thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল 24, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ২০ শাওয়াল 1445

চুনাপাথরের দ্বিতীয় কূপ খনন ভগবানপুরে

২০১৬ অক্টোবর ১২ ২০:০৭:২২
চুনাপাথরের দ্বিতীয় কূপ খনন ভগবানপুরে

নূরুজ্জামান তানিম, দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার বিলাশবাড়ী ইউনিয়নের ভগবানপুর গ্রামে দ্বিতীয় বারের মতো সর্ববৃহৎ চুনাপাথরের খনির অস্তিত্ব অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের (জিএসবি) কর্মকর্তারা বুধবার (১২ অক্টোবর) ভগবানপুর গ্রাম পরিদর্শন করে কূপ খননের (ড্রিলিং) স্থান নির্ধারণ করেছেন।

প্রথম নমুনা পরীক্ষার স্থান (তাজপুর গ্রাম) থেকে দ্বিতীয় স্থানটি ১ দশমিক ৯ কিলোমিটার উত্তর-দক্ষিণে অবস্থিত। চলতি সপ্তাহে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় চুনাপাথরের খনির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে স্থান নির্ধারণের অফিস আদেশ জারি করে।

জানা গেছে, ভূ-ত্বাত্ত্বিক অভিকর্ষীয় (গ্রাভিটি) ও চুম্বকীয় (ম্যাগনেটিক) জরিপের ভিত্তিতে ভূগর্ভে বেসিন বা কড়াই আকৃতির কঠিন শিলাস্তরের ৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে সর্ববৃহৎ চুনাপাথরের খনির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ওই খনির প্রথম নমুনা সংগ্রহের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে তাজপুর গ্রামের একটি জমিকে গভীরতম স্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ওই একই বিবেচনায় দ্বিতীয় নমুনা পরীক্ষার জন্য ভগবানপুর গ্রামের একটি জমি চিহ্নিত করা হয়েছে।

ইতিমধ্যে এ বিষয়ে জমির মালিকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে বা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্ধারিত স্থানে ড্রিলিং করে নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন জিএসবি কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে তাজপুরের প্রাথমিক খনন প্রক্রিয়ার প্রকৌশলীদের দলনেতা ও জিএসবির উপপরিচালক মহিরুল ইসলাম দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘চুনাপাথরসহ অন্যান্য খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানের লক্ষ্যে দ্বিতীয় নমুনা পরীক্ষার জন্য তাজপুরের মতোই ভগবানপুর গ্রামে একটি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। আগের ড্রিলিংয়ের স্থান থেকে নতুন ড্রিলিং করার স্থানের দূরত্ব ১ দশমিক ৯ কিলোমিটার উত্তর-দক্ষিণে অবস্থিত। আজ (বুধবার) এ স্থান নির্ধারণ করা হয়। অক্টোবরের শেষে বা নভেম্বরের শুরুতে নির্ধারিত স্থানে ড্রিলিংয়ের কাজ শুরু হবে।’ এর আগে তাজপুরে চুনাপাথরের অস্তিত্ব পরীক্ষার প্রাথমিক খনন প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন জিএসবির উপপরিচালক মাহিরুল ইসলাম। অভিকর্ষীয় ও চুম্বকীয় জরিপের পর ২০ ফেব্রুয়ারি ভূতাত্ত্বিক তত্ত্ব অনুসন্ধান ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানে একটি তদন্তদল তাজপুরে খননকাজ শুরু করে, যা ২৬ মে শেষ হয়। ওই খনন কার্যক্রমে ২ হাজার ২১৪ ফুট মাটির গভীরে চুনাপাথরের খনির সন্ধান পাওয়া যায়, যার গভীরতা ২ হাজার ৩১৩ ফুট পর্যন্ত। অর্থাৎ চুনাপাথরের স্তর ৯৯ ফুট। তবে চুনাপাথর ছাড়া খনিতে আরও অন্য খনিজের অস্তিত্ব আছে কি না তা নিশ্চিত করতে ২ হাজার ৭৬৭ ফুট খনন করা হয়।

তবে চুনাপাথর প্রাপ্তির নিশ্চয়তা পাকাপোক্ত করতে আরও আট-নয়টি স্থানে কূপ খনন করা হবে। ওই কূপগুলোতে একই বা কাছাকাছি মাত্রায় চুনাপাথরের স্তর পাওয়া গেলেই সম্ভাব্য ধারণা পাওয়া যাবে কী পরিমাণ খনিজ মজুদ আছে। তবে অন্যান্য কূপ চুনাপাথরের স্তরের পরিমাণে কমে গেলে পুরো অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসতে পারে। একাধিক কূপে চুনাপাথর অস্তিত্ব নিশ্চিত করার পরই মুনাফার সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে। এরপর আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে (স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার) বাণিজ্যিকভাবে চুনাপাথর উত্তোলনের কাজ দেওয়া হবে। এ প্রক্রিয়াও শুরু করতে প্রায় তিন বছর লাগতে পারে বলে মনে করেন জিএসবি কর্মকর্তারা।

বেসিন হলো―পৃথিবীর ভূগর্ভে কঠিন শিলাস্তর, যা কোথাও উঁচু, কোথাও নিচু; আবার কোথাও সমতলবেষ্টিত। শিলাস্তরটি উঁচু-নিচু হওয়ার ফলে ভূগর্ভে কোনো কোনো জায়গা বেসিন বা কড়াই আকৃতির হয়ে রয়েছে। ভূগর্ভে এমন আকৃতির শিলাস্তরকেই ভূতাত্ত্বিক ভাষায় বেসিন বলে। মূলত, হিমবাহ, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে ওই সব স্থান (বেসিন) মাটি, বালি ও বিভিন্ন খনিজ দিয়ে ভরাট হয়ে থাকে।

উল্লেখ্য, বিশুদ্ধ চুনাপাথরের রাসায়নিক নাম ক্যালসিয়াম কার্বনেট। প্রকৃতিতে বিশুদ্ধ চুনাপাথর খুব কম পাওয়া যায়। বালি, কাদা ইত্যাদির মিশ্রণ, লোহা, অ্যালুমিনিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সিলিকন, ফসফরাস এবং সালফার ইত্যাদি মৌলে চুনাপাথর অপদ্রব্য হিসেবে মিশ্রিত থাকে।

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/এম/অক্টোবর ১২, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর