এ সব জায়গা ভ্রমণ করে। তবে এবার এ সংখ্যা দেড় লাখও হয়নি। এদিকে পর্যটন খাতে বিভিন্ন সূচক বিবেচনায় বিশ্বের ১৮৭টি দেশের ওপর জরিপ চালিয়ে ‘কান্ট্রি ব্র্যান্ড ‌র‌্যাংকিংয়ে-২০১৩’ একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে স্পেনভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ব্লুম কনসালটিং। সম্প্রতি প্রকাশিত এ প্রতিবেদন অনুযায়ী, পর্যটনের বিভিন্ন সূচক বিবেচনায় ২০১৩ সালে বাংলাদেশের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ১৬০তম। আগের বছর এ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৮তম।

পর্যটন খাতের ছয়টি বিষয় প্রাধান্য দিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। এগুলো হল- বিনিয়োগে আকর্ষণ(বাণিজ্য), পর্যটন আকর্ষণ, মেধা আকর্ষণ, সুনাম বৃদ্ধি, রফতানি বৃদ্ধি ও জনকূটনীতির উন্নয়ন।

পর্যটন খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়কে বাংলাদেশে পর্যটন মৌসুম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে রাজনৈতিক সহিংসতায় বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হওয়ায় গত সেপ্টেম্বর থেকে বুকিং থাকা প্রায় সব বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশে ভ্রমণ এড়িয়ে গেছেন। পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টদের আশা ছিল, নির্বাচনের পর দেশের পরিস্থিতি শান্ত হলে পুনরায় বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশ ভ্রমণে আসবে। কিন্তু নির্বাচনের পরও ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশকে নিরাপদ মনে করছে না বহির্বিশ্ব। পর্যটকদের জন্য বাংলাদেশকে তাই ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সতর্কবার্তা জারি করেছে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, হংকং, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, নিউজিল্যান্ড, জাপান, ফ্রান্স, ইউক্রেনসহ ইউরোপের প্রায় সব দেশ। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে এ সতর্কবার্তায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাংলাদেশ ভ্রমণ না করতে নাগরিকদের পরামর্শ দিয়েছে দেশগুলো। এতে এপ্রিল পর্যন্ত ট্যুরিস্টের প্রায় সব বুকিং বাতিল হয়ে গেছে। ফলে ২০১৪ সালেও বাংলাদেশের এ খাত লোকসানের ধারা থেকে বেরোতে পারবে না বলে মনে করছেন তারা।

এ বিষয়ে প্যাসিফিক এশিয়া ট্র্যাভেল লিমিটেড (পিএটিএল) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের মহাসচিব ও ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) পরিচালক তৌফিক রহমান বলেন, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ট্যুরিজম খাতের পাশাপাশি গোটা দেশকে নিয়েই নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে। যা থেকে বেরিয়ে আসা আমাদের জন্য কঠিন হবে।

ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের (ডব্লিউটিটিসি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৩ সালের আগের বছরের তুলনায় ৩ দশমিক ২ শতাংশ হারে পর্যটক বৃদ্ধি পাবে। আবার ২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ২৭ লাখ লোকের। এর মধ্যে ১২ লাখ ৮১ হাজার ৫০০ জন সরাসরি পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত। ২০১৩ সালে কর্মসংস্থানের এই প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৪ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে শেষ পর্যন্ত এর কোনো কিছুই অর্জন করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

রাঙ্গামাটি পর্যটন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপক আখলাকুর রহমান জানান, ‘গত নভেম্বরেও আমরা বসে ছিলাম, ডিসেম্বর মাসও শেষ হয়ে গেছে। এক হিসেবে বসেই দিন কাটাচ্ছি। কোনো রুম বুকিং নেই। পর্যটক মৌসুমে কোনো পর্যটক আসতে না পারায়, এ খাতে লোকসানের আশঙ্কা রয়েছে। প্রতিবছর রাঙ্গামাটি পর্যটন কর্পোরেশন রাজস্ব খাতে প্রচুর রেভিনিউ জমা দিলেও, এ বছর তা সম্ভব নাও হতে পারে।’

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে রয়েছে সাড়ে তিন শতাধিক হোটেল-মোটেল। কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কৈয়ুম চৌধুরী বলেন, গত নভেম্বর থেকে আমাদের খুব খারাপ অবস্থা যাচ্ছে। আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে কিছু একটা করার চেষ্টা করছি।

খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেলের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা, গত সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১২ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছে। তার মধ্যে অক্টোবরে ৫ লাখ ৮ হাজার টাকা, নভেম্বরে ৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা ও ডিসেম্বরে ৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। তিনি জানান, গত দুই সপ্তাহ ধরে আবার পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/এএইচ/এসবি/সা/ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশেষ সংবাদ এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ সংবাদ - এর সব খবর