thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২১ জমাদিউল আউয়াল 1446

পুলিশের তথ্য

সহিংসতায় এক বছরে নিহত ৩৪১

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ০৬ ২১:২৮:৫৮
সহিংসতায় এক বছরে নিহত ৩৪১

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে রাজনৈতিক সহিংসতায় সারা দেশে ৩৪১ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য ২০ জন। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিবিনিময়ে ২০১৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে এ নিহতের ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশ সদর দফতরের এক পরিসংখ্যানে এই তথ্য জানা গেছে।

এদিকে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত একাধিক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ সব ঘটনায় জড়িত হত্যাকারীরা এখনও আইনের আওতায় আসেনি। অনাকাঙ্ক্ষিত এ সব ঘটনার রহস্য উদঘাটনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও উল্লেখযোগ্য কোনো তৎপরতা দেখাতে পারেনি।

পুলিশ সদর দফতরের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারি ২০১৩ সাল থেকে পরবর্তী এক বছরে ৩৪১ জন নিহত হয়েছে। যার মধ্যে আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য ২০ জন। এই ২০ জনের মধ্যে পুলিশ ১৪ জন, সেনা সদস্য ১ জন, বিজিবি ৩ জন, আনসার ১ জন ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) সদস্য ১ জন। বাকি ৩২০ জনের মধ্যে রয়েছেন রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ। এর মধ্যে অন্তত ৮৫ জন সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যানবাহনে আগুন ও সহিংসতায় নিহত হয়েছে।

বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক নেতাদের হত্যার পেছনে সরকারের হাত রয়েছে। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মাত্র মাস খানেক সময়ের মধ্যে সরকার ও তার অনুগত বাহিনী দিয়ে সারাদেশে বিরোধী দলের শতাধিত নেতাকর্মীকে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করেছে।

এদিকে ক্রসফায়ারের নামে দলীয় কর্মী হত্যার জন্য নোয়াখালীর এসপি আনিসুর রহমানকে দায়ী করেছে বিএনপি। দলের যুগ্ম-মহাসচিব ও সুপ্রিমকোর্ট বার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলামকে দুইদিন আগে প্রেসক্লাব থেকে আটক করে নোয়াখালীতে নিয়ে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে।’

অপরদিকে গত ২২ বছরে ক্ষমতাসীন দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শাসনামলে রাজনৈতিক সহিংসতায় ২ হাজার ৫১৯ জন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’-এর তথ্য- গত ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সংঘটিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে ৩৯ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকর্মী যৌথবাহিনীর গুলিতে নিহত হন।

মানবধিকার সংস্থা অধিকারের তথ্য অনুসারে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ফলে নিহত ৩৯ জনের মধ্যে ২০ জন ক্রসফায়ার/এনকাউন্টার/বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন। গত ২৭ জানুয়ারি ভোরে সাতক্ষীরার তালা উপজেলা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সহ-সভাপতি আজহারুল ইসলাম (২৮) যৌথবাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন। ২৬ জানুয়ারি আজহারুল ইসলামকে ঘোনা এলাকার একটি চিংড়িঘের থেকে আটক করে যৌথবাহিনী।

গত ১৯ জানুয়ারি রাতে মেহেরপুর জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি তারিক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম (৩৫) যৌথবাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে তার পরিবার অভিযোগ করেছে। এদিন আনুমানিক বিকেল ৩টায় মেহেরপুর শহরের ইসলামী ব্যাংক ভবন থেকে গোয়েন্দা পুলিশ ও সদর থানা পুলিশের একটি দল তাকে আটক করে।

পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, যারা রাষ্ট্রযন্ত্রের ক্ষতিসাধন করতে চায় পুলিশ ও র‌্যাব তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে। পুলিশ দেশ, জাতি ও নিজের নিরাপত্তার জন্য কাজ করছে। আইনের মধ্যে থেকেই পুলিশ কাজ করছে। পুলিশ কারও প্রতি অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে না।

অভিযোগে জানা গেছে, স্থানীয় এমপি ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের গাড়ি বহরে হামলা ও হত্যা মামলার মূল আসামি বিএনপি নেতা গোলাম রব্বানী ও অপর আসামি ছাত্রদল নেতা আতিকের (২৫) লাশ উদ্ধার করা হয়। মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করছে না পুলিশ। এমনকি হত্যার নেপথ্য রহস্য উদঘাটনেও প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা পালন করছে পুলিশ।

নীলফামারী জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. জবায়দুর রহমান বলেন, ‘মন্ত্রী মহাদয়ের গাড়ি বহরে হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার ২ আসামির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখনও কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনার রহস্য উদঘাটনের তদন্ত চলছে।

সর্বশেষ গত সোমবার সকালে রাজধানীর পল্লবী এলাকায় পুলিশের সঙ্গে শিবির কর্মীদের সংঘর্ষে দারুস সালাম থানা জামায়াতের আমির বেলায়েত হোসেন নিহত হন। এর আগে সিরাজগঞ্জ ও নোয়াখালীতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দু’জন নিহত হয়েছে। গত ৩১ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার রাত দু’টার দিকে সিরাজগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুল ইসলাম হত্যা মামলার আসামি র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় এবং নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলা বিএনপির সাবেক নেতা তৌহিদুল ইসলাম ওইদিন ভোরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

(দ্য রিপোর্ট/কেজেএন/এইচএসএম/এনঅই/ ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশেষ সংবাদ এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ সংবাদ - এর সব খবর