thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ১২ মে 24, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১,  ৪ জিলকদ  1445

২৫ মার্চের স্বীকৃতি আদায়

গণহত্যার ভিডিও-দলিলপত্র যাবে কূটনীতিকদের কাছে

২০১৭ মার্চ ২৫ ১৪:৫৫:৪৯ ২০১৭ মার্চ ২৫ ১৬:১৫:০০
গণহত্যার ভিডিও-দলিলপত্র যাবে কূটনীতিকদের কাছে

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : পঁচিশে মার্চ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে গণহত্যার ভিডিও ফুটেজ ও দলিলপত্র বিদেশি কূটনীতিকদের দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

প্রথমবার জাতীয় গণহত্যা দিবসে শনিবার (২৫ মার্চ) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘রক্তাক্ত ২৫ মার্চ : গণহত্যার ইতিবৃত্ত’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এ কথা জানান। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ আয়োজন করেছে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতির জন্য ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জাতিসংঘে দূত পাঠিয়েছে। অন্যান্য স্থানেও দূত পাঠাবে। গণহত্যার যত ভিডিও ফুটেজ ও দালিলিক প্রমাণ আছে সবকিছু বৈদেশিক কূটনীতিকদের কাছে আমরা দেব, বিশেষ করে জাতিসংঘে যারা প্রতিনিধিত্ব করেন। একই সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমাদের যেসব বন্ধু রাষ্ট্র আছে তাদের সাথেও কূটনৈতিকভাবে যোগাযোগ করা হবে।’

গত ১১ মার্চ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের প্রস্তাব সংসদে সর্বসম্মতভাবে পাস হয়। গুরুত্বপূর্ণ দিবস হিসেবে (ক-ক্রমিকে অন্তর্ভুক্ত) গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাব ২০ মার্চ অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। তবে এখনও ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস পালনের স্বীকৃতি মেলেনি।

কয়েক বছর ধরে ৯ ডিসেম্বর বিশ্বে গণহত্যা দিবস পালিত হয়ে আসছে জানিয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘কিন্তু ৯ ডিসেম্বরের পেছনে ঐতিহাসিক কোন কারণ নেই। শুধু ৯ ডিসেম্বর এই রেজুলেশনটা নেওয়া হয়েছিল।’

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী বলেন, ‘গণহত্যা বিভিন্ন দেশে হয়েছে। আমাদের এই দেশের প্রেক্ষাপটটা আলাদা। ২৫ মার্চ আমরা পাকিস্তানের অংশ ছিলাম। ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। পাকিস্তান ২৫ মার্চ তারই দেশের নিরস্ত্র-ঘুমন্ত নাগরিকদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। অন্য কোন দেশে এ ধরনের ঘটনা নেই। আমরা বিশ্বাস করি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আমরা লাভ করব।’

গণহত্যার বিষয়ে জানাতে শিক্ষার্থীদের জন্য বক্তব্য

গণহত্যা দিবসে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ আগামী বছর থেকে প্রতিটি ক্লাসে আমাদের দেওয়া একটি বক্তব্য শিক্ষকরা বোর্ডে লিখবেন।’

‘যেমন ক্লাস ওয়ানে লিখবেন- ১৯৭১ সালে পাকিস্তান বাহিনী ৩০ লাখ নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করেছে। দ্বিতীয় শেণিতে-১৯৭০ সালে বাংলার মানুষ বঙ্গবন্ধুকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন। পাকিস্তানিরা ক্ষমতা দেয়নি, উপরন্তু ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে। তৃতীয় শ্রেণিতে হয়তো থাকবে-১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানিরা যেভাবে শোষণ করেছে, সেই অত্যাচারের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু ৬ দফা দেন বাঁচার দাবি হিসেবে। নির্বাচনে জয় লাখ করলেও বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। পাকিস্তানিরা ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘পঞ্চম শ্রেণিতে আরেকটু বেশি থাকবে, ইতিহাসের আরও কিছু অংশ থাকবে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে আরও বেশি থাকবে। আমরা এখান (মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়) থেকে লিখে দেব। সপ্তম শ্রেণিতে আরেকটু বেশি, অষ্টম শ্রেণিতে আরেকটু বেশি, নবম ও দশম শ্রেণিতে আরও বেশি থাকবে।’

‘শিক্ষকরা ক্লাসের বোর্ডে এটা লিখবেন বা শিক্ষক ডিকটেশন (বলবেন) দেবেন, ছেলেমেয়েরা এটা লিখবে। সেটা মাদ্রাসায় হোক, কেজি স্কুল হোক, প্রাইমারি স্কুল হোক বা হাইস্কুল হোক। যাতে প্রত্যেকটি সন্তান জানতে পারে ২৫ মার্চ কি? এছাড়া জাতীয়ভাবে তো আমরা প্রতিযোগিতা রাখবই’ বলেন মোজাম্মেল হক।

এক মিনিটের স্তব্ধতা, বাজবে বিউগল

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ভাবছি আগামীবছর থেকে দিনে ৪টা ৩০ মিনিট থেকে ৪টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত সারাদেশে একসঙ্গে এক মিনিট বিউগল বাজবে এবং সবকিছু স্তব্ধ থাকবে। কোন গাড়ি-ঘোড়া চলবে না, কোন মানুষ হাঁটবে না। তখন অনেকের মধ্যে প্রশ্ন জাগবে কেন এমন হচ্ছে? তার জবাব সাথে সাথে পেয়ে যাবে যে পাকিস্তানিরা ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে।’

তিনি বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ যেখানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় ২৫ মার্চ যেখানে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর এক মিনিট নিরবতা পালন করা হবে।’

ছুটি থাকবে না, গণহত্যার উপর ১ ঘণ্টার আলোচনা

মোজাম্মেল হক বলেন, ‘অন্যান্য দিবসে ছুটি থাকে। ২৫ মার্চকে ছুটির দিন ঘোষণা না করে সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্বশাসিতসহ সব সংস্থায় একটি নির্ধারিত সময়ে যেমন ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত কর্মবিরতি দিয়ে ২৫ মার্চ গণহত্যার উপর আলোচনা হবে।’

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা চত্বরে ২৫ মার্চ গণহত্যার উপর আলোকচিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন মন্ত্রী। ২৬ মার্চ শেষ হবে এ প্রদর্শনী।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সচিব মো. মাহমুদ রেজা খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া, বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি) এর অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আনিসুর রহমান, জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে আব্দুল মোমেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

(দ্য রিপোর্ট/আরএমএম/এপি/মার্চ ২৫, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর