thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ১৮ জমাদিউল আউয়াল 1446

খেটে খাওয়া মানুষের বিপক্ষে মানবাধিকার সংগঠন!

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ১৬ ০০:২২:৩৯

হিউম্যান রাইটস নামীয় যে কোনো সংগঠনের নাম সামনে এলে মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন সংগঠন বা মানুষের কথা সামনে এসে যায়। স্বাভাবিকভাবেই ধারণা জন্মে এই নামীয় সংগঠনগুলো সমাজের বঞ্চিত-নিপীড়িত মানুষের হয়ে কাজ করে। এক সময় রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর মানুষের যে আস্থার জায়গাটি ছিল সেটি ধীরে ধীরে দুর্বল হওয়ার কারণে মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে মানুষ খানিকটা আস্থায় নিতে শুরু করে।

বাংলাদেশ এমনই একটি দেশ যেখানে মানবাধিকার বিষয়টি খুবই নাজুক পর্যায়ে রয়েছে। এখানে মানুষের রাজনৈতিক বা মত প্রকাশের স্বাধীনতার চেয়ে তার জৈবিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংকটটি আরও মারাত্মক। এ ক্ষেত্রে সরকার বা বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কিছু দায়দায়িত্ব পালন করলেও স্থায়ী কোনো পরিকল্পনা দেখা যায় না। পুঁজিবাদের সাধারণ তত্ত্ব মোতাবেক ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কলকারখানা গড়ে উঠলেই মানুষের কাজের সুযোগ হবে এবং দারিদ্র্য বিমোচন হবে। আমাদের সরকার এই তত্ত্বের ওপর মানুষের ভাগ্য ছেড়ে দিয়েছে।

এ কারণে প্রান্তিক মানুষ দিন দিন ভূমিহীন অদক্ষ মজুরে পরিণত হচ্ছে। সেই প্রান্তিক ভূমিহীন মজুর শ্রেণীর মানুষই টিকে থাকার জন্য ভ্যান, রিকশা, ইজিবাইক, নসিমন, করিমন চালান। দেশের প্রচলিত আইনে এ ধরনের যানবাহন তৈরি ও চালানোর সুযোগ কখনও ছিল না। প্রযুক্তির সহজলভ্যতা ও মানুষের প্রয়োজনের তাগিদে আজ বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় ইঞ্জিনচালিত নসিমন, করিমন, আলমসাধু, ট্রলার (ইঞ্জিনের নৌকা) এক গুরুত্বপূর্ণ অপরিহার্য স্থান দখল করে নিয়েছে। কম মূল্যের ইঞ্জিন এবং সামান্য কিছু যন্ত্রাংশ কাজে লাগিয়ে সারা দেশে স্ব-উদ্যোগে বিশাল এক শিল্পজগৎ গড়ে উঠেছে। এই শিল্পের সাথে যেমন যুক্ত হয়েছে লক্ষ মানুষ তেমনই এখানে তৈরি যানবাহন চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন লাখ লাখ অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত প্রান্তিক মানুষ। পাশাপাশি জন এবং পণ্য পরিবহনে সাশ্রয়ী হওয়ায় গ্রামীণ কৃষি অর্থনীতিতে এক যুগান্তকারী অবদান রাখছে এ খাত। স্বাভাবিকভাবে এর ফলে বিদেশ থেকে আমদানি করা বহুজাতিক কোম্পানির নির্মিত যানবাহনগুলো ব্যবসায়িকভাবে মার খাচ্ছে। তাই এ শিল্প আজ মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশীয় বিত্তবান পরিবহন সেক্টরের যেমন, তেমনই বহুজাতিক গাড়ি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের।

এমতাবস্থায় দেশীয় কুটির শিল্প হিসেবে গড়ে ওঠা পরিবহন সেক্টরের ওপরে প্রচলিত আইন এবং প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান থেকে আঘাত আসবে সেটাই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু একটি মানবাধিকার সংগঠন আগবাড়িয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করে এই খাত বন্ধ করার উদ্যোগ নেবে এটা সাধারণভাবে কাঙ্ক্ষিত ছিল না। কিন্তু হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ নামে মানবাধিকার সংগঠনটি আমাদের ভুল ভাঙিয়ে দিয়েছে। লাখ লাখ প্রান্তিক মানুষের জীবিকার উৎস নসিমন, করিমন, আলমসাধু বন্ধ করার জন্য হাইকোর্টের নির্দেশ আদায় করে তারা জানিয়ে দিল প্রান্তিক খেটেখাওয়া বিত্তহীন মানুষের জন্য তাদের কোনো দায় নেই, দায় নেই দেশীয়ভাবে গড়ে ওঠা কোনো আত্মনির্ভরশীল শিল্প খাতের জন্য।

আমাদের বিবেচনায় হাইকোর্টের এই নির্দেশ বহাল থাকলে প্রান্তিক মানুষগুলো তাদের কর্ম হারাবেন, যে ক্ষু্দ্র উদ্যোক্তারা সামান্য পুঁজি নিয়ে এই কুটির শিল্প গড়ে তুলেছেন তারা নিঃস্ব হবেন আর ইতোমধ্যে এই কর্মতৎপরতার মাধ্যমে শিল্প বিকাশে যে উৎকর্ষতা অর্জন হচ্ছে তা থমকে যাবে।

পাঠকের মতামত:

SMS Alert