thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১,  ২০ জমাদিউস সানি 1446

দার্শনিক ইবনে হাজম

২০১৩ নভেম্বর ০৭ ১৩:০২:৫৪
দার্শনিক ইবনে হাজম

দিরিপোর্ট২৪ ডেস্ক : মুসলিম দার্শনিক ও কবি ইবনে হাজম ৯৯৪ সালের ৭ নভেম্বর (৩৮৪ হিজরি) বর্তমান স্পেনের কর্ডোভায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মুসলিম দার্শনিকদের মধ্যে অন্যতম। ইসলামের জাহিরি ধারার প্রবক্তা ও সংকলক তিনি। ইসলামী আইন ব্যবস্থা, ইতিহাস, সংগীত, নীতিশাস্ত্র আর তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব ছিল তার রচনার বিষয়বস্তু। তাকে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের জনক বলা হয়।

তার পুরো নাম আবু মুহাম্মদ আলী ইবনে আহমদ ইবনে সাইদ ইবনে হাজম। বাবার নাম আহম্মদ। হাজমের দাদা এবং বাবা উভয়ই উমাইয়া খলিফার দরবারে উপদেষ্টার পদে নিয়োজিত ছিলেন। হাজমের পূর্বপুরুষরা ছিলেন খ্রিস্টান। তার প্রপিতামহ ইসলামে দীক্ষিত হয়েছিলেন।

উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত কর্মচারীর পুত্র হিসেবে ইবনে হাজম বহুমুখী শিক্ষার সুযোগ পান। আরবি ভাষা, দর্শন, যুক্তিবিদ্যা, ইতিহাস, বিজ্ঞান ও রাজনীতিতে তিনি পারদর্শিতা লাভ করেন। তার ওস্তাদদের অন্যতম ছিলেন তখনকার পণ্ডিত আবদ আল রহমান ইবনে আবী ইয়াযিদ আল আয়দী।

হাজম সারা জীবনব্যাপী রাজনৈতিক নিপীড়নের স্বীকার হন। রাষ্ট্র বিপ্লবের মাধ্যম দ্বিতীয় হিশাম ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে ইবনে হাজম ও তার বাবা জুলুমের শিকার হন। ৪০২ হিজরিতে বাবার মৃত্যুর পর তার উপর নির্যাতন বৃদ্ধি পেতে থাকে। ৪০৪ হিজরির মুহায়রম মাসে তিনি প্রাসাদ ত্যাগ করে আল মেরিয়ায় চলে যান। সেখানে উমাইয়াদের পক্ষে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বন্ধু মুহাম্মদ ইবনে ইসহাকসহ তাকে কয়েক মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। পরে নির্বাসন দণ্ড পেয়ে তারা হিসন আল কাসর উপস্থিত হন।

এর কিছু সময় পরে তিনি ভ্যালেনসিয়ার শাসনকর্তা আল-মুরতাদার উযীরের পদ লাভ করেন। এরপর গ্রানাডায় যুদ্ধ করতে গিয়ে বন্দী হন। ৪১৪ হিজরিতে খলিফা আল-মুসতাজহীরের উযির পদে নিযুক্ত হন। কিন্তু কয়েকমাস পরে কারারুদ্ধ হন। মুক্তির পর জটিবায় স্থিতু হন।

সরকার এবং রাজনীতিকদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা তার মধ্যে মানব প্রকৃতি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার জন্ম দেয় এবং এক পর্যায়ে এসব বিষয়ে তিনি নিরুৎসাহিত বোধ করতেন। তিনি বুঝতে পারেন একমাত্র আল্লাহর আশ্রয়ই সত্য ও অভ্রান্ত।

তিনি চারটি সুন্নত জামাত ত্যাগ করেন এবং দাউদ আল যাহেরী প্রতিষ্ঠিত সম্প্রদায়ের অনুকরণ করেন। এই সম্প্রদায়ের মতানুসারে শাব্দিক অর্থের প্রেক্ষিতে কোরআনের ব্যাখ্যা করা উচিত। ইবনে হাজমের মতে অন্যের ব্যাখ্যা অনুসরণ না করে প্রত্যেক মানুষের উচিত নিজের সাধ্যানুসারে কোরানের মর্মার্থ বাহির করা।তিনি আশারিয়াদের মুখালাফা মতবাদ গ্রহণ করেন। যেখানে বলা হয় মানবীয় গুণাবলী খোদার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। খোদার গুণাবলী মানবীয় গুণ হতে সম্পূর্ণ পৃথকভাবে গ্রহণ করতে হবে। নীতিবোধের ক্ষেত্রে ইবনে হাজম মনে করেন সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়ের বিচারের জন্য কোন বস্তুনিষ্ট আদর্শ নেই। এটি আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। এর একমাত্র মানদণ্ড হলো ওহি।

তার রচিত বইয়ের সংখ্যা ৪০০ এবং চিঠির সংখ্যা ছিল ৮০। এরমধ্যে ৪০টি বই এখনো পাওয়া যায়। তার রচনাবলীর মধ্যে অন্যতম তাওক আল হামামা, আল উলফা ওয়া আল উল্লাফ, রিসালাহ ফি ফাদল আল আন্দালুস, কিতাব আল ফাসল ফি এবং মিলাল ওয়া আল আহওয়ালি ওয়া আল নিহাল।

ইবনে হাজম ১০৬৪ সালের ১৫ই আগস্ট (৪৪৬ হিজরির ২৮ শাবান) মৃত্যুবরণ করেন।

(দিরিপোর্ট২৪/ডব্লিউএস/জেএম/নভেম্বর ০৭, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

এই দিনে এর সর্বশেষ খবর

এই দিনে - এর সব খবর