thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল 24, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ২০ শাওয়াল 1445

কোটি কোটি টাকা জরিমানায় বাহরাইনে কারাবন্দি ১৩ বাংলাদেশি

২০১৬ ডিসেম্বর ১২ ২৩:৩৬:০৬
কোটি কোটি টাকা জরিমানায় বাহরাইনে কারাবন্দি ১৩ বাংলাদেশি

দীর্ঘদিন ধরে বাহরাইনে অবৈধভাবে বসবাসের অভিযোগে ১৩ জন বাংলাদেশির প্রত্যেককে পৌনে দুই কোটি টাকা থেকে আড়াই কোটি টাকা পর্যন্ত আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে। আদালতে শাস্তি পাওয়ার পর সে দেশের আলবা ডিপোর্টেশন সেন্টারে বন্দি আছেন এসব বাংলাদেশি। জরিমানার এই বিপুল পরিমাণ টাকা পরিশোধ না করা পর্যন্ত দেশে ফিরতে পারছেন না তারা।

এসব তথ্য নিশ্চিত করে বাহরাইনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর (শ্রম) মো. মুহিদুল ইসলাম টেলিফোনে দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘আলবা ডিপোর্টেশন সেন্টারে বন্দি ১৩ বাংলাদেশির প্রত্যেকের ৮০ হাজার বাহরাইনি দিরহাম থেকে শুরু করে এক লাখ ২০ হাজার দিরহাম জরিমানা করা হয়েছে। ১২ ডিসেম্বর মূদ্রা বিনিময় হারের তথ্যানুযায়ী বাহরাইনি এক দিনার সমান বাংলাদেশি মূদ্রায় ২১১.৭৩ টাকা। সে হিসাবে ওই ১৩ বাংলাদেশির একজনের জরিমানা ন্যুনতম এক কোটি ৬৯ লাখ ৩৮ হাজার ৪৭৬ টাকা থেকে দুই কোটি ৫৪ লাখ ৭ হাজার ৩৯ টাকা পর্যন্ত।’

তিনি বলেন, ‘বড় ধরনের জরিমানা হওয়া এসব বাংলাদেশির জরিমানা মওকুফের জন্য আমরা বাহরাইনের ইন্টিরিওর মিনিস্ট্রির (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) দ্বারস্থ হচ্ছি। মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে বাহরাইনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আমার এ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে মিটিং রয়েছে। যাতে তারা এসব বাংলাদেশিকে (১৩ বাংলাদেশি) নাম মাত্র জরিমানা নিয়ে মাফ করে দেয় সে ব্যাপারে কথা বলবো। একই বিষয় নিয়ে পড়শুদিন (১৪ ডিসেম্বর) সকালে আমাদের মান্যবর রাষ্ট্রদূত সেদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে বৈঠক করবেন।’

শ্রম কাউন্সেলর আরও বলেন, ‘সে দেশের সরকারের সঙ্গে আমাদের এগুলো (যোগাযোগ) চলতে থাকে এবং মাঝে মধ্যেই মাফ পাওয়া যায়। মাফ পেলেই হয়তো এই ১৩ জনকে ডিপোর্টেশন সেন্টার থেকে বের করে দেওয়া যাবে। আবার হয়তো নতুন করে সমস্যা হবে, আবার মিটিং করতে হবে। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া।’

তবে বিপুল পরিমাণ জরিমানা হওয়া এ ১৩ জন বাংলাদেশির নাম তাৎক্ষনিক বলতে পারেননি শ্রম কাউন্সেলর। তিনি বলেন, ‘সে দেশের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ ওই ১৩ জনের শুধু সিরিয়াল নম্বর দিয়েছে। নাম ঠিকানা জানতে হলে ফরেন মিনিস্ট্রির মাধ্যমে অফিসিয়ালি চাইতে হবে। আমরা গেলে হয়তো দুই, চার, পাঁচ জনের সঙ্গে কথা হয় বা তাদের সম্পর্কে তথ্য পাই। আর ঠিক কত দিন ধরে তারা ডিপোর্টেশন সেন্টারে আছে তা-ও ঠিক এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।’

বাহরাইনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সাল থেকে প্রবাসী কর্মীদের ডাটা কম্পিউটারাইজড সিস্টেমে চলে যায়। আগে ম্যানুয়ালি সব তথ্য রাখতো তারা।

বাহরাইনের পাশেই সৌদি সীমান্ত। আগে রিয়াদের বিমানের টিকেট না কেটে ঢাকা থেকে বাহরাইনের টিকেট কেটে কর্মীদের বাহরাইন হয়ে সৌদি আরবে পাঠাতো একটি চক্র। এদের অনেকেই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে সৌদিতে না গিয়ে বাহরাইনেই থেকে যেত। এদের অনেকেই বাহরাইনে অবৈধভাবে বসবাস করছেন। যাদের কোনো ডকুমেন্টস নেই। আবার কোনোভাবে তাদের বাহরাইন কর্তৃপক্ষের কাছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেওয়া আছে। বাহরাইনের আইন অনুযায়ী যে যতদিন অবৈধভাবে বসবাস করবে তার জরিমানা ততই বাড়তে থাকবে। তাদের প্রতি মাসে মাসে একটা জরিমানা চলতে থাকে। পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর কে কতদিন ধরে অবৈধভাবে বসবাস করেছে, তার উপর ভিত্তি করে সেদেশের আদালত জরিমানা করে থাকে। পুলিশের কাছে ধরা পড়া ওই ১৩ বাংলাদেশিকে অবৈধভাবে দীর্ঘদিন বসবাস করার অভিযোগে বাহরাইনি আদালত বড় ধরনের জরিমানা করেছে। এই জরিমানার টাকা পরিশোধ না করা পর্যন্ত তারা বাহরাইনের আলবা ডিপোর্টেশন সেন্টার থেকে বের হতে পারবেন না।

