thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি 25, ২৪ মাঘ ১৪৩১,  ৭ শাবান 1446

বিচ্ছিন্ন ঘটনায় আহত ২০, পুলিশ কর্মকর্তা বরখাস্ত

ভোটগ্রহণ শেষ, চলছে গণনা

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯ ১৬:৩২:২৩
ভোটগ্রহণ শেষ, চলছে গণনা

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। বুধবার দেশের মোট ৪০টি জেলার ৯৭টি উপজেলায় সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিকেল ৪টায় শেষ হয়। এখন ভোট গণনা চলছে।

সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা নির্বাচনের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় সরকার নির্বাচন এটি। দেশের ইতিহাসে চতুর্থবারের মত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করার এক মাসের মাথায় অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের কারণে এবারের উপজেলা নির্বাচন অন্যান্য বারের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।

মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৬ হাজার ৯৯৫টি, ভোটকক্ষ ৪৩ হাজার ২৯০টি। প্রিসাইডিং অফিসার প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে একজন করে ৬ হাজার ৯৯৫ জন। সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার প্রতিটি ভোটকক্ষের জন্য একজন করে মোট ৪৩ হাজার ২৯০ জন এবং পোলিং অফিসারের সংখ্যা ৮৬ হাজার ৫৮০ জন।

তবে কিছু কেন্দ্রে জাল ভোট, ব্যালট বাক্স ও পেপার ছিনতাই, কেন্দ্র দখল, ভোটদানে বাধা, পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া, প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব এবং সংঘর্ষের অভিযোগে অনেক উপজেলায় নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি সমর্থিত ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। এ সব ঘটনায় সারাদেশে ২০ জন আহত এবং পুলিশ কর্মকর্তা বরখাস্ত হয়েছেন।

ভোটগ্রহণ বুধবার সকাল ৮টায় শুরু হলেও প্রথম দুই ঘণ্টায় ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার উপস্থিতি বাড়তে থাকে।

এদিকে দেশের বিভিন্ন উপজেলায় সরকার সমর্থিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নির্বাচন প্রভাবিত করার অভিযোগ ওঠেছে। বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ইতোমধ্যে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলার বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী রাকিবুল হাসান খান দিপু, পাবনার সুজানগর উপজেলার বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজারী জাকির হোসেন চুন্নু, বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল হোসেন মিয়া, বিদ্রোহী প্রার্থী লোকমান হোসেন খান, নুর আলম হাওলাদার, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মেহেদী হাসান শ্যামল খলিফা, শরীফ জহির সাজ্জাত হান্নান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী তাছলিমা বেগম, বাকেরগঞ্জের বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী খলিলুর রহমান ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী মশিউর রহমান নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। এ সব জেলায় সরকার সমর্থিত প্রার্থীদের দ্বারা ভোট কারচুপিসহ প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে বৃহস্পতিবার হরতাল ডেকেছে স্থানীয় বিএনপি।

ভোলা জেলার লালমোহন উপজেলায় বিএনপির বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী আকতারুজ্জামান টিটু নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দেন।

সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ ভোটকেন্দ্র দখল, পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া ও সরকার সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে নির্বাচন বয়কট করেন।

শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলায় ভোট কারচুপির অভিযোগে নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহেদ পারভেজ আব্বাস মোল্লা।

এদিকে দ্য রিপোর্টের জেলা প্রতিনিধিদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ঝিনাইদহ জেলার সদর উপজেলার গান্না ও বালিডাঙ্গা বাজারে ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ১৩ জন আহত হয়েছেন। কাঞ্চননগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটকেন্দ্রে সরকারদলীয় সমর্থকদের হামলায় ৩ জন আহত হয়েছেন। এ সময় মিলন নামে বিএনপি সমর্থক প্রার্থী আব্দুল আলিমের এজেন্টকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়।

শৈলকূপা উপজেলার মথুরাপুর ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের অভিযোগে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।

ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধা দেওয়ায় দোগাছি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফয়জুর রহমানকে আটক করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

নরসিংদীর পলাশে ভোটকেন্দ্র থেকে অস্ত্রসহ দুজনকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

মেহেরপুর সদর উপজেলার সোনাপুর গ্রামে ভোটকেন্দ্রে ভোটদানে বাধা সৃষ্টি করার অভিযোগে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট আজাহার মণ্ডলকে ১০ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার দুর্গম চরে একটি ভোটকেন্দ্রে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মাসুদার রহমান হিরু মণ্ডলের পোলিং এজেন্টদের মারপিট করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আলমগীর শাহী সুমনের কর্মীরা বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং ভোটাররা আতঙ্কে রয়েছেন।

সোনাতলা উপজেলার সৈয়দ আহম্মেদ কলেজ ভোটকেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কর্মীদের সংঘর্ষে ৩ জন আহত হয়েছেন। কর্পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে ২টি ব্যালট বাক্স ছিনতাই করেছে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা। এ ঘটনার কারণে এ সব কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত রয়েছে। এ উপজেলায় সন্ত্রাসী হামলা ও ভোট কারচুপির অভিযোগে আরও চারটি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।

গাজীপুর জেলার কাপাসিয়ার রামপুর, কুড়িহাতা ও ইকোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র দখল এবং খুদাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জোর করে ব্যালট পেপার ছিনতাই করে নেয় ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকরা। এ সব কেন্দ্রে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের মেরে বের করে দেয় তারা।

সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দুই দল সমর্থকদের মধ্যে কথা কাটাকাটির জের ধরে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়।

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় পুলিশ-শিবিরের সংঘর্ষে একজন আহত হয়েছেন।

চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই উপজেলার বামন সুন্দর ফকির আহমদ উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ব্যালট বই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের পোলিং এজেন্টদের বের করে দিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আতাউর রহমানের সমর্থকরা জাল ভোট দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার সিংহাটি মদিনাপুর উলুম কওমি মাদ্রাসা কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী খান নজরুল ইসলাম ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এম সাইফুর রহমান মিন্টুর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার শরিকল মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়ার সময় বাধা না দেওয়ায় শরিকল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এএসআই নাসির উদ্দিন এবং কনস্টেবল শহিদুল ইসলাম ও মুহাম্মদ নুরুকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বরিশালের পুলিশ সুপার এ কে এহসান উল্লাহ অভিযুক্ত এএসআই নাসির উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত এবং কনস্টেবল শহিদুল ইসলাম ও মুহাম্মদ নুরুকে ক্লোজ করে পুলিশ লাইনে পাঠিয়ে দেন। বাকেরগঞ্জ উপজেলায় এ এস এম আতিকুর রহমান নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। একই উপজেলায় ভোট কারচুপির জন্য বাংলাদেশ ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মোজাম্মেল হক আকন ভোটগ্রহণ শেষের আগ মুহূর্তে চরামদ্দি বাদলপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র থেকে ৪০টি ব্যালট পেপার ছিনিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। এ ঘটনায় এএসআই দুলাল ও কনস্টেবল মুহাম্মদ সেলিমকে দায়িত্ব থেকে ক্লোজ করা হয়। পুলিশ সুপার এ কে এহসান উল্লাহ দ্য রিপোর্টের প্রতিবেদককে বলেন, অভিযুক্তদের দায়িত্ব থেকে ক্লোজ করা হয়েছে। অভিযুক্ত প্রার্থী ও পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে যাতে সামনের উপজেলা নির্বাচনগুলোতে এমন ঘটনা আর না ঘটে।

(দ্য রিপোর্ট/আরএইচ-এসআর/জেএম/সা/ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর

জেলার খবর - এর সব খবর