thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১,  ১৯ জমাদিউস সানি 1446

মোহাম্মদ আসাদ

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ২৩ ০০:৩০:২৫
মোহাম্মদ আসাদ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : বিখ্যাত সাংবাদিক, ভ্রমণকারী, লেখক, ভাষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতি তাত্ত্বিক, কূটনীতিক ও ইসলামী পণ্ডিত মোহাম্মদ আসাদ ১৯৯২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বিংশ শতাব্দীর প্রভাবশালী ইউরোপীয় মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ব্যক্তি।

মোহাম্মদ আসাদ ১৯০০ সালের ২ জুলাই অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্যের লিমবুর্গের এক ইহুদী রাব্বী পরিবারে জম্মগ্রহণ করেন। তার পূর্ব নাম লিওপোল্ড ওয়েইস। বাবার ইচ্ছা ছিল ছেলে বড় হয়ে পুরোহিত হবে। সে মোতাবেক তার মাতৃভাষা জার্মান হলেও ১৩ বছর বয়সেই হিব্রু ও আরামিক ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন। মধ্য বিশে এসে তিনি ইংরেজি, ফরাসি ও আরবিতে দক্ষ হয়ে ওঠেন। ধর্মীয় পড়াশোনার মাঝেই তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। কিছুদিন ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। ওই সময় বিখ্যাত ইহুদী নেতাদের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হন। ইহুদীবাদের কড়া সমালোচনা করেন তিনি।

১৯২২ থেকে ১৯২৬ সাল পর্যন্ত বিখ্যাত জার্মান পত্রিকা ফ্রাঙ্কফুর্টার জেইটাঙের বৈদেশিক প্রতিনিধি হয়ে মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করেন। রিপোর্টার হওয়ার সুবাদে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক অঞ্চল সফর করেন এবং ইসলাম সম্পর্কে ব্যাপকভাবে জানতে পারেন। ব্যাপক চিন্তা ও গবেষণার পর ১৯২৬ সালে ইসলাম গ্রহণ করেন। এ সময় পুরো মধ্যপ্রাচ্যসহ আফ্রিকা মহাদেশের অনেক দেশে তিনি যাযাবর জীবনযাপন করেন।

দীর্ঘ যাযাবর জীবনে ইতিহাস সৃষ্টিকারী বহু ঘটনা ও ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্য পান। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- সৌদির বাদশাহ ইবনে সাউদ, মরভূমির সিংহখ্যাত লিবিয়ার বিপ্লবী ওমর আল মুখতার, মক্কার বিশিষ্ট ধর্মবেত্তা ইবনে বুলাইহিদ নযদি, ইরানের প্রধানমন্ত্রী রেজা খান, বাদশাহ আমানুল্লাহ খান ও মরুচারী সাধারণ আরব বেদুইন। সৌদি আরবে অবস্থান করেন ১৯২৭ থেকে ১৯৩১ সাল পর্যন্ত। ইবনে সাউদের হয়ে তিনি ইখওয়ান বিদ্রোহ নিয়ে কাজ করেন। ইতালি দ্বারা আক্রান্ত লেবাননের সেনুসি গোত্রের সাহায্যার্থে এক গোপন মিশনেও অংশগ্রহণ করেন।

১৯৩২ সালে ভারত ভ্রমণকালে তার সঙ্গে কবি ও দার্শনিক মোহাম্মদ ইকবালের বন্ধুত্ব হয়। এখানে তিনি ইসলামী রাষ্ট্র সম্পর্কিত তত্ত্ব নিয়ে কাজ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে তিনি ব্রিটিশ সরকারের হাতে গ্রেফতার হন। ১৯৪৭ সালে তিনি পাকিস্তানের নাগরিকত্ব পান। তিনি পাকিস্তানের হয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আমলাতান্ত্রিক ও কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে রয়েছে ডিপার্টমেন্ট অব ইসলামিক রিকন্সট্রাকশন, মধ্যপ্রাচ্যে ফরেন মিনিস্ট্রি অব পাকিস্তানের ডেপুটি সেক্রেটারি এবং জাতিসংঘে পাকিস্তানের দূত। ষাটের দশকে তিনি পাকিস্তান ত্যাগ করেন।

তার আত্মজীবনীমূলক বই ‘দ্য রোড টু মক্কা’ (১৯৫৪)-তে পাওয়া যাবে তার জীবনের ঘটনাপঞ্জিসমূহ। পশ্চিমা বিশ্বে বইটি বেশি পরিচিত। বইটির বাংলা অনুবাদ করেছেন গল্পকার শাহেদ আলী। শাহেদ আলীর সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল। প্রায় ১৭ বছর গবেষণার পর শেষ করেন কুরআনের ইংরেজি অনুবাদ ও তাফসির ‘দ্য মেসেজ অব দ্য কুরআন’। এখানে কুরআন ব্যাখ্যায় ইজতেহাদ ও বুদ্ধিবৃত্তি ব্যবহারে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ মেলে।

তার অন্যান্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে- দ্য আনরোমান্টিক অরিয়েন্ট (১৯২৪), ইসলাম অ্যাট দ্য ক্রসরোডস (১৯৩৪), দ্য প্রিন্সিপালস অব স্টেট অ্যান্ড গভর্নমেন্ট ইন ইসলাম (১৯৬১), সহীহ আল-বুখারি : দ্য আর্লি ইয়ার্স অব ইসলাম (১৯৮১), দ্য ল অব আওয়ার্স অ্যান্ড আদার্স এসেস (১৯৮৭) এবং হোম কামিং অব দ্য হার্ট।

তার সন্তানদের মধ্যে রয়েছেন বিখ্যাত নৃতাত্ত্বিক তালাল আসাদ।

(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/এমএআর/এজেড/ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

এই দিনে এর সর্বশেষ খবর

এই দিনে - এর সব খবর