শ্রম কাউন্সেলর মো. মুহিদুল ইসলাম দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমেক বলেন, ‘আদালত কর্তৃক জরিমানাপ্রাপ্ত হয়ে অনেক বাংলাদেশিকেই আলবা ডিপোর্টেশন সেন্টারে পাঠানো হয়। যাদের জরিমানার পরিমাণ কম, এই ধরেন ১০০-৩০০ দিনার। আমরা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড বা এদেশে (বাহরাইন) যেসব দানশীল ব্যক্তি বা দাতা সংস্থা আছে তাদের ফান্ডের মাধ্যমে এসব বাংলাদেশিকে মুক্ত করার চেষ্টা করি। কিন্তু, যাদের জরিমানা বেশি তাদের ক্ষেত্রে এটা করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। বিশেষ করে ওই ১৩ জনের জরিমানার পরিমাণ এতো বেশি যে যা তাদের (প্রবাসী) পক্ষেও যেমন সম্ভব নয়, আমাদের পক্ষেও নয়। আগে ছোট খাটো বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে বড় ধরনের জরিমানা হলে বাহরাইনের ইমিগ্রেশন অফিসার কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেই মাফ করিয়ে নিতাম আমরা। কিন্তু, একবার দুইবার এভাবে মাফ করার পরে ওদের অডিট আপত্তি ওঠে। কারণ এটা তো তাদের সরকারি আয়। উপরের অফিসাররা জুনিয়র অফিসারদের বলে দিয়েছে মাফ করলে মন্ত্রী পর্যায়ে গিয়ে মাফ করাতে হবে।’

এর আগেও আমাদের মান্যবর রাষ্ট্রদূত সেদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করে এসব বিষয়ে আলোচনা করেছেন। ফের মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা চলছে। আশা করছি তাদের জরিমানা মাফ করাতে পারব আমরা।

এদিকে গত ২০ নভেম্বর‘বাহরাইনের কারাগারে আটকে গেছে অর্ধশত বাংলাদেশির স্বপ্ন’’ শিরোনামে দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ সংবাদের বিষয়টি বাহরাইনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সেলরকে চিঠি দিয়ে অবহিত করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ সংস্থা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। গত ২৭ নভেম্বর ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের ওই চিঠির জবাব দেন বাহরাইন দূতাবাসের শ্রম কাউন্সেলর মো. মুহিদুল ইসলাম।

ওই চিঠিতে শ্রম কাউন্সেলর মুহিতুল ইসলাম প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে আরও জানান, আলবা ডিপোর্টেশন সেন্টারে ৪ জন বাংলাদেশি রয়েছেন, যাদের বিরুদ্ধে দেশ ত্যাগের বিষয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তারা কেউ কেউ আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণ করে ঋণ খেলাপী হয়েছেন অথবা কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে বাকী বা কিস্তিতে কোনো মূল্যবান সামগ্রী ক্রয় করে যথাসময়ে মূল্য পরিশোধ করেননি। ফলে পাওনাদার প্রতিষ্ঠানের মামলায় সেদেশের আদালত এরূপ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। এরা দেশ ত্যাগের চেষ্টাকালে কর্তৃপক্ষের কাছে ধরা পড়েন।

ভিজিট ও ট্রানজিট ভিসায় বাহরাইনে গিয়ে অবৈধভাবে বসবাসের অভিযোগে আদালত কর্তৃক বড় ধরনের আর্থিক জরিমানা হয়েছে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার গাদ্দেরগাঁও গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে আতিকুর রহমানের। প্রায় তিন বছর আগে সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ করে কোম্পানির কাজের কথা বলে স্থানীয় এক দালালের মাধ্যমে বাহরাইনে যান তিনি। বাহারাইনে পা রেখে তিনি জানতে পারেন তাকে কাজের ভিসায় নয়, ভিজিট ভিসায় পাঠানো হয়েছে। দীর্ঘদিন পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কোনো রকম বাহরাইনে কাজকর্ম করে আসলেও শেষ পর্যন্ত পুলিশের কাছে ধরা পড়ে দেশটির আলবা ডিপোর্টেশন সেন্টারে প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন তিনি। তার জরিমানার পরিমাণ ৮৯০ দিনার। যা বাংলাদেশি মূদ্রায় প্রায় ২ লাখ টাকা।

আতিকুর রহমান তার মতো আরও ১০ জন বাংলাদেশির নাম এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। যারা বিভিন্ন হারে জরিমানাপ্রাপ্ত হয়ে বন্দি আছেন। তবে তার টাকার পরিমাণ বলতে পারেননি তিনি। তারা হলেন- ভোলা জেলার বোরহানুদ্দিন উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের মৃত বশির মৃধার ছেলে মো. সেলিম, কুমিল্লার গৌরীপুর দরিয়াপাড়ার মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে মো. মামুন, চাঁদপুরের মতলবের মো. আরিফ হোসেন, একই জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার বশির উদ্দিনের ছেলে মো. ফয়সাল, মো. আনিস, ফেনীর দাগনভুইয়ার মো. তাজুল ইসলাম, গোলাপ মিয়া, মোহাম্মদ আলী, আব্দুর রহিম।

আতিকুর রহমান মুঠোফোনে দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টি ফোর ডটকমকে আরও জানান, এদের সবাই সাড়ে ৩ বছর থেকে ৫ বছর ধরে বাহরাইনে অবস্থান করছেন।

(দ্য রিপোর্ট/কেএ/এস/জেডটি/ডিসেম্বর ১২, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর