thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২২ জমাদিউল আউয়াল 1446

স্বাগতম ১৪৩৫ হিজরি

২০১৩ নভেম্বর ০৪ ১৬:৪৫:১১
স্বাগতম ১৪৩৫ হিজরি

দিরিপোর্ট২৪ ডেস্ক : সময়ের চক্রে ইসলামিক বর্ষপঞ্জির আরও একটি বছর পূর্ণ হল। আল বিদা ১৪৩৪, স্বাগতম ১৪৩৫ হিজরি। মুসলমানদের ধর্মীয় বিধি-বিধানের সঙ্গে সময়ের ধারণাটি গুরুত্বপূর্ণ। নামাজ, রোজা, হজ্ব, জাকাত, শবেবরাত, শবেকদর, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহাসহ ধর্মীয় বিষয়াবলীর জন্য চাঁদকেন্দ্রীক হিজরি সালের হিসাব অপরিহার্য।

হযরত উমর (র.) তার খিলাফতকালে হিজরি সনের প্রচলন করেছিলেন। কিন্তু বলা হয়ে থাকে, ইসলামী বর্ষপঞ্জি পৃথিবীর আদি ও আদর্শ সাল গণনার পদ্ধতি, যা পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকে চলে আসছে। এ পদ্ধতিতেও বারো মাসে একবছর পূর্ণ হয়। তবে মাস ঊনত্রিশ না ত্রিশ দিনে হবে তা ঠিক হয় চন্দ্রের উপর। সাধারণত হিজরি সন ৩৫৪ বা ৩৫৫ দিনের হয়ে থাকে।

বলা হয়ে থাকে, ইসলাম হচ্ছে ‘দ্বিনুল ফিতরাহ’ বা স্বভাব-অনুকূল ধর্ম। ইসলামের বিধিবিধান এমনভাবে দেওয়া হয়েছে যে, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, শহুরে-গ্রাম্য, সমতলবাসী বা পাহাড়ি সবাই যেন স্বাচ্ছন্দে পালন করতে পারেন। চাঁদের মাস ও বছরের হিসাবেই সহজে এটা করতে পারা যায়। জোতির্বিদ্যা বা আবহাওয়া বিষয়ক তথ্য যাদের কাছে থাকে না তারাও চাঁদ দেখে বিধানগুলো পালন করতে পারেন। এছাড়া চন্দ্রবর্ষের হিসাব অনুযায়ী হওয়ায় একটি ইবাদত বিভিন্ন মৌসুমে পালনের সুযোগ মুসলমানরা পান। কখনও রোযা ছোট দিনের হয়, কখনও দীর্ঘ দিনের। কখনও ঈদ ও হজ্ব হয় শীতকালে, কখনও গ্রীষ্মকালে।

হযরত উমর (র.) আদি থেকে চলে আসা বর্ষপঞ্জিকে তিনি নতুন নামকরণ করেছিলেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে আল্লাহর বিধানে বছর গণনার মাস ১২টি নির্ধারিত। এগুলোর মধ্যে চারটি মাস নিষিদ্ধ। এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং তোমরা এগুলোর বিষয়ে নিজেদের উপর জুলুম কর না (সূরা তওবা, আয়াত-৩৬)।

রাসূলুল্লাহ (সা.)ও বিদায় হজের ভাষণে বলেন, হে মানবমণ্ডলী, তোমরা মনোযোগসহকারে শোন। যে দিন আল্লাহ আকাশ ও পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন, সেদিন থেকে সময় গণনার হিসাব যে বিধান অনুযায়ী হয়ে আসছে এখনও ওই একই বিধানের আলোকে তা পরিচালিত হবে। আল্লাহতায়ালা যেদিন আকাশ-পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন, সেদিন থেকে আল্লাহর বিধানে বছর গণনার মাস ১২টি নির্ধারিত। এগুলোর মধ্যে চারটি মাস নিষিদ্ধ। ওই চার মাসের ব্যাপারে তোমরা নিজেদের উপর কোন জুলুম কর না (বুখারি)। উল্লেখিত চারটি নিষিদ্ধ মাস হল- মুহররম, জিলকদ, জিলহজ ও রজব।

জাহেলি যুগে মাসগুলোর ধারাবাহিকতায় আরবরা কিছুটা রদবদল করে নিয়েছিল। মুজার গোত্র রজব মাসকে জমাদিউল আখির ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী তথা সপ্তম মাস হিসেবে গণ্য করত। পক্ষান্তরে রাবিয়া গোত্র অষ্টম মাস হিসেবে রজব মাসকে গণ্য করত। রাসূলুল্লাহ (স.) ১২ মাসের ধারা গণনায় মুজার গোত্রের হিসাব সঠিক বলে জানিয়ে দেন এবং রাবিয়া গোত্রের বছর গণনার রীতি বাতিল করে দেন। (ইবনে বাসির)।

একবার কুফার গভর্নর আমর ইবনুল আস (র.) হযরত উমরকে লিখে পাঠালেন, আমীরুল মুমিনিন, বিভিন্ন সময় আপনার পক্ষ থেকে আমাদের কাছে অনেক জরুরি পত্রাদি আসে, যাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ থাকে। আমাদের প্রতি খলিফার জরুরি ফরমান থাকে। অথচ পত্রে কোনো দিন, তারিখ, সাল উল্লেখ থাকে না, ফলে আমরা বুঝতে পারি না পত্রটি কবে আমাদের লিখা হল, কত দিন পর আমরা সেটা পেলাম। আর কবে থেকে খলিফার ফরমান বা আদেশ কার্যকর হবে? অতএব আপনার পত্রে নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ থাকা জরুরি।

চিঠিটি পড়ে হজরত উমর (র.) বিশিষ্ট সাহাবিদের এক জরুরি সভা ডাকলেন। সভায় সবাই নিজ নিজ মতামত পেশ করলেন। হযরত উমর (র.) সবার প্রস্তাব শোনার পর বললেন, রাসূল্লাহ (সা.)-র জন্মের বছরকে সূচনা ধরলে খ্রিস্টানদের অনুসরণ করা হবে। কারণ তারা হজরত ঈসা (র.)-র জন্মের বছর থেকে সন গণনা করে। আর মৃত্যুর বছরকে কেন্দ্র করে করলে শোককে স্থায়ীভাবে সামাজিকীকরণ করা হবে। আর নবুওয়াতের বছরকে কেন্দ্র ধরলে বিষয়টা সম্পূর্ণভাবে আধ্যাত্মিক রূপ পাবে। তিনি প্রস্তাব দিলেন আল্লাহর রাসূল (সা.)-র হিজরতের (ইংরেজি ৬২২ সাল) বছর থেকে হিজরি সনের প্রবর্তন করা যেতে পারে। এভাবে মুসলমানদের স্বতন্ত্র বর্ষপঞ্জি হিজরি সন চালু হয়।

হিজরতের বছর থেকে সাল গণনা চূড়ান্ত হওয়ার পেছনে তাৎপর্য হল, হিজরতকে ‘আল ফারিকু বাইনাল হাক্কি ওয়াল বাতিল’ অর্থাৎ সত্য-মিথ্যার মাঝে সুস্পষ্ট পার্থক্যকারী বিষয় হিসেবে মূল্যায়ন করা। এছাড়া হিজরতের পর থেকেই মুসলমানরা প্রকাশ্য ইবাদত ও সমাজ-গঠনের রূপরেখা বাস্তবায়ন করতে পেরেছিলেন। প্রকাশ্যে আযান, নামায, জুমা, ঈদ সবকিছু হিজরতের পর থেকেই শুরু হয়েছে।

(দিরিপোর্ট২৪/ডব্লিউএস/এমএআর/নভেম্বর ০৪, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

ধর্ম এর সর্বশেষ খবর

ধর্ম - এর সব খবর