thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৮ জমাদিউল আউয়াল 1446

মাঠে নামছেন খালেদা জিয়া

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ২৩ ২২:১৬:৫০
মাঠে নামছেন খালেদা জিয়া

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : নেতাকর্মীদের ভাঙ্গা মনোবল চাঙ্গা করতে ও সরকারবিরোধী ‘ছেদ পড়া’ আন্দোলনে নতুন করে জোয়ার আনতে এবার নিজেই মাঠে নামবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে এবং তাদের সমস্যা জানতে সামনের মার্চ থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন পর্যায়ক্রমে প্রায় ৩৩টি জেলা সফর শুরু করবেন। আগামী ১ মার্চ তিনি রাজবাড়ী জেলায় সাংগঠনিক সফর করবেন। দলের নেতাদের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, কয়েক ধাপে প্রতি জেলায় সাংগঠনিক সফর করবেন খালেদা জিয়া। প্রথম ধাপে তিনি দেশের প্রায় ৩৩টি জেলা সফর করবেন। অন্য জেলাগুলোতে পর্যায়ক্রমে তিনি সফর করবেন। এসব সফরে তিনি বিএনপি ও ১৯ দলীয় জোট আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য রাখবেন এবং সংশ্লিষ্ট জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে সাংগঠনিক দুর্বলতা চিহ্নিত করে তা সমাধান করবেন। তার এ সাংগঠনিক কর্মসূচি চলবে প্রায় বছর ব্যাপী।

বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রতি জেলায় সাংগঠনিক সফরকে আন্দোলনেরই অংশ হিসেবে মন্তব্য করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান।

জনাব রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, জেলা সফর অবশ্যই আন্দোলনের অংশ। এসব সফরের মাধ্যমে আন্দোলনে জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়বে।

স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার নেই। ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে তারা ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করছে। জনগণ এ সরকারকে ভোট দেয়নি। বিএনপি চেয়ারপারসন জেলা সফরের মাধ্যমে এসব বিষয়েই কথা বলবেন। একই সঙ্গে তিনি আন্দোলনে জনগণকে শামিল হতে তাদের প্রতি আহ্বান জানাবেন।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা আরও বলেন, এসব সফরের মাধ্যমে আন্দোলনের পাশাপাশি দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা বের হয়ে আসবে। সেই আলোকে দল কার্যকর পদক্ষেপও নিতে পারবে।

জানা যায়, সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে আন্দোলন শুরু করবে বিএনপি। এর আগে তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতেই জেলা সফর করবেন খালেদা জিয়া। আগামী ১ মার্চ রাজবাড়ীতে জনসভার মাধ্যমে শুরু হবে তার এই কর্মসূচি। সংগঠন গোছানো ও নেতাকর্মীদের নতুন করে আন্দোলনমুখী করতে এই সফর মার্চ মাসে শুরু হয়ে তা শেষ হবে আগামী বছরের মে মাস নাগাদ। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই দলীয় প্রধানের পূর্ণাঙ্গ জেলা সফরসূচি চূড়ান্ত হবে।

বিএনপি সূত্র জানায়, যেসব জেলায় ৫ জানুয়ারির নির্বাচনপূর্ব ও নির্বাচনোত্তর সময়ে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের নেতাকর্মীরা হামলা, মামলা, নির্যাতন, গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তুলনামূলক বেশি শিকার হয়েছেন সে সব জেলায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দলপ্রধান খালেদা জিয়া সফর করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। সংশ্লিষ্ট জেলায় জনসভায় সেই জেলার নেতাকর্মীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন তাদের নাম প্রকাশ করবেন। একই সঙ্গে হত্যার শিকার হতভাগ্যদের স্বজনদের সান্ত্বনা ও দলের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করবেন।

সূত্র আরও জানায়, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার উপজেলা নির্বাচন শেষে বিএনপি ধীরে ধীরে সরকারবিরোধী আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে। সেই আন্দোলনে নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনে সাড়া ও যোগ দিতেও ১৯ দলীয় জোট নেত্রী খালেদা জিয়া দেশের সাধারণ জনগণকে আহ্বান জানাবেন।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়া রাজবাড়ী, লক্ষ্মীপুর, সাতক্ষীরা, সিলেট, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নওগাঁ, রাজশাহী, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর, মাগুরা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, কিশোরগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, বাগেরহাট, খুলনা, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার সফর করবেন। এ সব জেলা ছাড়াও আরও কয়েকটি জেলায় তিনি সফর কর্মসূচি সাজাচ্ছেন।

সূত্র জানায়, জেলা সফর শুরুর আগেই বিভিন্ন জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত বিএনপি নেতাকর্মী ও তাদের পরিবারকে আইনি সহায়তা দিতে দলীয়ভাবে গঠিত জেলাভিত্তিক লিগ্যাল এইড কমিটিকে আরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন খালেদা জিয়া। পাশাপাশি গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তালিকা চূড়ান্ত করে তা বিদেশি ফোরাম, মানবাধিকার সংস্থা ও কূটনীতিকদের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্যও সংশ্লিষ্ট নেতাদের দায়িত্ব দিয়েছেন। তার নির্দেশে সংশ্লিষ্টরা গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রাথমিক তালিকা তৈরির কাজ প্রায় সম্পন্ন করেছেন। তালিকায় ২৬১ জন নেতাকর্মী নিহত এবং ৬০ জন গুম হওয়ার তথ্য স্থান পেয়েছে।

তালিকা প্রস্তুতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিএনপির এক নেতা জানান, গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের নতুন তালিকাটি নির্ভুলভাবে তৈরি করা হচ্ছে। তালিকায় গুম ও খুন হওয়া নেতাদের নাম, পরিচয়, ঠিকানা উল্লেখ থাকছে। কোথায়-কীভাবে ঘটনার শিকার হয়েছেন তারা, তারও বিবরণী থাকবে তালিকায়। তিনি আরও জানান, তালিকা চূড়ান্ত হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। চূড়ান্ত তালিকায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

উল্লেখ্য, গত ৪ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে-পরে ঘটনায় ২৪২ জনকে হত্যা এবং ৬০ জনকে গুম করা হয়েছে। গুম-খুনের এই পরিসংখ্যান নিয়ে পরবর্তীতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ আনে সরকারী দলের প্রভাবশালী নেতারা।

এদিকে, জেলা সফরে যাওয়ার আগে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আবারও গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের একটি ‘নির্ভুল’ তালিকা উপস্থাপন করবেন খালেদা জিয়া। দলের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

(দ্য রিপোর্ট/টিএস/এনআই/ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর

রাজনীতি - এর সব খবর