thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি 25, ২২ মাঘ ১৪৩১,  ৬ শাবান 1446

ছেলের সহপাঠীদের পেটালেন এক অভিভাবক

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ১৩ ০১:০৩:২১
ছেলের সহপাঠীদের পেটালেন এক অভিভাবক

বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটের পল্লীতে এক শিক্ষার্থীর বাবা বিদ্যালয়ে পাঠদানকালে শ্রেণিকক্ষে ঢুকে ছেলের পাঁচ সহপাঠীকে এলোপাথাড়ি মারধর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সময় শ্রেণিকক্ষে পাঠদানরত শিক্ষক ওই অভিভাবককে বাধা দিলে তিনি শিক্ষককে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং তার সামনেই একে একে ওই ছাত্রদের উপর্যুপরি চড়, ঘুষি ও লাথি মারেন।

বাগেরহাট সদর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের কার্ত্তিকদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ধর্ম ক্লাস চলাকালে মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ওই অভিভাবকের নাম গাজী মঞ্জুর হোসেন। তার বাড়ি ওই স্কুলের পাশে এবং তার ছেলে তানজিম গাজী ওই স্কুলেরই অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার অভিভাবকদের নিয়ে সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

আহতরা হলেন- কাজী লিমন (১৩), কাজী জিহাদুল ইসলাম (১৩), রাজন গাজী (১৩), ইসমাঈল শেখ (১৩) ও রিয়াদ (১৩)। এরা সবাই ওই বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র এবং প্রহারকারীর ছেলে তানজিমের সহপাঠী। এদের মধ্যে কাজী লিমনকে রক্তাক্ত অবস্থায় সন্ধ্যায় বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

বাগেরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থী কাজী লিমন দাবি করে, ‘দুপুরে সহপাঠী তানজিম ও রাজন গাজীর মধ্যে মারামারি হয়। আমিসহ অন্যরা এ ঘটনায় জড়িত ছিলাম না। কিন্তু তানজিম ও গোলাম গাজী নামে আর এক ছাত্র বাড়ি গিয়ে তানজিমের বাবার কাছে নালিশ করলে তানজিমের বাবা বিদ্যালয় মাঠে ফেলে আমাকে মারধর করেন। পরে তিনি শ্রেণিকক্ষে এসে অন্যদের মারধর করেন। এ সময় ধর্ম শিক্ষক বদরুজ্জামান পাঠদান করছিলেন।’

স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির অন্যতম সদস্য কাজী মারুফ হোসেন বলেন, ‘তানজিমের বাবা আমার ছেলে জিহাদুলকেও বিনা কারণে মারধর করেছেন। খবর পেয়ে আমি বিদ্যালয়ে এসে দেখি তানজিমের বাবা চলে গেছেন। যা কিছুই ঘটুক না কেন কোনো অভিভাবক এভাবে নিজে হিংস্রতা দেখাতে পারেন না। আমরা অভিভাবক ও শিক্ষকদের নিয়ে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার করতে চাই।’

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে গাজী মঞ্জুর হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলে তানজিম বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই পাঁচ-ছয়জন সহপাঠী যখন তখন আমার ছেলেকে মারধর করে। তাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। এতে তানজিম ক্লাসে যেতে চায় না। বাড়িতে এসে প্রায়ই কান্নাকাটি করে। আমি তাকে সব সময় শিক্ষকদের কাছে বিচার দিতে বলেছি। মঙ্গলবার দুপুরে ওই পাঁচ ছাত্র জোট হয়ে তানজিমকে স্কুলে বসে মারধর করলে সে বাসায় এসে নালিশ করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ছেলের কান্না দেখে আকস্মিকভাবে আমি উত্তেজিত হয়ে ছেলেকে নিয়ে বিদ্যালয়ে যাই। মাঠের মধ্যে লিমন নামে একজনতে আমার ছেলে শনাক্ত করলে আমি তাকে একটি চড় দেই। এতে তার নাক ফেটে রক্ত বের হলে আমার মন খারাপ হয়। আমি বিদ্যালয়ের পাঠাগারে গিয়ে শিক্ষকদের কাছে আমার ছেলের বিষয়ে নালিশ করে ফিরে আসি। আমি কোনো শিক্ষককে গালাগালি করিনি বা শ্রেণিকক্ষে ঢুকে কোনো শিক্ষার্থীকে মারধর করিনি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাসুমুর রহমান বলেন, ‘এসএসসি পরীক্ষার কারণে আমি মঙ্গলবার বিদ্যালয়ে ছিলাম না। ধর্ম শিক্ষক বদরুজ্জামান এবং শরীরচর্চা শিক্ষক এনামুল হক ঘটনার বড় প্রত্যক্ষদর্শী। এনামুল ওই শ্রেণিকক্ষের পাশে ষষ্ঠ শ্রেণির ক্লাস নিচ্ছিলেন। সহকারী প্রধান শিক্ষক বিপুল কুমার সাহাও ঘটনা দেখেছেন। তানজিমের বাবা ছাত্রদের মারধর করেছেন বলে জানালে আমি তা বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিকে জানিয়েছি।’

ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এসএম. জাহিদ হাসান রাতে দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমি এলাকায় ছিলাম না। শুনেছি এক শিক্ষার্থীর বাবা ক্লাসে ঢুকে ছাত্রদের প্রহার করেছেন এবং শিক্ষকদের গালাগালি করেছেন। ঘটনা জানার পর আমি প্রধান শিক্ষককে বৃহস্পতিবার অভিভাবক সমাবেশ ডাকতে বলেছি। সবাইকে নিয়ে আমরা ঘটনার সুষ্ঠু বিচার করব।’

(দ্য রিপোর্ট/এএস/এনডিএস/এএল/ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর

জেলার খবর - এর সব খবর