thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৩ জমাদিউল আউয়াল 1446

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ০২ ২১:১৪:১৩
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বর্ধিত ফি ও সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধের দাবিতে আন্দোলনে নামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তখনই তাদের ওপর বেপরোয়া গুলি চালায় পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। দিনভর দফায় দফায় ছাত্রলীগ-পুলিশের যৌথ হামলায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ক্যাম্পাস। এতে সাংবাদিকসহ প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ ও দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।

রবিবার সকাল ১১টার দিকে পুলিশ ও ছাত্রলীগ যৌথভাবে এই হামলা চালায়। পরে পুলিশ দফায় দফায় শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।

এতে গুরুতর আহত ৪০ জনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অন্যদের বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্র ও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। আহতদের মধ্যে অন্তত ৭ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।

ঘটনার প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ভবন, প্রাইভেটকার এবং মোটরসাইকেল ভাংচুর করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ক্যাম্পাসে দুই প্লাটুন বিজিবি ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসিসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিদের পদত্যাগ দাবি করেন। ক্যাম্পাসের কর্তব্যরত সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে তিন সহকারী প্রক্টরের পদত্যাগ ও রাজশাহী মহানগর পূর্ব জোনের ডিসি প্রলয় চিচিমকে ক্যাম্পাস থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিকরা।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, বর্ধিত ফি প্রত্যাহার ও সান্ধ্যকালীন কোর্স বাতিলের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে রবিবার সকাল ৮টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল থেকে শিক্ষার্থীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের সামনে জড়ো হন। প্রশাসন ভবনের প্রধান ফটক তালাবদ্ধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করতে থাকেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একটি মিছিল থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি ও ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর সিরাজুল ইসলাম, হেলাল উদ্দিন এবং জুলফিকার আলীর নেতৃতে পুলিশ-ছাত্রলীগ যৌথভাবে শিক্ষার্থীদের ওপর বেপরোয়া গুলি, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে দিগ্বিদিক ছুটতে শুরু করেন। শিক্ষার্থীরা প্রাণ বাঁচাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে আশ্রয় নেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে প্রায় দুইশতাধিক শিক্ষার্থী আটকা পড়ন। বাকি শিক্ষার্থীরা হলে আশ্রয় নেওয়ার জন্য চলে যান।

এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থী তৌহিদ, সাজু সরদার, আতিকুর রহমান, জহির রায়হান, বিথি সাহা, সালমা, তারিন, আবু সুফিয়ান, রাজীব, জিলানী, রুবেল পারভেজ, আনোয়ার, মায়া, রোজিনা, সোভন, আশুরাসহ অন্তত অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধসহ দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হণ। পরে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী পুরাতন ফোকলোর মাঠে অবস্থান নিলে ছাত্রলীগ সেখানেও হামলা চালায়। পরে বিভিন্ন আবাসিক হলে পুলিশ ও ছাত্রলীগ পৃথকভাবে হামলায় চালিয়ে বেশকিছু শিক্ষার্থীকে আহত করে। এ দিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা চালানোর খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে আবাসিক হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা দুপুর পৌনে ২টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনের দিকে যাওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে পৌঁছলে পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশি হামলায় অন্তত অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হন। পরে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে রবীন্দ্র কলা ভবন, জুবেরী ভবন, মমতাজ উদ্দিন কলা ভবনসহ দুটি মাইক্রোবাস ও চারটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করেন।

এদিকে, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর প্রথম দফায় পুলিশ-ছাত্রলীগের যৌথ হামলার সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে আরএমপি পুলিশের উপ-কমিশনার (পূর্ব) প্রলয় চিচিম, বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন সহকারী প্রক্টর সিরাজুল ইসলাম, হেলাল উদ্দিন ও জুলফিকার আলীর নির্দেশে পুলিশ সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয় এবং একপর্যায়ে তাদের ওপর গুলি নিক্ষেপ করে। এতে দুই সাংবাদিক গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ১০ সাংবাদিক আহত হন। আহতরা হলেন- মাছরাঙা টিভির গোলাম রাব্বানী, বিডিনিউজের নাদিম মাহমুদ, শীর্ষ নিউজের জাকির হোসেন তমাল, নিউজ এইজের নাজিম মৃধা, দৈনিক মানবকণ্ঠের বুলবুল আহমেদ ফাহিম, জহুরুল ইসলাম মুন, মেহেদী ও গোলাম রসুল রনি। এই ওপর হামলার প্রতিবাদে সাংবাদিকরা তাৎক্ষণিকভাবে গ্রন্থাগারের সামনে বিক্ষোভ করেন।

পরে সাংবাদিকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সাথে সাক্ষাৎ করে প্রশাসনকে বিকেল ৫টার মধ্যে ঘটনার সাথে জড়িত তিন সহকারী প্রক্টরের পদচ্যুতি এবং উপ-কমিশনার প্রলয় চিচিমকে ক্যাম্পাস থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানান।

সাংবাদিকদের দাবি মানা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তব্যরত সাংবাদিকরা। এ দাবি না মানলে রবিবার রাবিতে কর্তব্যরত সাংবাদিক ও রাজশাহী শহরের সাংবাদিকরা কালো পতাকা মিছিল করবেন। এ দিকে ক্যাম্পাসের অচলাবস্থা নিয়ে গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় ভিসির বাসভবনে জরুরি সিন্ডকেট বৈঠক বসে।

এ ব্যাপারে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আহ্বায়ক আহসান হাবিব রকি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে প্রশাসনের নির্দেশে পুলিশ ও ছাত্রলীগ যৌথভাবে আমাদের ওপর হামলা চালায়। এতে অসংখ্য আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আমরা প্রশাসনকে আবারও তিন দফার দাবির লক্ষ্যে কর্মসূচি দিয়েছি।’ পূর্বের দাবিসহ এ দাবি না মানলে রোববার থেকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার কথা জানান তিনি।

ছাত্রলীগ সভাপতি মিজানুর রহমান রানা দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমরা মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় আন্দোলনকারীরা আমাদের লক্ষ্য করে ঢিল নিক্ষেপ করে ও উস্কানিমুলক বক্তব্য দেয়। আমরা তাদের পাল্টা জবাব দিয়েছি মাত্র।’

এ বিষয়ে পুলিশের উপ-কমিশনার প্রলয় চিচিম বলেন, উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশেই পুলিশ গুলি চালিয়েছে। ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলেও তিনি জানান।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মিজানউদ্দিন দ্য রিপোর্টকে বলেন, বর্তমানে ক্যাম্পাস শান্ত রয়েছে। বর্ধিত ফি বাতিল ও সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স কোর্স বন্ধের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিন্ডিকেট বৈঠক আহ্বান করে এ সিদ্ধান্ত নেয়।

জনসংযোগ প্রশাসনের অধ্যাপক মো. ইলিয়াছ হোসেন বিষয়টি দ্য রিপোর্টকে নিশ্চিত করে জানান, আগামীকাল (সোমবার) সকাল ৮টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলার পর বেলা ২টার দিকে জনসংযোগ দপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পরীক্ষাসহ বিভিন্ন বর্ধিত ফি প্রত্যাহার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

(দ্য রিপোর্ট/জেএইচ/জেএম/এএল/জামান/ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

শিক্ষা এর সর্বশেষ খবর

শিক্ষা - এর সব খবর