thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১,  ২২ জমাদিউস সানি 1446

হেরেও জয়ী বাংলাদেশ

২০১৩ নভেম্বর ০৬ ১৮:৫৯:০০
হেরেও জয়ী বাংলাদেশ

নিউজিল্যান্ড : ২০৪/৫

বাংলাদেশ : ১৮৯/৯

ফল : নিউজিল্যান্ড ১৫ রানে জয়ী

আরিফ সোহেল : বাংলাদেশ টেস্ট সিরিজে মর্যাদার ড্র করার পরও ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে নতুন আলোর বাতিঘরের সন্ধান দেয়। সেই আলোকযাত্রায় ঘোর অন্ধকারের অমানিশা দেখতে হয়নি। লড়তে লড়তেই হেরেছে। হেরেছে বীরের বেশেই। ২০৪ রানের জবাবে ১৮৯ রান কম কিসের! হেরেও বিজয়ী বাংলাদেশ। কারণ ম্যাচ শেষে বিজয়ের ট্রফি নিয়েই বাংলাদেশ উল্লাস করেছে! শেষ ওভারে ২২ রান; এই যখন সমীকরণ, তখন মাশরাফি আর সোহাগ কতদূরই পাড়ি দেবেন। পারেননি; উল্টো প্রথম বলেই মাশরাফির স্ট্যাম্প উপড়ে গেল। পরের বল ডট। উইকেটে আল-আমিন। এবার তার ব্যাটেই ৪। ফের ডট। লেগবাই বরাতে এক। আবার ডট। শেষ বলেও এক রান। হিসেব-নিকেশ ১৫ রানের হার। এমন হারের পরও বাংলাদেশ শিবিরে মুখ কালাকালি নেই। অনেকটা ‘এমন হারে কষ্ট নেই।’ কারণ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আগের রেকর্ড ছিল ভয়াবহ; ০-২। টোয়েন্টি২০ ফরম্যাটে শতভাগ পিছিয়েই ছিল।

২০১২ সালে বাংলাদেশ হেরেছিল ৫৯ রানে। শ্রীলঙ্কায় নিউজিল্যান্ডের ১৯১ রানের জবাবে; বাংলাদেশ অলআউট হয়েছে ১৩২ রানে। ২০১০ নিউজিল্যান্ডে আরো বাজে হারের পাশে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডে মাত্র ৭৮ রানের জবাবে উইকেট না খুইয়েই জয় তুলে নেয়। শেষ কথা হতে পারে; হারের দুষ্টচক্রেই টোয়েন্টি২০ ক্রিকেটের রেকর্ডের আরেকটি পাতা পূরণ করেছে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ড মঙ্গলবার অনুশীলন মান বাঁচানোর সঙ্গে প্রেরণা খোঁজার যে অভিযাত্রার কথা বলেছিল; হয়েছে তাই। বাংলাদেশ নির্ভেজালভাবে অবগাহন করেছে দারুণ একটি সিরিজ। জয়-পরাজয়ের যোগফলের খেরোখাতায় নিউজিল্যান্ড এক স্বান্ত্বনার জয় ছাড়া কিইবা পেয়েছে!

বাংলাদেশ শুরু করেছিল ওভার প্রতি রানের গতি নামতা পড়তে পড়তে; ১০.০৪। অভিষিক্ত সৌম্য সরকার পারেননি অধিনায়ক মুশফিকের প্রত্যাশা পূরণ করতে। পারেননি জিয়া-মুমিনুলরা। শামসুর রহমানও যেন খেই হারিয়ে ফেলেছেন। ২০৫ রানের দীর্ঘায়িত অভিযাত্রায় ১৯ রানে ৩ উইকেট পড়ে চাপ সামলে ওঠে দারুণ ছুটছিলেন মুশফিক।

শুরুর ব্যাটিং টানাপোড়েন সরিয়ে নাঈম (১৮)-নাসিরে (৩৪) এক পর্যায়ে ম্যাচটি জমেও ওঠেছিল। মুশফিক হাফসেঞ্চুরি উদযাপনের পরের বলেই ফিরে গেলেও আশা আরো কিছুক্ষণ বেঁচেছিল মাহমুদউল্লাহ (৩৪) ও সোহাগ গাজীর (২৪) ব্যাটে।

এর আগে নিউজিল্যান্ড ৭৩ রানের দুর্দান্ত যাত্রারাম্ভের ইনিংস পেয়ে নির্ধারিত ওভারে তুলে নিয়েছে ২০৪ রান। হাফ সেঞ্চুরির পাশে নাম লিখিয়েছেন দুই কিউই। ক্যারিয়ারের অভিষেক ম্যাচে পেসার আল-আমিনের ২ উইকেটের পাশে সোহাগ গাজী, আবদুর রাজ্জাক ও জিয়াউরের একটি করে।

শুধু স্টেডিয়ামেই নয়। স্টেডিয়াম আঙিনায় স্বপ্নভারাতুর বাঙালিরা উৎসব আবেগ প্লাবনে ভাসতে ভাসতেই এসছিলেন। কিন্তু ব্যাটিংস্বর্গ উইকেটে ৪-৬-এর তাণ্ডবের যে পসরা সাজিয়েছিল নিউজিল্যান্ড; তা এই ম্যাচে টপকে যেতে পারেননি মুশফিকরা। এখানে আবার প্রমাণিত ক্রিকেট মানেই উত্থান-পতনের মেলবন্ধন। কখনো আশা; কখনো হতাশার দোলাচাল। বুধবার ক্রিকেটান্দনের জোয়ারে ঢেউ লাগেনি। ফলে ওয়ানডে সিরিজে উড়িয়ে দিয়ে যে স্বপ্ন-সাধনার ক্রিকেটীয় বিজয়ের অভিযাত্রা সৃষ্টি হয়েছিল তা একটু হলেও থমকে গেছে। সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে জয়ের আশা জাগানিয়া কথাপোকথন কিছুটা ম্লান হয়ে গেছে।

সিরিজ জয়ের স্লোগানমুখর পরিবেশে এই ম্যাচে হেরেও নতিস্বীকারের হতাশাব্যঞ্জক চিত্র ছিল না। কারণ সিরিজে এগিয়ে বাংলাদেশই। নিসন্দেহে বলা এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটে জয়-বিজয়ের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। ক্রিকেটারদের জয়ের অন্তর্নিহীত স্পৃহায় পেশাদারিত্বেও ছোঁয়া এখন প্রায় সব ম্যাচেই প্রতিভাত হচ্ছে। হারলেও একটি রেকর্ড হয়েছে এই ম্যাচে। ২০ ওভারের ম্যাচে বাংলাদেশের এটা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান। এর আগে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯০ তুলেছিল।

ক্রীড়াবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ম্যাচ উপভোগই শুধু করেননি; সঙ্গে ম্যাচ শেষে এই সিরিজের শিরোপা তুলে দিয়েছেন সেরাদের হাতে। ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশের ট্রফি তুলে দিয়েছেন মুশফিকবাহিনীর হাতে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়ী বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা যখন ‘উইনিং বোর্ড’ আর ট্রফিহাতে উচ্ছ্বাস করছিলেন; তখন রাদারফোর্ড- টেইলরা মলিনমুখে কষ্টের সমুদ্দর পাড়ি দিচ্ছিলেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

নিউজিল্যান্ড: ২০৪/৫ (মুনরো ৭৩*, ডেভসিচ ৫৯, টেলর ২৮, অ্যান্ডারসন ১৮; আল-আমিন ২/৩১)

বাংলাদেশ: ১৮৯/৯ (মুশফিক ৫০, মাহমুদউল্লাহ ৩৪, নাসির ২৮, সোহাগ ২৪; সাউদি ৩/৩৮)

(দিরিপোর্ট৪/এএস/সিজি/এমডি/নভেম্বর ০৬, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

খেলা এর সর্বশেষ খবর

খেলা - এর সব খবর